<p style="text-align:justify">২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বসুন্ধরা পেপার মিলস। যা আগের বছরের তুলনায় ২১.৩৮ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন কম্পানির উপদেষ্টা ও বিকল্প পরিচালক এ আর রশীদি।</p> <p style="text-align:justify">আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত কম্পানির ৩১তম বার্ষিক সাধারণ (এজিএম) সভায় তিনি এসব তথ্য জানান।</p> <p style="text-align:justify">সভায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি মেনে উপস্থিত পরিচালকরা প্রতিষ্ঠানের নাম বসুন্ধরা পেপার মিলস পিএলসি হিসেবে অনুমোদন করেন। এ ছাড়া গত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়টিও অনুমোদিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ আর রশীদি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ১০০টির বেশি পেপার মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি পেপার মিল উৎপাদনক্ষম। এই মিলগুলো দেশের কাগজের বাজারে উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। ফলে বিশ্বমানের কাগজ এখন আমাদের দেশেই প্রস্তুত হচ্ছে। সাধারণ লেখার কাগজের চাহিদা কিছুটা কমে গেলেও শিল্প গ্রেড, প্যাকেজিং, টিস্যু পেপারসহ বিশেষ গ্রেডের কাগজের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাগজ ও কাগজজাত পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। এই খাতের তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যেও বসুন্ধরা পেপার মিলস প্রায় ৩০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে বর্তমান টিস্যু পণ্যের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে বসুন্ধরা পেপার মিলের অবদান মোট চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশ। যা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও নিবেদিত কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও গতবছর ব্যাপক ঝুঁকি ও বাধার সম্মুখীন হয়েছে। যার বিরুপ প্রভাব কাগজশিল্পেও পড়েছে। চূড়ান্ত চাহিদার মৌসুমে অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ঋণের সুদের উচ্চ হার, কাঁচামালের অপ্রতুলতা এবং আর্ন্তজাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পায়। এসব কারণসহ দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাবে আমাদের কম্পানির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দক্ষ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে কম্পানির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ক্ষতি কিছুটা রোধ করতে পেরেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় কম্পানির মোট আয় ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রায় সকল খাতেই ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় নিট আয় ৫৭ দশমিক ৯১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৯ দশমিক ১৫ কোটি টাকা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট অর্থনেতিক সংকটের মধ্যেও কম্পানিটি ৬ হাজার ২৮৫ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন পন্য রপ্তানি করেছে। চার হাজার ৫০২ জন নিবেদিত কর্মীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই কম্পানি গত অর্থবছরে আয়কর, আবগারি শুল্ক, সমপূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাবদ ১৭১ কোটি টাকা পরিশোধ করে রাষ্ট্র উন্নয়নের অংশীদার হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এ আর রশীদি বলেন, ‘কাগজ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এজন্য ব্যবহৃত সমস্ত কাচাঁমাল বিভিন্ন দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া কাগজ উৎপাদনে বিদ্যুৎ সরবরাহের অপ্রতুলতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্ন্তজাতিক বাজারে পাল্পের মূল্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে তারতম্য, আর্ন্তজাতিক রুটে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির মতো নানাবিধ কারণে কাগজ ও কাগজজাত সামগ্রীর উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পণ্য ও সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এজন্য বিক্রয় ও বিপণন সংশ্লিষ্ট যানবাহনের সেতু টোলসহ সংশ্লিষ্ট শুল্ক, কর ও অন্যান্য চার্জ হ্রাস করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিদেশি কাগজ আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি রইল। একইসঙ্গে কাগজ শিল্পের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন ও বর্তমান আইন সংস্কার করে শিল্পবান্ধব করার জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ করছি। কম্পানির আর্থিক অর্জনকে লভ্যাংশের আকারে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বণ্টনের বিষয়ে পরিচালন পর্ষদ সবসময়ই সচেতন রয়েছে। তবে গত অর্থবছরের আর্থিক সীমাবদ্ধতা, চলমান ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তার ঝুঁকি মোকাবেলা, শোয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেওয়া ও স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয় বিবেচনায় রেখে পরিচালক পর্ষদ কোনো প্রকার লভ্যাংশ প্রস্তাব না করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা পেপার মিলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান, প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা মির্জা মুজাহিদুল ইসলাম, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোহাম্মাদ কামরুল হাসান, সচিব এম মাজেদুল ইসলাম। সভায় পরিচালকদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইমরুল হাসান, নাজমুল আলম ভূইয়া, নিরপেক্ষ পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।</p>