<p style="text-align:justify">রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫ পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচ বাড়বে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের যখন চিড়েচ্যাপটা অবস্থা, তখনই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসছে নতুন করে এই বাড়তি ভ্যাটের খড়্গ। যদিও এনবিআরের দাবি, এতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না। তবে এই দাবির সঙ্গে একমত নন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।</p> <p style="text-align:justify">জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আরোপের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। অচিরেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই বাড়তি ভ্যাট আরোপ জনগণের জন্য অনেকটা মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ডালার মতো হবে।</p> <p style="text-align:justify">‘মূল্যস্ফীতি বাড়বে না’ সংক্রান্ত এনবিআরের দাবি প্রসঙ্গে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনবিআর তো তার জায়গা থেকে বলবেই যে বাড়বে না। কিন্তু কোনো জিনিসের ওপর ভ্যাট বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে এবং সেটা ভোক্তাকেই পরিশোধ করতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে প্রায় ৭০০ নিত্যপণ্যের একটি বাস্কেট আছে। এই বাস্কেটের ওপর যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো ওঠানামা করলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া এখানে একটা ওয়েটেড এভারেজ নেওয়া হয়। এ জন্য চালের দাম বাড়লে যে হারে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, অন্য পণ্যের দাম বাড়লে ততটা বাড়বে না। এনবিআর যেটা বলছে, সেটা হলো ওই ডাটায় প্রভাব পড়বে না। কিন্তু মানুষ যে পণ্য ভোগ করবে, তার দাম বাড়লে তাদের ওপর প্রভাব পড়বে।’</p> <p style="text-align:justify">আবাসিক হোটেলে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। একই হারে বাড়ানো হয়েছে ব্র্যান্ডের পোশাকের ভ্যাট। এ প্রসঙ্গে কে ক্রাফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ানোর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল রাজস্ব আদায় বাড়ানো। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল সম্ভবত বিপর্যয়কর হবে। আমাদের গ্রাহকদের একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তারা বিত্তশালী নয়।’ ভ্যাট বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের ভ্যাট নেট সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফইএবি) সভাপতি সৈয়দ মো. আজহারুল হক বলেন, তাদের একটি বড় অংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা।</p> <p style="text-align:justify">রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভের সময় আমাদের রেস্তোরাঁ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা এখনো তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যবসা এমনিতেই সংকুচিত।’ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে ধর্মঘট ডাকার কথা বলেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট হার নিয়ে আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এতে ৩০ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক টার্নওভারের ব্যবসাগুলো এখন ভ্যাট-করের আওতায় পড়বে।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে টার্নওভার রয়েছে, এমন ব্যবসার জন্য ভ্যাটের হার বর্তমান হ্রাসকৃত ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হবে। ওষুধের ওপর ভ্যাট বিদ্যমান ২.৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে বাড়তে পারে।</p> <p style="text-align:justify">সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘নীতিনির্ধারকদের মূল্যস্ফীতিকে শুধু পরিসংখ্যানগত পরিসংখ্যান হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি জীবনযাত্রার ব্যয়কে প্রতিনিধিত্ব করে, যা সরাসরি সমাজের পুরো অংশকে প্রভাবিত করে।’</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘সরকারের উচিত উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ না করে তার ব্যয় কমানোর দিকে মনোযোগী হওয়া।’</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভ্যাট বাড়ানোর শর্ত ছিল। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের তাগিদ দিয়েছে দাতা সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় ভ্যাট বাড়িয়েছে এনবিআর।</p>