<p>মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগে গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছাপোষণ করেছিলেন। ওই দুই এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ নিতে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেখান থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। </p> <p>ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কি সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে ভূ-খণ্ড দুটি দখল করার চিন্তা করছেন? উত্তরে ট্রাম্প বলেছেন,  ‘না, এই দুটি ব্যাপারের কোনোটিই আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারছি না।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমি এটা বলতে পারি যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকাগুলো আমাদের প্রয়োজন।’ মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার পরামর্শও দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট।</p> <p>গ্রিনল্যান্ডের দিকে ট্রাম্প এর আগেও নজর দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদের সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে তখনও ডেনমার্ক সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। ওই সময় ডেনমার্কের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাদের রাষ্ট্রের অংশ এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বিক্রির জন্য নয়। </p> <p>এরপর ২০২০ সালে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে গ্রিনল্যান্ড কেনার পরিকল্পনা থেকে সরে আসে মার্কিন প্রশাসন। এখন ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাওয়ায় ফের গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়টি সামনে আনছেন।</p> <p>বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূখণ্ডটি কেনার পেছনে ট্রাম্পের আগ্রহের কারণ দ্বীপটির প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব।</p> <p>বিশ্লেষেকরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। লোহা, আকরিক, সিসা, দস্তা, হীরা, সোনা, ইউরেনিয়াম ও তেলসহ মূল্যবান নানান প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর মজুদ রয়েছে দ্বীপটিতে। তবে বেশিরভাগ এলাকা তুষারাবৃত থাকায় স্থানগুলো কেউ এখনো ব্যবহার করতে পারেনি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দ্বীপটির বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। দ্বীপটির বরফ গলার ফলে সেখানকার ভূমি ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের অপার সম্ভাবনাও উন্মোচিত হচ্ছে। এটি  ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রতি আগ্রহ দেখানোর বড় একটি কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাসভবন ‘মুবারক মঞ্জিল’" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/08/1736315021-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সম্রাট আওরঙ্গজেবের বাসভবন ‘মুবারক মঞ্জিল’</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2025/01/08/1466380" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রিনল্যান্ডের গুরুত্ব রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, চীন ও রাশিয়ার জাহাজগুলোকের গতিবিধিতে নজর রাখার জন্য দ্বীপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>ইতোমধ্যেই ওই এলাকায় মার্কিন একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে ৭০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত ওই সেনাঘাঁটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ এবং সেখানে একটি রাডার স্টেশনও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স স্পেস কমান্ড ও নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডও সামরিক ঘাঁটিটি ব্যবহার করে থাকে। এদিকে ডেনমার্ক ও পানামা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কোনো পরিস্থিতিতেই নিজেদের ভূমির মালিকানা ছাড়বে না।  </p> <p>ট্রাম্প বলেন, ‘পানামা খালে মার্কিন জাহাজের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ রেখে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে, যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গাতে করা হচ্ছে।’ পানামা খাল দিয়ে মার্কিন জাহাজ চলাচলের শুল্ক কমানোর না হলে খালটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।</p> <p>পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো অবশ্য ট্রাম্পের এ দাবি নাকোচ করে দিয়েছেন। গত রবিবার মুলিনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেন।</p> <p>তিনি লিখেন, পানামার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা কোনো বিতর্কের বিষয় নয়। পানামা খাল ও এর আশেপাশের এলাকার মালিক পানামা এবং সেগুলো আগামীতেও দেশটির অধীনেই থাকবে। এদিকে ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফর করেছেন। তবে ট্রাম্প জুনিয়র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ‘ব্যক্তিগত সফরে’ যাচ্ছেন। </p> <p>ট্রাম্প জুনিয়রের সফর ও গ্রিনল্যান্ড বিক্রির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেত্তে ফেডেরিকসেন বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রি হবে না। গ্রিনল্যান্ডের মালিক গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসীরা। কাজেই তারাই গ্রিনল্যান্ডের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।’</p> <p>গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের বিষয়ে এই ধরনের একটি মন্তব্য করাটা  ট্রাম্পের আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার একটি কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। এর ৮০ শতাংশ অঞ্চল তুষারাবৃত এবং মাত্র ৬০ হাজার লোকের বাস এই দ্বীপে।</p> <p>পানামা খালের কারণে দেশটির বিশাল ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। উল্লেখ্য, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রই এই খালটি বেশি ব্যবহার করে থাকে। ৫১ মাইল বা ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ পানামা খাল আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্যে মালামাল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার জাহাজ এ খাল ব্যবহার করে থাকে। আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে একসাথে যুক্ত করেছে এই পানামা খাল।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>