<p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে এক পা হারানো আরাফাত হোসেন (৩২) কাজে ফিরে পরিবারের হাল ধরতে চান। দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার তিনি আনন্দে ভুলে গেছেন পা হারানোর বেদনা। </p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, গত ১৫ জুলাই ঢাকার উত্তরার ৭ নং সেক্টর এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ও আহত ছাত্রদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হন আরাফাত। ছাত্রদের সহায়তায় উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে চিকিৎসা প্রদানে বাধা পেয়ে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে  আরাফাতকে ভর্তি হতে হয়। চিকিৎসকেরা হাজারো চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি তার বাম পা, ২১ জুলাই তার পা কেটে ফেলতে হয়। ব্র্যাক সেন্টারের সহায়তায় লাগানো হয় কৃত্রিম পা।</p> <p style="text-align:justify">আরাফাত হোসেন পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। ২০০২ সাল থেকেই ঢাকায় গাড়ি চালান তিনি। বর্তমানে ভোলার জহির রায়হান নামের একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকার চালাতেন আরাফাত হোসেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দেশটা যেন আর স্বৈরাচারের হাতে না যায়, শহীদ নিলয়ের বাবা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/02/1733133579-7a9e3d07aa49da2273b899c1cc789240.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দেশটা যেন আর স্বৈরাচারের হাতে না যায়, শহীদ নিলয়ের বাবা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/02/1453024" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">আরাফাতের বাড়ি পাবনার সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। দরিদ্র কৃষক সিরাজুল ইসলামের ৫ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সে। বড় দুই ভাই সংসার থেকে আলাদা, একজন রাজমিস্ত্রি অন্যজন সাটার মিস্ত্রি। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন পড়াশোনা শেষ করে বেকার, ছোট ভাই একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। বাবা-মা, ছোট দুই ভাই, স্ত্রী-সন্তানসহ ৭ সদস্যের পরিবারের একমাত্র আয় বাবা সিরাজুল ইসলামের কৃষিকাজ।</p> <p style="text-align:justify">আরাফাতের ৭ বছরের ছেলে তাওহিদ প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আরাফাতের স্বপ্ন ছিল ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করে ঢাকায় একটি ভালো চাকরির ব্যবস্থা করবে। সেই স্বপ্ন এখন ধুলায় মাটিতে মিশে গেছে।</p> <p style="text-align:justify">সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আরাফাত কালের কণ্ঠকে বলেন, বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানদের কথা চিন্তা না করে গুলিবিদ্ধ ও আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যাই। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেরই বাম পায়ের হাঁটুতে গুলি লাগে। পরে ছাত্ররা আমাকে উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালেও বাধা পাই, পরে সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। গত ২৯ আগস্ট ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার থেকে একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। ১১ অক্টোবর স্ত্রী সন্তান নিয়ে পাবনার গ্রামের বাড়ি মনোহরপুরে চলে আসি। </p> <p style="text-align:justify">আরাফাত জানান, হাসপাতালের বিছানায় স্বৈরাচার সরকার পতনের খবর শুনে মিষ্টি খেয়েছি, পা হারানোর ব্যথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাই। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে পা হারিয়েছি, তাতে কোনো দুঃখ নাই। স্বৈরাচারের বিদায় হয়েছে, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা অন্তত আমার চিকিৎসার দায়িত্ব ও একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে তাহলে পরিবার নিয়ে কোনো রকমে চলতে পারতাম। </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো জানান, বাবার কৃষি কাজের সামান্য আয় দিয়ে চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়া চলছে, বাইরে থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাই নাই। আমি কর্ম করে সংসার চালাতে চাই, অটো গাড়ি, মুদি দোকান যাই হোক কেউ যদি ব্যবস্থা করতো তাহলে বেঁচে যেতাম।</p> <p style="text-align:justify">আরাফাতের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি ছাওয়ালটার চাকরি দিত, তাহলে ছেলেটা চলবের পরতো, তাহলে মরেও শান্তি পাতাম।</p> <p style="text-align:justify">আরাফাতের মা মোছা. কোমেলা বেগম বলেন, আমার ছাওয়ালের একটা কর্ম চাই। দোকান হোক আর একটা অটো গাড়ি হোক। তাহলে সে আমাদের নিয়ে চলবের পারতো।</p> <p style="text-align:justify">আরাফাতের স্ত্রী তানজিলা খাতুন বলেন, আমার স্বামী অচল হয়ে গেছে। সে আর ভারি কাজ করতে পারবে না। আর্থিক সহযোগিতার ওপর যদি চলি তাহলে কতদিন চলব? দান তো ভিক্ষা, সেটাতো ক্ষণিকের জন্য। কেউ যদি আমাকে অথবা আমার স্বামীকে একটা চাকরি দিতো, তাহলে ভালো হতো।</p> <p style="text-align:justify">পাবনার সমন্বয়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ জানান, আমরা আরাফাতের জন্য সামান্য সহায়তা করতে পেরেছি, যা যথেষ্ট নয়। আরো বেশি সহায়তা নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা করছি।</p>