<p style="text-align:justify">তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, হত্যা, গুম, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে একটি অরাজকতা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ওসমান পরিবার। তাদের কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে লাশ বানিয়ে শীতলক্ষ্যায় ফেলতো। এমন অসংখ্য উদাহরণ তারা নারায়ণগঞ্জে তৈরি করেছে।</p> <p style="text-align:justify">বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪২ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন শহরের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে। র‌্যাবের হাতে ৬ জন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমানসহ সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগপত্র দায়ের করে বিচার শেষ করবেন। কিন্তু তাদের কাজ শুরু হলেও এখনো আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, আজ তারা (ওসমান পরিবার) পালিয়ে গেলেও নতুন চক্র আবার নারায়ণগঞ্জে গডফাদার হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফের দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন করছে নিয়োগ বাণিজ্য। এসব তদারকি করার কেউ নেই। প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিষ্ক্রিয়।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে ঘাতক ওসমান পরিবার পালিয়ে গেল কীভাবে, কাদের সহযোগিতায়? গত ১৫ বছর হত্যা লুটপাটের সাথে জড়িত থাকা ওসমানদের সহযোগী কেউই গ্রেপ্তার হয়নি, আইনের আওতায় আসেনি। শেখ হাসিনা দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখেছে তার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। তাহলে চব্বিশের এতো মৃত্যু, আত্মদান এর ফলাফল কী? এ অভ্যুত্থানকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।</p> <p style="text-align:justify">নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।</p> <p style="text-align:justify">প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।</p>