<p>গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২৪৫ বছরের প্রাচীনকাল থেকে মার্বেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছরের মতো মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পৌষসংক্রান্তিতে এ বছরও মার্বেল খেলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শত শত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ দলে দলে এই খেলায় অংশ নেয়। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি জমি, পুকুরপাড়, বাগানসহ সর্বত্রই মার্বেল খেলার আসর বসেছে। <br /> মেলার মূল আকর্ষণ মার্বেল খেলা। রামানন্দের আঁক গ্রাম যেন এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। সবাই আনন্দে বেতে উঠেছে। তরুণ-তরুণীরা এই দিনটি জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে। রামানন্দের আঁক গ্রামের বিশ্বাসবাড়ীর পাশের জমিতে বসেছে বাঁশ-বেত শিল্পসামগ্রী, মণিহারি, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।</p> <p>মেলা কমিটির সভাপতি নির্মল মণ্ডল বলেন, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৪৫ বছর আগের সোনাই চাঁদ আউলিয়ার একটি নিমগাছের গোড়ায় পৌষসংক্রান্তিতে শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন। সেই দিন থেকে প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে এখানে মার্বেল খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২৪৫ বছর ধরে গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধরে রাখতে এ বছরও পৌষসংক্রান্তিতে মার্বেল খেলা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, এই মেলায় আগৈলঝাড়া উপজেলা পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী-পুরুষ দলে দলে মার্বেল খেলছে। অনেকেই মার্বেল খেলার জন্য এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। এ ছাড়া সোয়া মণ চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়া মণ আখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।</p> <p>মার্বেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় মনিমোহন বালা (৭৬) ও রিপন বিশ্বাস (৪৫) বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা করছি। এ দিনটিকে ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে আনন্দ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানায়।’ </p> <p>নবাবগঞ্জ থেকে মার্বেল খেলার জন্য এসেছেন সুকদেব বিশ্বাস, বাগধা গ্রাম থেকে সুচিত্রা বিশ্বাস, ঢাকা থেকে শিখা বিশ্বাস পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্বেল খেলা ও মেলায় এসেছে। তারা বলেন, ‘মেলায় এসে মার্বেল খেলতে পেরে ভালো লাগছে। দিনটা খুব এনজয় করছি।’</p> <p>মার্বেল বিক্রেতা আগৈলঝাড়ার ত্রিমুখী গ্রামের প্রদীপ বল্লভ বলেন, ‘প্রতিবছর মার্বেল বিক্রির জন্য এই দিনের অপেক্ষায় থাকি। বেচাকেনা অন্য বছরের চেয়ে ভালো হচ্ছে। এক শত পিচ মার্বেল ২০ টাকায় বিক্রি করছি।’ </p> <p>বাকাল গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মিরাজ ফকির ও পশ্চিম রাজিহার গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ভূমিকা তালুকদার বলে, ‘সারা বছর টাকা জমিয়েছি মার্বেল খেলার জন্য। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, কিশোরী, যুবক-যুবতীরা মেলার প্রধান আকর্ষণ মার্বেল খেলায় অংশগ্রহণ করে।’</p> <p>আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত সুশংকর মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মার্বেল মেলায় আগত সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য এসেছি। মেলায় মার্বেল খেলার জন্য অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে। তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’</p>