ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু পনেরো বছর বয়সী রাকিবের জীবনে ঈদের আনন্দ যেন এক অধরা স্বপ্ন। বাবা-মাকে হারানোর পর ঠাকুরগাঁও জেলার শিশু বালক পরিবারে ঠাঁই হয় তার। এখানেই কাটে তার শৈশব ও কৈশোর।
ঈদের নতুন পোশাক, আত্মীয়ের বাসায় মেহমান হয়ে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়—এসব তার জীবনে নেই। ঈদের দিনটিও আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই কাটে।
রাকিবের মতো এই পরিবারে রয়েছে আরো ৭৫ জন এতিম শিশু। তাদের বেশির ভাগই বাবা-মাকে হারিয়েছে, কেউ হারিয়েছে শেষ আশ্রয়টুকুও।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের খুশি কেমন হয়, তা তাদের অজানা। একাকিত্ব যেন তাদের নিত্যসঙ্গী।
আরো পড়ুন
ক্ষমতায় গেলে ঠাকুরগাঁওকে চাঁদাবাজমুক্ত করব : দেলাওয়ার হোসেন
১২ বছর বয়সী নাসিরও একই গল্প বলে। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারানোর পর এতিমখানাই তার ঠিকানা।
ঈদের সকালে অন্যদের সঙ্গে নামাজে যায়, কিন্তু মন খারাপ হয়ে থাকে। নতুন জামা পায়, কিন্তু কার জন্য সাজবে? কেউ নেই আদর করে বলবে, ‘তুমি কত সুন্দর লাগছো!’ মেহমান আসবে না, মিষ্টি মুখ করাবে না। শুধু টিভির পর্দায় অন্যদের আনন্দ দেখে তার দিন কাটে।
১৩ বছর বয়সী মীমের ঈদ তো আরো নিঃসঙ্গ। বাবা-মায়ের ভালোবাসা কেমন, তা সে জানে না।
এতিমখানায় বেড়ে ওঠা। ঈদের দিন তার কাছে সাধারণ দিনের মতোই। খাওয়া, ঘুম, টিভি দেখা আর একাকিত্বে ডুবে থাকা। অন্য শিশুদের হাসিমুখ দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে, ‘আমার কি কেউ নেই?’
আরো পড়ুন
মায়ানমারে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় শোক ঘোষণা
১০ বছর বয়সী সাজিদ বাবা-মাকে হারিয়েছে ছয় বছর বয়সে। এরপর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয় তার। ‘ছোটবেলায় মা নতুন জামা কিনে দিত। এখন তো কেউ নেই। ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাই। রাতে যখন সবাই ঘুমায়, মায়ের কথা মনে পড়ে,’ বলতে গিয়ে চোখের কোণে জল জমে তার।
ঠাকুরগাঁও শিশু বালক পরিবারের পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি শিশুর জীবনে এক গভীর শূন্যতা আছে। ঈদের দিনে আমরা সাধ্যমতো তাদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি। নতুন পোশাক, ভালো খাবার দিই, কিন্তু পরিবারের ভালোবাসার অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে তাদের ঈদ কিছুটা আনন্দময় হতে পারে।