নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী সাজমুল হোসাইনের বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর মা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে গৃহধূর স্বামী, দেবর, ননদ ও শ্বশুর-শাশুরিস ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম অভিযোগ প্রাপ্তির বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাহাম গ্রামে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত সাজমুল হোসাইন (৩৫) মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম গ্রামের নুরনবীর ছেলে। সাজমুল ও ভুক্তভোগী গৃহবধূর তিন মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
আরো পড়ুন
ডিসিদের প্রতি ১২ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে পারিবারিকভাবে ভুক্তভোগী নারী ও সাজমুলের বিয়ে হয়। সাজমুল দীর্ঘ বছর ধরে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। বিয়ের পর থেকে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে চাপ দিতে শুরু করেন। দরিদ্র বাবা-মায়ের কাছ থেকে এরমধ্যে বেশকিছু টাকা এনে দিয়েও স্বামীর মুখ বন্ধ করতে পারেননি ওই গৃহবধূ।
এক পর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন তিনি। চাকরির সব টাকা সাজমুলের হাতে তুলে দিলেও নিয়মিত যৌতুকের নির্যাতন চলতেন তিনি।
এদিকে সাজমুলের অন্য মেয়ের সঙ্গে চলা পরকীয়া সম্পর্কে বাধা দিলে ভুক্তভোগীর ওপর নির্যাতন বেড়ে চলে। সেই সঙ্গে চাপ বাড়ে যৌতুকের। গত মঙ্গলবার যৌতুকের জন্য চাপ দিলে এতে অস্বীকৃতি জানান ওই গৃহবধূ।
তখনই তাকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন সাজমুল। মারধরে অংশ নেন দেবর, ননদ, শ্বশুর, শাশুড়িসহ পরিবারের সবাই। এক পর্যায়ে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
আরো পড়ুন
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল এসআই কবীরের, ফিরলেন লাশ হয়ে
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘মা-বাবার কাছ থেকে টাকা এনে তাকে দিয়েছি। আমি চাকরি করে যা আয় করেছি সব সে (সাজমুল) নিয়ে গেছে। তবুও যৌতুকের জন্য মারধর করত। বাচ্চার বয়স তিন মাস, তাই বাচ্চাটা রেখে চাকরিতে যেতে সমস্যা হয়। বাচ্চার জন্য ৫-৬ মাস পরে কাজে যোগ দেবো বলেছি, তাও মারধর শুরু করে। গত মঙ্গলবার পরিবারের সবাই মিলে পিটিয়ে নাক-মুখসহ পুরো শরীর রক্ত জমাট করে ফেলেছে।’
তবে অভিযুক্ত সাজমুল সাজমুল হোসাইন তার স্ত্রীকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘সে নিজেই নিজের নাকে-মুখে আঘাত করে এমন আহত করেছে। আমি তাকে কোনো আঘাত করিনি। তার কাছে যৌতুকও চাইনি।’
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ তদন্ত করার জন্য একজন কর্মকর্তাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’