জালিয়ার হাওরের তিন একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়নের চারিতলা গ্রামের কৃষকরা। বাজার মূল্য কম থাকায় এবং ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চরম হতাশায় আছেন তারা । এ বছর উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা।
গত বছর লাভ হওয়ায় স্থানীয় সোনাতন মিয়া (৫৫) নামের এক কৃষক তিন লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন।
কিন্তু এবার ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তার মতো অন্তত অর্ধশতাধিক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন।
আরো পড়ুন
পাগলা মসজিদে দানের টাকায় হবে ‘মেগা প্রকল্প’
কৃষকদের অভিযোগ, লোকসানে পড়ার প্রধান কারণ হল হাওরাঞ্চলের অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা। তারা বলেন, হাওরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলেই কেবল কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হবে এবং বদলে যাবে হাওরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলায় এ বছর শীত মৌসুমে ৭৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি জাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে। তবে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, মিষ্টি কুমড়ার চাষ আরো বেশি পরিমাণ জমিতে হয়েছে।
আরো পড়ুন
ইনকোর্স ও ভাইভা নিয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
স্থানীয় হারুলিয়া গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষি মাসুদ আলী বলেন, 'এ বছর আমি ১৫ কাঠা (দেড় একর) জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ছিলাম।
সময়, সার ও ঔষধ সবই দিয়েছি। তবুও গতবারের তুলনায় ফলন কম হয়েছে। দামও কম। গত বছর এই মিষ্টি কুমড়া ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার তা বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজিতে। তাও আবার পাইকার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার আমরা আমাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া নিয়ে খুব বেকায়দায় আছি।'
স্থানীয় চারিতলা গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, 'আমি জালিয়ার হাওরের সত্তর শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাথায় করে এবং বাইসাইকেলে বা হ্যান্ডট্রলির মাধ্যমে কুমড়া পরিবহন করে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে রাখতে হচ্ছে। কৃষি পণ্য পরিবহনে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয় এবং ন্যায্য দাম পাচ্ছি না।'
আরো পড়ুন
জাবিতে ফ্রি ‘হেপাটাইটিস বি’ ভ্যাকসিনেশনের আয়োজন ছাত্রদলের
স্থানীয় কৃষকদের দাবি, হাওর এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতকরণের পাশাপাশি এ বছর উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়ার বাজারজাতকরণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল মিল্কী বলেন, 'আমাদের হাওরাঞ্চল শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত। তাই এখানকার কৃষকদের স্বার্থে হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি। কারণ কৃষক বাঁচলেই আমরা বাঁচব।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন দিলদার বলেন, 'মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দিন দিনই বাড়ছে। তবে এ বছর পরাগায়নের সময় মৌমাছি কম থাকায় মিষ্টি কুমড়ার ফলন কিছুটা হয়েছে। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন এবং তারা যাতে লোকসানে না পড়েন, সেই জন্য আমরা পাইকারদের সঙ্গে কৃষকদের একটা সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেওয়ার চেষ্টা করব।'