<article> <p style="text-align: justify;">আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। আনন্দে মেতে উঠবে সারা দেশের মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে শিশুদের। নতুন পোশাকের সঙ্গে ‘সালামি’ হিসেবে পাওয়া চকচকে টাকার নতুন নোট তাদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। অনেকেই তাই চেষ্টা করেন ঈদের আগে নানাভাবে নতুন নোট জোগাড়ের। সাধারণত ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">তবে ব্যাংকের সীমিতসংখ্যক শাখায় নতুন নোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় সেখান থেকে নোট সংগ্রহ করতে পারেন কম লোকই। এ উদ্দেশ্যে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়ান অনেকে। বেশির ভাগ মানুষকেই তাই দ্বারস্থ হতে হয় চেনা-পরিচিতদের সঙ্গে বিনিময় এবং ফুটপাতের ‘টাকার দোকানের’। টাকার দোকানের ব্যাপারটি সত্যিই অভিনব। টাকা দিয়ে সেখানে কেনাবেচা হয় টাকাই। সারা বছরই অবশ্য কমিশনের বিনিময়ে ছেঁড়া নোট বদলে দেওয়া বা নতুন নোট বেচার কারবার চলে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তবে ঈদের সময় তা ওঠে তুঙ্গে। গুলিস্তান এলাকা হচ্ছে রাজধানীতে নতুন নোট বেচাকেনার কেন্দ্র। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেট দিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে ৩০ থেকে ৩৫ জন ‘টাকা ব্যবসায়ীর’। ছোট ছোট টুল নিয়ে বসে আছেন তাঁরা। সামনে যেতেই শুরু হবে ‘কয় বান্ডেল লাগবে?’ ‘আসেন, নিয়ে যান নতুন টাকা’—এসব হাঁকডাক। তাঁরা মূলত ছেঁড়া-ফাটা টাকা কিনে নেন। ছেঁড়া টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিলে নোটের অবস্থার ওপর নির্ভর করে সচল টাকা দেওয়া হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কয়েকজন ক্রেতারও দেখা মিলল সেখানে। বেসরকারি চাকরিজীবী সাদাত উল ইসলাম তাঁদেরই একজন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে। সাদাত জানালেন, অফিসের কাজের ফাঁকে নতুন টাকা কিনতে এসেছেন। বাড়ির বাচ্চাদের ঈদের সালামি দেবেন। ‘বাড়ির বাচ্চারা চকচকে নতুন টাকার আশায় বসে আছে। এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। নতুন টাকা পেয়ে ওদের চোখেমুখে যে আনন্দ দেখা যায়, তাতে অনেক তৃপ্তি পাই,’ বললেন সাদাত উল ইসলাম।</p> <p style="text-align: justify;"><b>বান্ডেলে ১২০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি</b></p> <p style="text-align: justify;">গুলিস্তানের নতুন টাকার বাজারে দুই, পাঁচ, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। নোটের মান অনুযায়ী ১০০ পিসের একটি বান্ডেলে ১২০ থেকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। সরকারি আইনে অবশ্য এভাবে নতুন টাকা বিক্রি করার নিয়ম নেই। গুলিস্তানে দুই টাকার ১০০টি নোটের বান্ডেলের দাম ৩২০ টাকা, পাঁচ টাকার বান্ডেলের দাম ৬৫০, ১০ টাকার বান্ডেলের দাম এক হাজার ২৭০, ২০ টাকার বান্ডেলের দাম দুই হাজার ২৪০, ৫০ টাকার বান্ডেলের দাম পাঁচ হাজার ২২০, ১০০ টাকার বান্ডেলের দাম ১০ হাজার ২০০ এবং ২০০ টাকার নোটের বান্ডেলের দাম ২০ হাজার ৩০০ টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">নতুন টাকা বিক্রি করা একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, তাঁরাও নতুন টাকা কিনে আনেন। যাঁদের কাছ থেকে কিনে আনেন তাঁরা গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বান্ডেলে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে কম সংগ্রহ করতে পারেন। তৃতীয় পক্ষ থেকে টাকা সংগ্রহ করার ফলে দামও বেশি দিতে হয়েছে। নতুন টাকার চাহিদা আছে অনেক, কিন্তু সেই অনুপাতে তাঁরা সরবরাহ পাননি।</p> <p style="text-align: justify;"><b>ব্যাংকে সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ</b></p> <p style="text-align: justify;">নির্ধারিত ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করলে বাড়তি দাম দিতে হয় না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গ্রাহকরা বলছেন, ব্যাংকের মাধ্যমে আরো বেশি নতুন টাকার নোট সরবরাহ করা দরকার। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা সরবরাহ করছে। সাধারণ মানুষ পুরানো নোটের বিনিময়ে নির্ধারিত ব্যাংকের শাখা থেকে নতুন নোট নিতে পারবে। কিন্তু দেখা গেছে, কাউন্টার থেকে বিতরণ শুরুর পর মাত্র এক-দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় নতুন নোট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বছর ৮০টি শাখা থেকে নতুন নোট বিতরণ করা হচ্ছে। ওই সব শাখাকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জনপ্রতি ১৮ হাজার ৫০০ টাকা করে ৯০ জনকে নতুন নোট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাড়তি কোনো টাকা দিতে হবে না। গত বছর বিভিন্ন ব্যাংকের ৪০টি শাখা থেকে নতুন নোট বিতরণ করা হয়েছিল। এ বছর শাখার সংখ্যা দ্বিগুণ করার পর স্পষ্ট চাহিদার তুলনায় তা নিতান্ত কম।</p> <p style="text-align: justify;">সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার অপারেশনাল ম্যানেজার মো. হুমায়ূন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন নোটের ব্যাপক চাহিদা। তার তুলনায় ব্যাংক পাচ্ছে অনেক কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নতুন নোটের সরবরাহ বাড়ানো। সকাল সাড়ে ৯টায় স্লিপ নিয়ে নতুন নোট সরবরাহ শুরু করা হয়। কিন্তু দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।’</p> <p style="text-align: justify;"> রাজধানীর আরো কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা এমনটাই জানান।</p> <p style="text-align: justify;">জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নতুন টাকার প্রত্যাশীদের নোট দেওয়া হয়, যাতে কেউ একাধিকবার টাকা সংগ্রহ না করতে পারেন। একটি ব্যাংকে দুপুরে পৌনে ২টার দিকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী নির্ঝর আহমেদ। টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বললেন, ‘আমার আসতে দেরি হয়ে গেছে। জানলাম, নতুন টাকা নিতে হলে খুব সকালে এসে লাইনে দাঁড়াতে হবে। তবে নতুন নোট যদি বেশি ছাড়া হতো তাহলে সহজেই পাওয়া যেত।’</p> </article>