<p style="text-align:justify">কৃষিবিদ পেশাজীবী ড. আব্দুর রাজ্জাক কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কৃষি উন্নয়নের নানা পরিকল্পনার কথা শোনাতেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ঠিক তার উল্টো। সজ্জন ব্যক্তির মুখোশের আড়ালে তার দুর্নীতির কদর্যরূপ অনেকেই দেখছেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত কৃষিমন্ত্রী ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="বখরা পেতেন বাপ-বেটা" height="240" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/07/1733591245-8f05b7d8d1ad53a03e20606df31d84f6.jpg" style="float:left" width="400" />কৃষিতে বেশি লুটপাট হয়েছে রাজ্জাক মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালেই। অনুগতদের দিয়ে সব প্রকল্পেই ভাগ বসাতেন। তার ছেলেও রেজুয়ান শাহরিয়াম সুমিত কৃষি সেক্টরের ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারায় জড়িত ছিলেন। ছেলে ছাড়াও তার ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদুর রহমান মাসুদও কৃষির অন্য একটি অংশ দেখাশোনা করত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করল বিদ্রোহীরা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/08/1733632151-1f83561ac1b24dd9686e2b6e158b0152.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করল বিদ্রোহীরা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/12/08/1455128" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের এপিএ পুলের বিশেষজ্ঞ সদস্য কৃষিবিদ হামিদুর রহমানও ছিল রাজ্জাকের দুর্নীতির সঙ্গী। ছেলে সুমিতের ব্যাবসায়িক অংশীদার ছিল রণজিৎ। টার্টেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল রণজিতের। আব্দুর রাজ্জাকের সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ঠিকাদারি পেত টার্টেল।</p> <p style="text-align:justify">নির্ধারিত মূল্যের ১০ গুণ ব্যয় দেখিয়ে টাকা তুলে নিত। ‘মন্ত্রীর ছেলের ব্যবসা’ এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করারও সুযোগ পেত না। </p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদ আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ে নিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে সেই কাজ না করিয়ে বিল উত্তোলনের কাজ করত মাকসুদ। বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নাইকির সঙ্গে ১২ বছরের চুক্তি, বছরে ১২০০ কোটি টাকা পাবে ব্রাজিল" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/08/1733629258-ecb6567f772a548b2474ffe9e2d2b826.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নাইকির সঙ্গে ১২ বছরের চুক্তি, বছরে ১২০০ কোটি টাকা পাবে ব্রাজিল</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2024/12/08/1455126" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">আব্দুর রাজ্জাকের সময়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ৩২টি কর্মসূচি ও ৬৯টি প্রকল্প চালু ছিল। তিনি নিয়েছেন অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প।</p> <p style="text-align:justify">যান্ত্রিকীকরণের তিন ধাপে তিনটি প্রকল্প নেয় সরকার। প্রথম দুটি প্রকল্পে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হলেও যান্ত্রিকীকরণের শেষ ধাপের প্রকল্পটি ছিল তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সেই প্রকল্পটির বেশির ভাগ অর্থাৎ ৭০০ কোটি টাকাই ড. রাজ্জাক মন্ত্রী থাকাকালে খরচ হয়েছে। অথচ কৃষকরা যন্ত্রই পাননি।</p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা হলে কৃষিমন্ত্রী নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। প্রকল্প পরিচালকদের রক্ষা করার জন্য নানা কৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এই লোপাটের টাকার বেশির ভাগই নিয়েছেন ড. রাজ্জাক। তিনি বিভিন্ন মেশিনারিজ কম্পানিগুলোর কাছ থেকেও কমিশন নিয়েছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার-আল আসাদ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/08/1733630656-f62316a7eadb1dd98ec60a6aee624db1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছেন বাশার-আল আসাদ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/12/08/1455127" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৫ সালে শুরু হয়ে আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশে অনিয়ম হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। প্রদর্শনী খামারের নামে লুটপাট হয়েছে। বিদেশ থেকে চারা আমদানি, কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রচারের কাজ—সব কিছুতেই লুটপাট। এই লুটপাটের সুযোগ দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। বিভিন্ন সময় আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অভিযোগ দিলেও লাভ হয়নি, বরং অভিযোগকারীদের তিনি শাসিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কিছুতেই কমিশন নিতেন সাবেক মন্ত্রী।</p> <p style="text-align:justify">১২৩ কোটি টাকার বৃহত্তম ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় ড. রাজ্জাকের অনুগত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা জিয়াউর রহমানকে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটির কোনো সুফল পাননি কৃষকরা। মন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা এই জিয়াউর ছিল বেপরোয়া।</p> <p style="text-align:justify">৪৫৫ কোটি টাকার অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্প নেওয়া হলেও স্থায়ী কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ছিল। ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প, দিনাজপুর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সেচ এলাকা উন্নয়নসহ অন্তত ৩০টি প্রকল্প থেকে অনুগতদের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক।  </p> <p style="text-align:justify">‘কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ’ নামক প্রকল্প নিয়েছিল কৃষি তথ্য সার্ভিস। এই প্রকল্পের প্রথম পরিচালক সাইফুল ইসলাম মালপত্র বুঝে না নিয়েই ঠিকাদারকে টাকা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমন অভিযোগ প্রমাণের পর এই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে ড. রাজ্জাকের নির্দেশে তাপস কুমার নামের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="গ্রেনেড হামলার পর এবার নিষ্পত্তির পথে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/08/1733628834-a9c7edea2817485d7f5a50c124f5c291.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>গ্রেনেড হামলার পর এবার নিষ্পত্তির পথে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2024/12/08/1455124" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">১০৯ কোটি টাকার প্রকল্পের অধীন ২৯ কোটি টাকার প্রেস মেশিন ড. রাজ্জাকের মৌখিক নির্দেশে এক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। এ কারণে এই প্রেস মেশিন কেনার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্র শিডিউল, শিডিউল বিক্রির ক্ষেত্রেও কারচুপি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। গতকাল এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাপস কুমারের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।</p> <p style="text-align:justify">ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস প্রকল্পের পরিচালক ও ঠিকাদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। মন্ত্রী বিষয়টি জানলেও ব্যবস্থা নেননি। তদন্তে মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ফেঁসে যেতে পারেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে ডিএই। তবে তালিকায় তালহা জুবায়ের মাসরুর নামের এক কর্মকর্তার জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশেই এমনটি হয়েছিল বলে সূত্র জানিয়েছে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমেই নয়, সার ক্রয়ের বড় কমিশন নিতেন তিনি। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দেড় হাজার কর্মকর্তা ফিরে পাচ্ছেন সম্মান, প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহেই" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/08/1733626500-311122c652dda67c06fd577b5c19b57e.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দেড় হাজার কর্মকর্তা ফিরে পাচ্ছেন সম্মান, প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহেই</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/12/08/1455120" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে ছিল তার বিরোধ। রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নাছিম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষির প্রতিষ্ঠানগুলোতে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই সুযোগটিও কাজে লাগিয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। গ্রেপ্তার হয়ে তিনি বর্তমানে জেলহাজতে। তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।</p>