<p style="text-align:justify">অমর একুশে বইমেলা বিশেষ করে প্রকাশক-লেখকদের কাছে স্বপ্নের মতো। পাঠকের কাছে কতো বেশি আকর্ষণীয় করা যায় তা নিয়ে প্রকাশক-লেখক, বাংলা একাডেমি এবং প্রকাশক সমিতির প্রচেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। আলোচনার এই সীমিত পরিসরে এমন একটি বইমেলা কেমন চাই, তা নিয়ে কথা বলা খুব দুষ্কর একটি ব্যাপার। তবু খুব সংক্ষেপে চেষ্টা করব বলার।</p> <p style="text-align:justify">অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের  প্রাণের উৎসব। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী এই মেলা শুধুমাত্র বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি বাঙালির চেতনার একটি অনন্য উৎসব। তবে আধুনিক যুগের চাহিদা ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বইমেলার কাঠামো ও কার্যক্রমে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।</p> <p style="text-align:justify">বর্তমান যুগ প্রযুক্তিনির্ভর। তাই অমর একুশে বইমেলায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। যেমন, বইমেলার জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে বইয়ের তালিকা, লেখক পরিচিতি, স্টল নম্বর এবং বইয়ের দাম জানা যাবে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠকদের একটি ভার্চুয়াল বইমেলা ঘুরিয়ে দেখানো সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">ই-বুক এবং অডিও বুকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মেলায় বিশেষভাবে ই-বুক এবং অডিও বুক প্রকাশকদের জন্য আলাদা স্থান রাখা উচিত। পাঠকদের জন্য ই-বুক রিডার ব্যবহারের কর্মশালা বা সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে, যা আধুনিক পাঠকদের আকর্ষণ করবে।</p> <p style="text-align:justify">বর্তমান সময়ে পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেলায় পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বইমেলায় আলাদা কর্নার রাখা যেতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">অমর একুশে বইমেলায় শুধু বই প্রকাশ নয়, সাহিত্যিকদের আলোচনা, কর্মশালা, কবিতা পাঠ, নাটক, সংগীত ও চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীর মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত। শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা কর্মশালা এবং বইপ্রেমী তরুণদের জন্য সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা মেলাকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলবে।</p> <p style="text-align:justify">বইমেলায় ভিড় সামাল দিতে এবং সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে উন্নত পরিকাঠামো প্রয়োজন। স্টলগুলোর মধ্যবর্তী জায়গা প্রসারিত করা, খাবারের নির্ধারিত স্থান রাখা এবং পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা করা দরকার। এ ছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিযুক্ত করে সবার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত।</p> <p style="text-align:justify">অনেক পাঠক বইয়ের উচ্চমূল্যের কারণে বই কিনতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই বইয়ের দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা এবং ২৫ শতাংশের কমিশনের পরেও বিশেষ ছাড় বা অফার দেওয়া উচিত। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বই কেনায় আলাদা ছাড় বা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">সবাই বইমেলায় সরাসরি উপস্থিত হতে পারে না। তাই অনলাইনে বই কেনাবেচার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। </p> <p style="text-align:justify">বইমেলার প্রচারণায় আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম, টেলিভিশন, পত্রিকা এবং রেডিওর মাধ্যমে বইমেলার তথ্য সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি মেলা শুরুর আগে রোড শো বা ফ্ল্যাশ মব আয়োজন করে মানুষের আগ্রহ বাড়ানো যেতে পারে। ফ্রেরুয়ারি মাসব্যাপীে মেট্রো রেল মেলায় আসতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য ফ্রি করে দেওয়া উচিত। এর বিনিময়ে মেট্রো রেলে স্বল্পমূল্যে বইয়ের বা লেখকের প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। </p> <p style="text-align:justify">বইমেলা  শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। নতুন লেখক, গবেষক এবং প্রকাশকদের জন্য আলাদা কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বইমেলা শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা যেতে পারে। পাঠকের জন্য ‘বইপাঠ প্রতিযোগিতা’ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় পুরস্কারের আয়োজন থাকতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক আয়োজন। এর আবেদন অম্লান রাখার জন্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর কাঠামো ও কার্যক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়া আনা অপরিহার্য। প্রযুক্তি, পরিবেশ, আন্তর্জাতিকীকরণ এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বইমেলাকে আরো আকর্ষণীয়, সমৃদ্ধ এবং সময়োপযোগী করে তোলার জন্য বাংলা একাডেমি এবং প্রকাশক সমিতির রিসার্চ সেল থাকা উচিত।</p> <p style="text-align:justify"><strong>লেখক :</strong> প্রকাশক, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.</p>