<p style="text-align:justify">দ্বীপজেলা ভোলায় বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে কিশোর-কিশোরীদের কৈশরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম বাপ্তা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়াতনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p style="text-align:justify">বসুন্ধরা শুভসংঘের ভোলা জেলা সভাপতি মো. শাফায়াত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী তাসমিন ফারহানা শান্তা।</p> <p style="text-align:justify">বসুন্ধরা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন পশ্চিম বাপ্তা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সামলা বেগম ও অমিতাব রাজন, বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসান সাব্বির, দপ্তর সম্পাদক সুমাইয়া আক্তার।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বাপ্তা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক তপন চন্দ্র দাস, মোজাম্মেল হোসেন জমাদ্দার, মো. আলমগীর হোসেন, স্বপন কুমার, মো. শাহাবুদ্দিন, মো. মুহসীন, মো. ইউছুফ, মো. ইব্রাহীম, মো. জসিম উদ্দিন, বসুন্ধরা শুভসংঘের কর্ম ও পরিকল্পনা সম্পাদক ইসরাত জাহান নুহা, কার্যনির্বাহী সদস্য সাবিকুন নাহার প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ কিশোর-কিশোরী। এই কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা, জীবন দক্ষতা ও স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করছে আমদের দেশের ভবিষ্যৎ। কৈশোরের শিক্ষা, জ্ঞান ও অভ্যাস তার পরবর্তী জীবনের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। কাজেই বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে কিশোর-কিশোরীদের যেমন সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন, তেমনিভাবে বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের সবাইকে তাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য এখনই এগিয়ে আসা জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী যাদের বয়স ১০-১৯ বছর তাদেরকে বলা হয় কিশোর-কিশোরী। কৈশোর প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই বয়সে কিশোর-কিশোরীদের শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করে। সবার ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো একই সময়ে একই রকম নাও হতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই পরিবর্তনের সময়ে কিশোর-কিশোরীদের ঝুঁকি থাকে।</p> <p style="text-align:justify">ঝুঁকির কারণগুলো হলো কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য না জানার কারণে বা ভুল তথ্যের কারণে অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত হয়। অভিভাবক ও শিক্ষকগণ প্রজনন স্বাস্থ্য ও বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের সাথে আলোচনা করতে সংকোচ বোধ করেন বিধায় তারা এ দুটি বিষয়ে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য উৎস হতে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না। রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার খুবই অপ্রতুল। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে অবিবাহিতদের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ সীমিত। তা ছাড়া কিশোর-কিশোরীরা এখানে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না বিধায় নিজেদের সমস্যা গোপন রাখে। গর্ভসঞ্চার ও যৌনরোগের সংক্রমণ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব। অযথা ঝুঁকি নেওয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রবণতা। সমকক্ষ বা সমবয়সীদের চাপ ও পরামর্শ। প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা ও সেবার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে না পারা।</p> <p style="text-align:justify">ঝুঁকি প্রতিকারে আমাদের করণীয় হলো কৈশোরে বন্ধু-বান্ধব থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এ সময় নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা কাজে লাগিয়ে বুঝতে হবে কোন কাজটি ভালো এবং কোনটি ভালো নয়। বন্ধু-বান্ধবদের চাপে বা কৌতূহল বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ নয়। ভালো-মন্দ বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাবা-মা, ভাই-বোন সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে কিংবা কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা চাইতে হবে। পড়াশোনা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে বেশি নিয়োজিত রাখতে হবে, যাতে বিপদজনক বা অসামাজিক কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা যায়। প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে সেগুলো মেনে চলতে হবে। এসময় পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে হবে। মাদককে ‘না’ বলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকাল। তাই, ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে মানে শিশু বিবাহ। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই শিশু বিবাহ বন্ধ করতে হবে। পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করার মানসিক প্রস্তুতি এই বয়স থেকেই নিতে হবে। কোন আত্মীয় অথবা পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা কিশোর-কিশোরীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে। তাই বাবা-মাকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আবেগতাড়িত না হয়ে জেনে বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ বয়ঃসন্ধিকাল জীবন গড়ার সঠিক সময়।</p> <p style="text-align:justify">বক্তারা আরো বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে, তাই এই সময় থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে জানার কোনো দরকার নেই। এ ধারণা সঠিক নয়, কারণ প্রজনন সক্ষম হবার সাথে সাথেই প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারলে কিশোর-কিশোরীরা সঠিকভাবে নিজেদের যত্ন নিতে পারবে। তারা এ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ্য-সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে ও ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।</p> <p style="text-align:justify">কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সুশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সব থেকে বেশি। তাই শিক্ষকদের পাশাপাশি অবিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। কিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে অভিভাবক ও কিশোরীর মধ্যে সমন্বয় দরকার। কিশোরী ও অভিভাবককে সচেতন করতে হবে। যাতে করে কিশোর-কিশোরীরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে নিজেদের সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। যতদিন পর্যন্ত পরিবারে এই আবহ তৈরি না হবে ততদিন পর্যন্ত কৈশরবান্ধন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে না। পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক পাঠদানে গুরুত্বারোপ করতে হবে। সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টি উন্নয়ন ও ক্ষমতার নিশ্চিত করতে হবে। ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের সঠিক প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।</p>