<p>আগেই তো ভালো ছিলাম—এমন ভাবতেই পারেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটি কোচের মনে এমন ভাবনা উদয়ের কারণ, দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ টানা চারবারেরর চ্যাম্পিয়ন কোচ এখন যে স্বস্তিতে নেই!</p> <p>অথচ গার্দিওলার স্বস্তিতে থাকার কথা ছিল। মৌসুম শুরুর আগে নিজ মুখেও জানিয়েছিলেন, এখন শান্তির ঘুম দিতে পারবেন। ইয়ুর্গেন ক্লপের বিদায়ে এমনটা বলেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। লিভারপুল কোচের বিদায় প্রসঙ্গে মজার ছলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখন আরো ভালোভাবে ঘুমাতে পারব। সে ডাগআউটে থাকায় লিভারপুলের বিপক্ষে খেলার আগের রাতটা যে আমার সব সময়ে প্রচণ্ড আতঙ্কে কাটত।’</p> <p>মজার ছলে বললেও পরিসংখ্যান কিন্তু সত্যি বলছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যত কোচের বিপক্ষে ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন, জিতেছেন বেশি গার্দিওলাই। শুধু ক্লপের বিপক্ষেই জয়ে এগিয়ে থাকতে পারেননি তিনি। মোট ৩০ বারের দেখায় ক্লপের মুখে হাসি ছিল ১২ বার। বিপরীতে গার্দিওলার জয় ১১ বার। বাকি ৭ বার ড্র। তাদের দ্বৈরথের শুরু ২০১৩ সালে জার্মান সুপার কাপ দিয়ে। আর শেষ এ বছরের প্রিমিয়ার লিগে।</p> <p>এমন একজন প্রতিপক্ষ থাকা মানে সব সময়ই স্নায়ুর পরীক্ষা। ক্লপের বিদায়ে তাই খুশিই হয়েছিলেন গার্দিওলা। বাকি সময় লিগে একাই রাজত্ব করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সে স্বপ্ন দ্রুতই ভেঙে যায়। যদিও শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্তই। কমিউনিটি শিল্ডের ফাইনালসহ এবারের মৌসুমের শুরুর ১৪ ম্যাচেই অপরাজিত ছিল তাঁর দল। উড়তে থাকা সিটির কোচের যেন তখন সত্যি সত্যি মনে হচ্ছিল শান্তির ঘুমে আছেন তিনি।</p> <p>তবে এর পরেই কান্না শুরু হয় সিটির। সিটিজেনদের শনির দশার শুরুটা করে টটেনহাম। লিগে চতুর্থ রাউন্ডে ২-১ ব্যবধানে জিতে গার্দিওলার সিটিকে হারিয়ে মাটিতে নামান টটেনহামের কোচ আঞ্জ পোস্তেকোগলু। পরে লিগের ম্যাচে নিজেদের মাঠ ইতিহাদইে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয় সিটি। স্পার্সদের কাছে সেই যে হার শুরু এরপর সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে মাত্র ২ জয় পেয়েছে সিটি। ৩ ড্রয়ের বিপরীতে নামের পাশে দগদগ করছে ৯ হারের ক্ষত। যেন মনে হচ্ছে ক্লপ বিদায় বেলা গার্দিওলার মুখের হাসিটাও ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।</p> <p>যে দলটি গত কয়েক মৌসুম ধরে হারের স্বাদ কেমন তা জানত না, সেই দলই কিনা এখন জয় পেতে ভুলে গেছে। সিটির সর্বশেষ জয়টি এসেছে গতকাল। লেস্টার সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের আকাশ থেকে কিছুটা হলেও কালো মেঘ দূরে সরিয়েছেন স্যাভিনিও-আর্লিং হালান্ড। গার্দিওলার জন্য ছিল বিশেষ এক রাত। </p> <p>এদিন ম্যানসিটির প্রথম কোচ হিসেবে ডাগআউটে ৫০০তম ম্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন গার্দিওলা। দলকে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতানোসহ ১৮টি মেজর শিরোপা এনে দেওয়ার পথে জয় পেয়েছেন ৩৬২ ম্যাচে। আর ৬৩ ড্রয়ের বিপরীতে হেরেছেন ৭৫টিতে।</p> <p>জয়ে ফিরে ক্লপের কথা হয়তো মনে পড়ছে গার্দিওলার। হয়তো মনে মনে বলছেন,‘বন্ধু, তুমি থাকলে লিগের মাঝপথে আমাকে শিরোপা জয়ের দৌড় থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলতে হতো না।’ গতকালের জয়ের পর গার্দিওলার শিরোপার দৌড় নিয়ে বলা কথায় যেন তেমনি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘প্রিমিয়ার লিগ জেতা থেকে আমরা অনেক অনেক দূরে। কোনো সুযোগ নেই। আমরা ইতিমধ্যে এটা মেনে নিয়েছি। ভালো হবে আমরা এফএ কাপ, লিগে শীর্ষ চারে চোখ রাখাটা।’</p> <div style="text-align:center"> <figure class="image" style="display:inline-block"><img alt="22" height="600" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Bhanu/jkl.jpg" width="1000" /> <figcaption>প্রিমিয়ার লিগে গার্দিওলা-ক্লপের (বাঁয়ে) দ্বৈরথ ছিল দেখার মতো। ছবি : এক্স থেকে</figcaption> </figure> </div> <p>অথচ, ক্লপের সময়েই তো ২০১৮-১৯ মৌসুমে কী অবিশ্বাস্যভাবেই না শিরোপা জিতেছিলেন গার্দিওলা। একটা সময় ২০ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল লিভারপুল। বিপরীতে ১৯ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ছিল সিটিজেনরা। সেই সিটিই শেষ ১৯ ম্যাচে ১৮ জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। অথচ, এই মৌসুমে লিগে ৩৮ ম্যাচের একটিতেও হারেনি ক্লপের লিভারপুল। অলরেডদের ৯৭ পয়েন্টের বিপরীতে ৯৮ পয়েন্টে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সিটি।</p> <p>কিন্তু এবার ১৯ ম্যাচ শেষে ১৪ পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন গার্দিওলা। লিভারপুল ১৮ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। এই হাল ছেড়ে দেওয়ার পেছনে অবশ্য শুরু থেকেই শিষ্যদের না পাওয়া কাজ করছে। চোটের কারণে রদ্রিকে তো এখনো স্কোয়াডেই পাননি গার্দিওলা। গত কয়েক মৌসুম ধরে সিটির মাঝমাঠের হৃদপিন্ড তিনি। ক্লাব ও স্পেনের হয়ে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবেই এবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রদ্রি। তাঁর সঙ্গে কেভিন ডি ব্রুইনা, জ্যাক গ্রিলিশরাও চোট নিয়ে আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। চোটের বাইরে ছন্দে নেই ফিল ফোডেন-বেনার্দো সিলভারা। ১৪ গোল নিয়ে শীর্ষ গোলদাতার তালিকায় থাকলেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন আর্লিং হালান্ডও।</p>