<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এসব কর্মকর্তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতিও দেওয়া হবে। তবে সরকারি চাকরিতে তাঁদের পুনর্বহাল করা হবে না, বা তাঁরা কখনো এই দাবি করতে পারবেন না—এমন শর্তে পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে প্রথম দফায় শুধু বকেয়া বেতন পাবেন বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা।</p> <p style="text-align:justify">এ জন্য ২১ কোটি টাকা ছাড় করার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। পর্যায়ক্রমে এসব কর্মকর্তার আনুতোষিক ও পেনশন বাবদ অর্থ ছাড় করা হবে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ নিয়ে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।</p> <p style="text-align:justify">নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপদেষ্টা কালের কণ্ঠকে জানান, উপদেষ্টা পরিষদে তাঁদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। সরকারের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রথম দফায় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন বাবদ অন্তত ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি পাওনা টাকা দেওয়া হবে।</p> <p style="text-align:justify">তবে তাঁরা কখনো নিজেদের সরকারি চাকরিতে পুনর্বহাল করার দাবি করতে পারবেন না—এমন শর্তে অনুমোদন করা হয়েছে।<br /> জানা গেছে, যোগ্যতা থাকার পরও ‘রাজনৈতিক’ তকমা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসনে হাজারো কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে ‘গুরুত্বহীন’ পদে। মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য অনেক কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ফেলে রাখা হয়েছিল দীর্ঘদিন। কাউকে কাউকে দেওয়া হয়েছিল বাধ্যতামূলক অবসর।</p> <p style="text-align:justify">গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে অবসরে থাকা বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসনে কর্মরত প্রায় ৭০০ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় পদোন্নতি। এরপর অতীতে যাঁরা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এবং বছরের পর বছর ওএসডি ছিলেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে বঞ্চিতদের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে গঠন করা এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন মন্ত্রিপরিষদ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের চার প্রতিনিধি।</p> <p style="text-align:justify">কমিটির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। এর পরই মূলত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের আবেদন জমা পড়তে শুরু করে। এরপর দুই দফা বাড়িয়ে গত বছর ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বঞ্চিতদের আবেদন নেওয়ার সময়মীমা বেঁধে দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন জমা পড়লেও যাচাই শেষে ৭৬৪টি আবেদন কমিটি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেদনে সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড)-এ ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে চারজনকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে কমিটি। যেহেতু তাঁরা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাঁদের ‘ভূতাপেক্ষ’ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। এই ৭৬৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৯ জনকে চার ধাপ, ৩৪ জনকে তিন ধাপ, ১২৬ জনকে দুই ধাপ এবং ৫৯৫ জনকে এক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। নতুন পদমর্যাদা নির্ধারণের পর বঞ্চিত এই কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা প্রদানে মোট খরচ হবে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align:justify">প্রতিবেদন নিয়ে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেছিলেন, এটি ঠিক পদোন্নতি নয়। এটি হলো সামাজিক মানমর্যাদা। আর্থিক সুবিধা ও পদ-পদবি দিয়ে একটি সরকারি আদেশ জারি করা হবে। এর ভিত্তিতে অর্থনৈতিক আদেশে তাঁরা এই টাকা পাবেন। সরকার নীতিগতভাবে একমত। একটু সময়ের ব্যাপার।</p>