গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট। শ্রেয়াকে কথা দিয়েছিলাম গ্রাজুয়েশন শেষ করার এক বছরের মধ্যে ভালো একটা চাকরি খুঁজে পেলেই আমাদের পাঁচ বছরের সম্পর্কের পরিণতি দেব। শ্রেয়াকে চিরদিনের জন্য আপন করে নেব।
চাকরি খোঁজার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু করেছি।
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট। শ্রেয়াকে কথা দিয়েছিলাম গ্রাজুয়েশন শেষ করার এক বছরের মধ্যে ভালো একটা চাকরি খুঁজে পেলেই আমাদের পাঁচ বছরের সম্পর্কের পরিণতি দেব। শ্রেয়াকে চিরদিনের জন্য আপন করে নেব।
চাকরি খোঁজার পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিও শুরু করেছি।
ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বসে আছি, ইন্টারভিউ নেওয়া হবে না। চাকরিটা জিএম স্যারের এক আত্মীয়ের হয়ে গেছে। বাড়িতে ফেরার সময় কানে যেন একটাই কথা বাজতে লাগল, 'আর মাত্র এক মাস বাকি আছে।'
এক মাস কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ করেই শ্রেয়ার কল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল, 'আজ একবছর পূর্ণ হয়ে তিন দিন। কিন্তু তুমি কোনো খবর এখনো শোনাতে পারোনি আরিয়ান। ভুলে যেয়ো আমাকে।'
ফোন বন্ধ। কয়েক দিন খুব চেষ্টা করলাম ওর সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু কোনো লাভ হলো না। ৮ দিন পর ওর নাম্বার থেকে মেসেজ এলো, 'বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ২১ তারিখে আমার বিয়ে। আজ ছেলে পক্ষ আংটি পরিয়ে গেছে।'
আমি আবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রথমে কল রিজেক্ট করে দিল। পরের বার ফোন আবারও বন্ধ। আমাকে কথা বলার কোনো সুযোগ দিলো না। অনেক চেষ্টা করেছি শুধু একবার কথা বলার, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
দুই বছর কেটে গেছে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। ৪ মাস হলো খুব ভালো চাকরি হয়েছে। অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলাম পায়ে হেঁটে। দূর থেকে চোখ পড়ল একটা মেয়ের দিকে। চিনতে একটুও সময় লাগেনি আমার। 'আরে! শ্রেয়া তো আর আমার নেই। ও তো অন্য কারো হয়ে গেছে।'
আমি তো ওকে খুব ভালোবাসতাম। আমার মতো করে ভালোবেসেছি। ভালোবাসাবার মানুষকে কী কখনো ভুলে যাওয়া যায়? কী ভুলতে হবে সেটা মনে করতে গেলেও তো বার বার ওই ভালোবাসার মানুষটির কথাই মনে পড়ে যায়। আমি বললাম, 'শ্রেয়া, শ্রেয়া! দাঁড়াও প্লিজ। কেমন আছো তুমি? তোমার হাসবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না?'
- 'আমার হাসবেন্ড?' চেহারা একটু মলিন করে মুচকি হেসে বলল শ্রেয়া।
- 'চলো শ্রেয়া, কোথাও বসে কথা বলি।'
- 'আরিয়ান, আমার বিয়ে ঠিক করেছিল বাবা ঠিকই কিন্তু বিয়ের কোনো বরযাত্রী আসেনি সেদিন। বিয়ের দিন ওই বাড়ি থেকে খবর আসলো ছেলের অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন আছে। সে তাকে ছাড়া আর অন্য কাউকে বিয়ে করবে না। জানো আরিয়ান, সেদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল।' বলেই শ্রেয়া বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করল।
পেছন থেকে ডাক দিয়ে সেই প্রথম দিনের মতো পুনরায় প্রোপোজ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। 'শ্রেয়া, গাছ হয়তো পাতা ছাড়াও বাঁচতে পারবে, সমুদ্র হয়তো পানি ছাড়াও নিজের নাম ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তুমিহীনা পৃথিবীর কল্পনা কখনো করতে পারি নাই। ভালোবাসি তোমাকে খুব। আর এই ভালোবাসার বিশুদ্ধতা দুই বছর হলো যাচাই করেছি। নিজের কাছে প্রমাণ করেছি আমার ভালোবাসা নিখুঁত ছিল। এবার তোমার স্বীকৃতি দেওয়ার পালা।'
শ্রেয়ার ছোট্ট একটি মিষ্টি হাসি যেন হাজারটা স্বীকৃতি 'হ্যাঁ, তোমার ভালোবাসা নিখুঁত। আমাদের ভালোবাসা প্রকৃত অর্থেই নিখুঁত আরিয়ান। তোমাকে খুব ভালোবাসি আরিয়ান খুব ভালোবাসি।'
সম্পর্কিত খবর
পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে লাবণ্য ও অমিতের আমেজ-উত্তেজনা ও প্রস্তুতির কমতি নেই। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বসন্ত এটি। দিন টাকে উদযাপন করতে লাবণ্য নীল রঙের শাড়ি পরেছে, অমিতও কিঞ্চিৎ নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে; তবে পুরোপুরি নীল রং বললে ভুল হবে!
দুই জন পাশাপাশি ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া শোভিত রাস্তায় হেঁটে চলেছে। প্রথম দর্শনে দেখলে মনে হবে হাত দুটো বিনা সুতায় গেঁথে আছে; সময় যত গড়াচ্ছে তাদের হাঁটার গতি তত কমে আসছে! এক পর্যায়ে লাবণ্য নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে খোশ গল্প করার প্রস্তাব দেয়, প্রেয়সীর প্রস্তাব কী অমিত প্রত্যাখ্যান করতে পারে? দুজন পাশাপাশি বসে আছে আর আকাশপানে আনমনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, দেখলে মনে হবে শত জনমের বিরহ তাদের ঘিরে রেখেছে।
চন্দ্রবিন্দু ক্যাফেতে বসে দুজনে চা পান করছে। অমিত চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর অবলীলায় লাবণ্যের দিকে তাকিয়ে আছে। পলকহীন চাহনিতে প্রেয়সীর সৌন্দর্য অবলোকন করছে, মাঝেমধ্যে চায়ের কাপে চুমুক দিতে ভুলে যাচ্ছে।
'আর কিছু চাই না, এক একবার তুমি শুধু আমার পাশে থাইকো; দাসী ভাবিয়া একবার এমন বসন্তে দেখা দিও, কেবল চক্ষু পরিতৃপ্ত করিব।' এই কথা বলে লাবণ্য হলে প্রস্থান করল।
পৃথিবীর জন্য যিনি নির্ভেজাল মুগ্ধতা চাষ করেন, তিনি আমার জাদুকর। তাকে প্রথম দেখেছিলাম ডিপার্টমেন্টের সিঁড়িতে, চোখেমুখে অদ্ভুত মায়া নিয়ে ধাপ গলে নামছিলেন। সেদিন থেকেই গোপন অস্থিরতায় ক্রমশ ডুবতে শুরু করলাম। দিনদুয়েক খোঁজখবর নিয়ে তার সম্পর্কে জেনে বুকের সাহস হাঁটুতে গিয়ে ঠেকল।
নামের পাশে লেখা লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ইংলিশ। নতুন ফ্যাকাল্টি। এত মানুষের ভিড়ে কেন তাকেই এত নিখুঁতভাবে ভালো লাগতে হবে? দ্বিধায় পড়লাম। মনকে বুঝিয়েও পরিত্রাণ পেলাম না।
এই পর্যায়ে পুরোপুরি বোবা হয়ে গেলাম। পরপর দুইদিন তিনি ‘হ্যালো’ লিখলেও রিপ্লাইয়ের জন্য কোনো শব্দই খুঁজে পেলাম না। পরবর্তী ৩ দিনের মাথায় মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু।
কি রকম একটা ঘোরে থেকে বাসে, দৌড়ে, হেঁটে শ্যামলী পৌঁছলাম। বুক ধড়ফড় করছে, কোনোকিছুই ঠিকঠাক ভাবতে পারছি না। ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় কল, ‘আপনি অন্যমনস্ক কেন? দেখে রাস্তা পার হন। সাবধানে।’
তার মুখোমুখি দাঁড়াতেই বললেন, ‘অফিস রুমে আসেননি কেন?’
- ‘জি? অসুস্থ ছিলাম।’
- ‘অসুস্থ থাকবেন তাহলে পিছনে ঘুরঘুর করেছেন কেন?'
- ‘জি?’
- ‘ভীতু।’
একটা বক্স হাতে দিয়ে বললেন, ‘ডার্ক চকলেট। রাতে খাবার পরে খাবেন। ভয় কমবে।’
যাওয়ার সময় মুখটিপে হাসলেন যেন।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখছি। বুকের ধড়ফড় স্বাভাবিক হয়ে আসছে। শুধু মনে হচ্ছে, এই ঢাকা শহর, এই রাত, এই ব্যস্ততা এর আগে এত মুগ্ধকর লাগেনি কোনোদিন...
রাত ৯টায় একটা মেসেজ পেয়ে থমকে যাই। যেখানে লেখা, আমি রাজু। আপাতত বেকার তবে কিছু একটা করার চেষ্টা করছি। আমার বাসা নাভারণ তবে থাকি না সেখানে।
আমি একটা মাত্রিমনিয়াল সাইটে বিয়ের বায়োডাটা দিয়েছিলাম। সেখানে দেখে যোগাযোগ করেছে।
ঠিক দুইদিন পরে কি মনে করে রিপ্লাই করলাম।
রাজুর সব কথা কেমন যেন অদ্ভুত। তার কখনো মনে হয় সারাবিশ্বের মানুষ মেরে ফেলি আবার মনে হয় সে কিছুদিন পরে নিজেকে মেরে ফেলবে। এরকম হাজারও কথা। কেমন যেন তাকে জানার আগ্রহ বাড়ে। একটু একটু করে কথা আগাতে থাকে। সে একটা বিজনেস দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। সেখানে আমি ও যোগ দেই।
রাজু হঠাৎ একদিন বলে বসে, 'চলো প্রেম করি।'
এমন একটা মানুষকে আর যাই হোক ভালোবাসা যায় না। তারপরও সময় চাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার। রাজু বলে, 'তাড়াতাড়ি জানিও।'
তারপর কি মনে করে 'হ্যা' বলি। মনে বিশ্বাস ছিল, প্রেম হলেও এই মানুষ সংসারি হবে না। প্রেম তো করাই যায় কিছুদিন। এভাবে কিছুদিন কাটতে থাকে।
তারপর আসে সেই ক্ষণ যা আমি কখনোই আশা করিনি। রাজু একদিন বলল, 'চলো বিয়ে করি।'
আমি আবার সময় চাই তিন মাস। প্রথমদিকে রাজি হলেও পনের দিনের মাথায় গিয়ে রাজু বলে, তিন মাস থাকতে পারবে না। দ্রুত বিয়ে করবে।
এমন একটা মানুষকে বিয়ে করার কথা ভাবতে গেলেই আমার গা শিউরে ওঠে। কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারি না। এদিকে রাজু বলে, "হয় বিয়ে করো না হয় 'না' বলো। কিছু একটা করো।"
আমি না বলতে পারি না, মায়া লাগে। এদিকে আবার পালিয়ে বিয়ে করতে হবে। কেউ থাকতে পারবে না। রাজুর পরিবার বলতেও কিছু নাই। কি করব ভেবে পাই না। শেষমেষ মায়া কাটাতে না পেরে দুজনে বিয়ে করে ফেলি।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মানুষটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা মানুষ। যেটা সে বিয়ের আগে বলেছিল তার সাথে কোনো সম্পর্ক নাই তার। রাজু আর আমি, সুখে দুঃখে ভেসে চলেছি দুইটা বছর। এভাবে চলতে চাই আরো বহু বছর..
ক্যান্টিনে ফোন হাতে বসে আছি হঠাৎই পিছে থেকে কেউ বলে উঠল, প্রিয়তমেষু অজান্তা, হতে চাই তোমার নীলরঙা আকাশের সাদা মেঘ, হতে চাই অনন্তকাল মেঘভেজা নীলিমা।
পিছে ফিরে তাকাতেই দেখি নীলাদ্রি। দেখা মাত্রই লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিল। বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে চায়ের দাম মিটিয়ে ওরা চলে গেল।
আমি সাজিদ। নীলাদ্রি আমার ১ বছরের জুনিয়র। ওর সাথে কখনো কথা হয়নি।
ক্লাস শেষে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে ফোনের নোট প্যাডে লিখছিলাম এমন সময় রিনরিনে কণ্ঠ শুনতে পেলাম। কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই ঠিক আমার উল্টো দিকে নীলাদ্রি তার বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে ।
পরিশেষে শুরু হলো তাদের এক নতুন অধ্যায়। পরে অবশ্য জানা যায়, নীলাদ্রির পছন্দ ছিল সাজিদের করা ছেলে মানুষী। এলোমেলো চুলে তার দুরন্তপনা, সবার সাথে মেশার এক অসম্ভব ক্ষমতা। মেয়েদের সামনে পড়লেই তার মধ্যে যে মিশুক ভাব ফুটে ওঠে তা ছিল নীলাদ্রির ভালোলাগার উৎস।