<p>ভারতে আর বাঁধা থাকছে না ‘আইনের চোখ’। দেশটিতে এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্য হাতে তলোয়ার ও চোখে পট্টি দেওয়া যে ন্যায়ের মূর্তি এত দিন প্রচলিত ছিল, তা বদলে যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।</p> <p>গণমাধ্যমটি বলছে, দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যে পুরনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয়েছে। নতুন এই নারীমূর্তির চোখে কোনো পট্টি বাঁধা নেই তাঁর এক হাতে রয়েছে দাঁড়িপাল্লা, অন্য হাতে রয়েছে ভারতের সংবিধান। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের লাইব্রেরিতে ন্যায়ের নতুন মূর্তিটি বসানো হয়েছে।</p> <p>এদিকে শ্বেতবর্ণের নতুন নারীমূর্তিটি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে ন্যায়ের প্রতিমূর্তি হিসেবে যে নারীমূর্তি প্রচলিত ছিল, তার চোখে কালো কাপড় বাঁধা থাকত। আইনের চোখে সবাই সমান—মূলত এই বার্তাই দিত সেই কাপড় বাঁধা চোখ। অর্থাৎ বিচারের সময় আদালতের কাছে ক্ষমতা, ধন-দৌলত, সামাজিক মানমর্যাদা, কোনো কিছুই বিবেচ্য হয় না। সবাইকে সমান চোখে দেখে বিচার করা হয়। সেই সঙ্গে ন্যায়মূর্তির এক হাতে তলোয়ার ছিল আইনের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতার পরিচায়ক।</p> <p>প্রধান বিচারপতির নির্দেশে ন্যায়ের মূর্তি বদলানোর পর অনেকে বলছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসলে ঔপনিবেশিক রীতির গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছেন চন্দ্রচূড়। যেভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধি বদলে ন্যায় সংহিতা চালু করা হয়েছে, তেমনি বদলে ফেলা হচ্ছে নারীমূর্তিটিকেও।</p> <p>প্রধান বিচারপতি নতুন এ পদক্ষেপের মাধ্যমে বার্তা দিতে চান, আইনের চোখ আসলে বাঁধা নয়। সবাইকে সমান চোখে দেখে বিচার করেন আদালত। আর তলোয়ারের পরিবর্তে সংবিধান রাখার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, তলোয়ারটি আসলে হিংসার চিহ্ন। প্রধান বিচারপতির বার্তা, আইনের চোখে হিংসার কোনো স্থান নেই। বরং সংবিধান অনুযায়ী আদালত বিচার পরেন ও রায় শোনান। এ ক্ষেত্রে ন্যায়মূর্তির হাতে তাই তলোয়ারের পরিবর্তে সংবিধানই উপযুক্ত।</p> <p>তবে ন্যায়মূর্তির ডান হাতে আগে যেমন দাঁড়িপাল্লা ছিল, তেমনই আছে। তাতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই দাঁড়িপাল্লা সমাজের ভারসাম্যের প্রতিফলন ঘটায়। বাদী ও বিবাদী—উভয়পক্ষের যুক্তি শুনে বিচার করেন আদালত। কোনো এক দিকে বিচার ঝুঁকে থাকে না। দাঁড়িপাল্লাটি সেই বার্তা দিয়ে থাকে। তাই তা যেমন ছিল, তেমনই রাখা হয়েছে নতুন মূর্তিতেও।</p>