পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

এএফপি
এএফপি
শেয়ার
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
পাকিস্তানের পতাকা। ফাইল ছবি : এএফপি

পাকিস্তানের একটি আদালত অনলাইনে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা সম্পর্কিত কন্টেন্ট পোস্ট করার অভিযোগে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। একজন প্রসিকিউশন আইনজীবী বুধবার এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এএফপি বলছে, দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে এমন মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে বেসরকারি সংগঠনগুলো শত শত তরুণের বিরুদ্ধে অনলাইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেছে।

মুসলিমপ্রধান পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। এমনকি কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তা জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

এবারের মামলাটি আদালতে নেওয়া বেসরকারি সংগঠন লিগ্যাল কমিশন অন ব্লাসফেমি পাকিস্তানের আইনজীবী রাও আবদুর রহিম বলেন, ‘পবিত্র নবীর (সা.) বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননাকর বিষয়বস্তু ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচজন অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কোরআন অবমাননার অভিযোগে তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের মধ্যে একজন আফগান ও চারজন পাকিস্তানি নাগরিক। তাদের মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডির একটি আদালতে দণ্ড দেওয়া হয়। রাওয়ালপিন্ডি পাকিস্তানের সেনা সদর দপ্তর থাকা শহর এবং রাজধানী ইসলামাবাদের পাশেই অবস্থিত।

আইনজীবী রহিম আরো বলেন, দণ্ডগুলো একই সঙ্গে কার্যকর হবে।

তবে দণ্ডপ্রাপ্তদের উচ্চ আদালতে আপিল করার অধিকার রয়েছে।

শত শত মামলা  
এত দিন পর্যন্ত পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। এই রায় ঘোষণার এক দিন আগেই পাকিস্তানের একজন ইউটিউব তারকা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তিনি এমন একটি পারফিউম বাজারে ছেড়েছিলেন, যার নাম পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইন অনুযায়ী দেওয়া হয়েছিল।

রাজাব বাট নামের ওই ব্যক্তি তার ‘২৯৫’ নামের পারফিউম উদ্বোধন করেছিলেন, যা পাকিস্তানের দণ্ডবিধির ধর্ম অবমাননা আইনের ধারার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। দুটি ধর্ম অবমাননা মামলায় তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এর আগে জানুয়ারিতে একই আদালত ‘অনলাইনে ধর্ম অবমাননাকর কনটেন্ট পোস্ট করার’ অভিযোগে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

এদিকে সরকার পরিচালিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ৭৬৭ জন ব্যক্তি কারাগারে বিচার প্রক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই তরুণ। এই মামলাগুলো বছরের পর বছর আদালতে চলতে থাকে, যদিও সুপ্রিম কোর্টে আপিলে মৃত্যুদণ্ডের সাজা অনেক সময় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা মামলার জন্য একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদুল ফিতরের জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা যেভাবে সাজে
৩০ মার্চ ভারতের কাশ্মীরের শ্রীনগরের এক বাজারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রেতারা ভিড় করেছে। ছবি : এএফপি

পবিত্র রমজান মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ঈদুলফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করে। এই ঈদ রমজানের সমাপ্তি এবং শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখার সূচনা করে। মুসলমানরা ঈদের দিন তাদের সেরা পোশাকটা পরিধান করে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়। 

প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব স্টাইল ও পোশাকের ধারণা রয়েছে যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে তাদের সাদৃশ্য অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তান, ভারত বা বাংলাদেশে নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী সালোয়ার-কামিজ পরেন। ইন্দোনেশিয়ার নারীরা তাদের পোশাক কেবায়া এবং কেরুদুং পরেন। অন্যদিকে পশ্চিম মুসলমানরা প্রায়ই তাদের নিজস্ব ছাড়া অন্য মুসলিম সংস্কৃতির পোশাক পরে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক ঈদের দিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা কেমন পোশাক পরে।

ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের নারীরা ঈদের দিন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। যার মধ্যে রয়েছে লাল সুতার সূচিকর্ম এবং ছোট আয়না দিয়ে সজ্জিত। এই পোশাকটি ‘থুবে’ নামে পরিচিত

কসোভো 
কসোভোর মুসলিম শিশুরা ঈদ উদযাপনের সময় সোনালি সুতার কাজ করা কোট পরে। 

সৌদি আরব 
ঈদের দিন পুরুষরা ‘কান্দর’ নামের সাদা পোশাক পরিধান করে।

মাথায় দেয় ‘গাহফিহ’ নামের টুপি। নারীরা এ দিনে ‘থাউব’ নামের বিশেষ পোশাক পরে থাকে। 

তুরস্ক 
তুরস্কে ঈদ উদযাপনের দিনকে ‘রামাদান বেরামি’ বা ‘সেকার বেরামি’ বলা হয়। তুর্কি নারীরা ঐতিহ্যবাহী ‘তেসেত্তুর’ পরিধান করেন, যা টপ কোটের সঙ্গে মাথার স্কার্ফের সমন্বয়ে গঠিত। শহুরে আধুনিক নারীরা জিন্স, টি-শার্ট বা স্কার্টও পরিধান করেন।

পাকিস্তান
পাকিস্তানি নারীরা ঈদে সালোয়ার-কামিজ, আনারকলি, লাহেঙ্গা ছোলি, লম্বা কুর্তা ইত্যাদি পরিধান করেন। এ ছাড়া ফেরান, বেলুচি ও দোপাট্টা তাদের আঞ্চলিক পোশাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

মিসর
মিসরীয় নারীরা লম্বা গাউন, হিজাব ম্যাক্সি স্কার্ট বা লম্বা কার্ডিগান পরিধান করেন। 

ইন্দোনেশিয়া 
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতরি’ বা ‘লেবারান’ নামে পরিচিত। নারীরা ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ এবং পুরুষরা ‘বাজু কোকো’ নামের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করেন। 

মালয়েশিয়া 
মালয়েশিয়ায় ঈদ ‘হারি রায়া আইদিলফিতরি’ নামে পরিচিত। এখানে ‘ওপেন হাউস’ প্রথা প্রচলিত, যেখানে সবাই সবার বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়। ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসেবে পুরুষরা ‘বাজু মেলায়ু’ এবং নারীরা ‘বাজু কুরুং’ পরিধান করেন। 

সিরিয়া 
সিরিয়ার নারীরা ঈদে ‘থোব’ নামের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করেন, যা সাধারণত কালো রঙের এবং সৃজনশীল নকশার এমব্রয়ডারি ও বাহারি রঙের ডিজাইনযুক্ত।

সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলিমরা ঈদুল ফিতরের দিনে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। পুরুষরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি (কেফিয়া) এবং একটি আলখাল্লা (থোব) পরে থাকে। আরব দেশগুলোতে পুরুষদের এই পোশাকটি অনন্য এবং সাধারণ।

কেনিয়া
ঈদুল ফিতরের দিন কেনিয়ার মুসলিম পুরুষরা এবং শিশু উভয়ই একটি ঐতিহ্যবাহী টুপি এবং আলখাল্লা (থোবি) পরেন। 

বিভিন্ন দেশের এই বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যবাহী পোশাক ঈদ উৎসবকে আরো রঙিন করে তোলে, যা প্রতিটি সংস্কৃতির নিজস্ব ধারা ও ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে কিভাবে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে কিভাবে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর
৩০ মার্চ কলকাতার নাখোদা মসজিদের কাছে এক বাজারে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেনাকাটা করছে মানুষ। ছবি : এএফপি

রমজান মাস শেষে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের পালিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি ঈদুল ফিতর। এ উৎসবের মাধ্যমেই পবিত্র রমজান মাসের সমাপ্তি ঘটে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর হয়ে ওঠে পরিবার, বন্ধু ও সম্প্রদায়ের মিলনমেলা। অত্যন্ত উৎসাহ এবং আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় এই পবিত্র উৎসব।

বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিনটি উদযাপিত হয়। সারা বিশ্বে ঈদের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্য প্রায় একই হলেও দেশভেদে রয়েছে নানা রীতি, পোশাক ও খাবার। তবে প্রতিটি সংস্কৃতিতে ঈদের মূল উপাদান আনন্দ ও উদারতা। 

সংযুক্ত আরব আমিরাত
বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

এ আয়োজনে নেই কোনো কমতি। ঘর সাজানোর মধ্য দিয়ে বাড়তি আমেজ নিয়ে আসে ঈদ। নানা রঙের বাতি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় বাড়ি-ঘর। আর নতুন পোশাক তো আছেই পাশাপাশি তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি।
 

ঈদের সকালে মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। নামাজের পর শুরু হয় উপহার বিনিময়। থাকে নানা পদের খাবার। এ ছাড়া মানুষ আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কার্নিভালের মতো উৎসবে অংশগ্রহণ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দান করা ঈদের একটি অপরিহার্য অংশ।

রমজান এবং ঈদের সময় মুসলমানদের দরিদ্রদের দান করতে উৎসাহিত করা হয়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা খাবার, পোশাক এবং অর্থ বিতরণ করে। যাতে সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

সৌদি আরব
নতুন চাঁদ দেখা গেলেই সৌদি আরবে ঈদের আনন্দ শুরু হয়। মুসলমানরা মসজিদে অথবা খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায়ের পরে তারপর একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানায়। দিনটি পালন করা হয় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং সময় কাটানোর মাধ্যমে। ঈদের দিন সৌদির মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেন। শিশু এবং বয়স্কদের নানা উপহারও দেন। ঈদের দিন পুরুষরা ‘কান্দর’ নামের সাদা পোশাক পরিধান করেন। মাথায় দেন ‘গাহফিহ’ নামের টুপি। নারীরা এ দিনে ‘থাউব’ নামের বিশেষ পোশাক পরে থাকেন। 

ঈদের দিন সৌদি মুসলিমরা বাজার থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনে আনেন। তা বাড়ির প্রবেশ দরজার বাইরে রেখে দেন। যাতে অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষ তা নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারেন। সৌদিরা ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান যেমন বাজপাখি, উটের দৌড় এবং ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রম।

তুরস্কে
তুরস্কে ঈদকে ‘শেকার বায়রামি’ বলা হয়, যার অর্থ ‘চিনির ভোজ’। তুরস্কে ঈদ উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মিষ্টি খাবার। তুর্কি লোকেরা তাদের নতুন পোশাক পরে দিন শুরু করে। এরপর তারা বড়দের কাছে দোয়া চাইতে যায়। তুর্কি শিশুরা বড়দের কাছ থেকে মিষ্টি এবং সালামি পায়। তুর্কি লোকেরা ঈদের দিন বাকলাভা এবং হালভার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে।

নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডে মসজিদে বা বাইরের স্থানে সকালের নামাজের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন শুরু হয়। তারপরে ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাই অ্যানুয়াল ঈদ ডে’। সেখানে বিভিন্ন আয়োজন দেখতে জড়ো হয় মানুষ। এরপর সমাবেশ এবং ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরিবারগুলো উপহার বিনিময় করে এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার ভাগাভাগি করে নেয়। সম্প্রতি অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন এবং ক্রাইস্টচার্চের মতো প্রধান শহরগুলোতে ঈদ উৎসবগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই উৎসবগুলোতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সুস্বাদু খাবারের স্টল এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। সবাই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে দিনটিতে।

ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদকে বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতর’। ঈদের নামাজ সাধারণত বড় খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ এ দিনটিতে নারীরা পরেন ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ আর পুরুষরা ‘বাজু কোকো’, যা দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। নামাজের পর মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে। ঈদের দিন বিশেষ খাবার হিসেবে তারা কেতুপাত, দোদোল, লেমাংসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ইন্দোনেশিয়াতেও একই অবস্থা দেখা যায়। 

ইন্দোনেশিয়ায় ‘মুদিক’ করারও ঐতিহ্য রয়েছে, যার অর্থ ছুটির দিনে নিজের শহরে ফিরে যাওয়া। মুদিক ঐতিহ্য এত গুরুত্বপূর্ণ যে সরকার মানুষের ভ্রমণ সহজ করার জন্য বিনা মূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশটিতে প্রায় ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করেন। ঈদের দিনে স্থানীয়রা বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চান। 

পাকিস্তান
নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে পাকিস্তানেও ঈদ উৎসব শুরু হয়। ঈদের দিন মানুষ নতুন পোশাক পরে মসজিদে বা বড় মাঠে ঈদের নামাজ পড়ে। নামাজের পর মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে এবং উপহার বিনিময় করে। পাকিস্তানি মুসলমানরা ঈদ উপলক্ষে বিরিয়ানি, খির এবং শিয়ার খুরমার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে।

আইসল্যান্ড
যদিও আইসল্যান্ডে মুসলিমরা এখনো সংখ্যালঘু, তবু তাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যেহেতু আইসল্যান্ডের গ্রীষ্মের দিনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ হয়, তাই মুসলমানরা দিনে ২২ ঘন্টা পর্যন্ত রোজা রাখেন। তবে ইসলামী পণ্ডিতরা নিকটতম দেশ থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় বা সৌদি আরবের সময় অঞ্চল পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে রোজা ভাঙার পরামর্শ দিয়েছেন। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের পর মুসলিমরা একত্র হন ইন্দোনেশিয়ান, মিসরীয় ও ইরিত্রিয়ান খাবারের আন্তর্জাতিক ফিউশন ভোজে। ঈদুল ফিতরের আনন্দময় অনুষ্ঠানে শিশুরা তাদের নতুন পোশাক পরে এবং উপহার বিনিময় করে। 

মিসর
মিসরের মানুষ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং সময় কাটানোর মাধ্যমে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। এদিন মিসরীয়রা বিশেষ খাবার তৈরি করে যেমন ফাত্তা (ভাত, মাংস এবং রুটির মিশ্রণ) এবং কুনাফা (পনির এবং শরবত দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টি)। মিসরীয়রা ঈদে তাদের সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক এবং মিষ্টি কিনে দেয়। 

রাশিয়া
রাশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে মুসলিমের সংখ্যা বেশি। এসব প্রদেশে ঈদের দিনটি ছুটি থাকে। চেচনিয়া ও দাগেস্তান প্রদেশে ঈদের ছুটি তিন দিন। চেচনিয়ায় ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয়। চাঁদ রাতে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি হয় মিষ্টান্ন এবং অন্যান্য খাবার। সবাই একসঙ্গে ঘুরতে যায় এবং সময় কাটায়। এ দিনে অনেক জায়গায় ‘মানতি’ নামের এক ধরনের খাবার বানানো হয়। আটার রুটির ভেতর ভেড়া বা গরুর মাংসের কিমার পুর দিয়ে ভাপানো হয়। পরে পরিবেশন করা হয় মাখন এবং মেয়নেস দিয়ে। 

চীন
চীনে ঈদ উপলক্ষে সেখানে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদে। অন্যান্য প্রদেশেও ঈদের দিনটি সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সরকারিভাবে ভেড়ার মাংস সরবরাহ করা হয়। ঈদের দিনে আটা ও ময়দা দিয়ে প্রস্তুত ‘জিয়াং’ নামের এক ধরনের বিশেষ খাবার খুবই জনপ্রিয়। স্যুপ অথবা ভাত দিয়ে এটি খাওয়া হয়। দেশটিতে মুসলিমের সংখ্যা বেশি জিনজিয়ান ও নিংজিয়া প্রদেশে।  

উজবেকিস্তান
মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানেও ঈদুল ফিতর স্থানীয়দের কাছে ‘রুজা হায়িত’ নামে পরিচিত। দেশটিতে তিন দিনব্যাপী ছুটি নিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঈদের আগের দিনটিকে তারা বলে আরাফা। এই দিনে প্রায় প্রতিটি উজবেক পরিবারে ঐতিহ্যবাহী প্যাস্ট্রি কুশ টিল, বুগিরসক, চাক-চাক ইত্যাদি খাবার তৈরি করা হয়। রাতে ঘরে ঘরে উজবেক প্লভ রান্না হয়। 

তিউনিসিয়া
মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া। সেখানে রমজান মাসজুড়ে অনেক রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। চাঁদরাতে খাবার স্টল, দোকানপাট খোলা থাকে ফজর পর্যন্ত। সব মানুষ রাতভর ঘুরে বেড়ায়। তিউনিসিয়ান মুসলিমদের পছন্দের খাবার হলো খেজুর আর অলিভ অয়েলে তৈরি মিষ্টি খাবার ‘আসসিদা’। ঈদের নামাজের তারা মিষ্টি খাবার খায়। 

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে। মুসলমানরা ঈদের সকালে মসজিদে বা খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় মাঠ বা কনভেনশন সেন্টারে ঈদের নামাজের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণে বা কমিউনিটি সেন্টারে সম্মিলিত ভোজ আয়োজিত হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করে। 

আমেরিকান মুসলমানরাও দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিশ্রণে। যেমন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা, গান শোনা এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার উপভোগ করা। খাবারের মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, ম্যান্ডি, শরমাসহ আমেরিকান ফিউশন ডিশ। 

ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব, যা সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করে। ঈদ উদযাপনে প্রতিটি দেশর নিজস্ব সংস্কৃতি বা অনন্য রীতিনীতি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা, নতুন পোশাক কেনা অথবা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা, যা-ই হোক না কেন ঈদ মানে আনন্দ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা যখন ঈদ উদযাপনের জন্য একত্রিত হয় তখন শান্তি, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির বার্তা স্পষ্টভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। সবাইকে ঈদ মোবারক!

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঈদের খাবারের বৈচিত্র্য : বিশ্বের নানা স্বাদে ঈদুল ফিতর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদের খাবারের বৈচিত্র্য : বিশ্বের নানা স্বাদে ঈদুল ফিতর
বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ঈদুল ফিতরের জন্য নতুন পোশাক কেনাকাটা করে ও সুস্বাদু খাবার কেনে। ছবি : এএফপি

ঈদুল ফিতর মানেই খুশি, নতুন পোশাক, সালামি আর একগাদা খাবারের মহোৎসব। এক দিনের জন্য হলেও ডায়েট শব্দটা গোপন করে রাখা হয় ডিকশনারির ভেতরে, আর পেট হয়ে ওঠে এক মহাসমুদ্র, যেখানে সেমাই, বিরিয়ানি, কাবাব সব ভাসতে থাকে নির্ভার! তবে আমাদের দেশেই শুধু নয়, ঈদুল ফিতরের খাবার উৎসব গোটা বিশ্বেই নানা রকম বৈচিত্র্যে ভরপুর। চলুন, এক চক্কর মেরে আসি ঈদের প্লেটগুলোর দুনিয়ায়!

বাংলাদেশ : সেমাই রাজত্ব ও রোস্ট বিপ্লব
বাংলাদেশে ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাকের সামনে হাজির হয় গরম গরম দুধসেমাই আর লাচ্ছা সেমাই। তারপর পোলাও-কোরমা, রোস্ট-বিরিয়ানি আর শামি কাবাবের এমন আয়োজন চলে, যেন পুরো পরিবার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে! মিষ্টি হিসেবে ফিরনি আর জর্দা না খেলে ঈদের দিন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সবগুলো দেশে ঈদুল ফিতরের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো সেমাই।

ভারত ও পাকিস্তান : নেহারি বনাম শাহি টুকরা
পাশের দেশগুলোতে ঈদের সকাল শুরু হয় গরম গরম নেহারি দিয়ে। ঝোলের মধ্যে নরম মাংস চুবিয়ে পরোটা দিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। আর মিষ্টির দিক দিয়ে শাহি টুকরা নামের এক অদ্ভুত কিন্তু স্বর্গীয় খাবার আছে, যেখানে পাউরুটির সঙ্গে কাজুবাদাম, দুধ আর চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এক অপূর্ব স্বাদের ডেজার্ট।

সৌদি আরব : কবসা আর লুকাইমাতের ম্যাজিক
সৌদি আরবে ইদের দিন কবসা না থাকলে যেন উৎসবই জমে না। সুগন্ধি চাল, মাংস আর দারচিনি-এলাচের মিশ্রণে তৈরি এই খাবারটা খানদানি স্বাদ নিয়ে হাজির হয় সবার প্লেটে। আর ডেজার্টের দিক দিয়ে ছোট ছোট গোল মিষ্টি বল, লুকাইমাত, যা হালকা মধু বা সিরার মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। একবার মুখে দিলে মনে হবে, জীবন সুন্দর!

খেজুর, বাদাম, চিনি ও শুকনা নারকেল দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবারের চল আছে ইরাক ও সৌদি আরবে।

এটি ‘ক্লাইচা’ নামে পরিচিত। এটিকে ইরাক ও সৌদি আরবের জাতীয় বিস্কুট বলা হয়ে থাকে।  এই খাবারই দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন—সিরিয়ায় এর নাম মামুল এবং মিসরে কাহাক।

তুরস্ক : বাকলাভার রাজত্ব
তুরস্কে ঈদের প্রধান আকর্ষণ বাকলাভা।

পাতলা স্তরের ময়দার শিটের ভেতরে বাদাম আর সিরা দিয়ে বানানো এই খাবারটি মুখে দিলে মিষ্টির স্বর্গে পৌঁছে যাওয়ার অনুভূতি হয়। আর দোনের কাবাব? ওহ, সেটা এমন এক বিস্ময়কর খাবার, যা ঈদের দিন না খেলে আত্মার শান্তি পাওয়া কঠিন!

মিসর : ফাতার ঐতিহ্য
মিসরে ঈদের দিন ফাতা খাওয়া রীতিমতো ঐতিহ্য। এটি মূলত ভাত, মাংস আর রসুন-ভিনেগারের এক অদ্ভুত কিন্তু সুস্বাদু মিশ্রণ। আর মিষ্টির দিক দিয়ে বাসবোসা নামের এক ধরনের সুজির কেক খাওয়া হয়, যার ওপর এক প্রকার মধুর সিরা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া : রেন্ডাংয়ের শক্তিশালী উপস্থিতি
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ইদের সময় রেন্ডাং না থাকলে উৎসবই অসম্পূর্ণ মনে হয়। এটি গরুর মাংসের এক বিশেষ রান্না, যা মসলা আর নারকেল দুধে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। এ ছাড়া ‘কেটুপাট’ নামে পামগাছের পাতায় মোড়ানো চালের কেকও বিশেষ জনপ্রিয়। 

নাইজেরিয়া : সুয়া ও জোলফ রাইসের জয়জয়কার
নাইজেরিয়ায় ইদের দিন সুয়া নামের এক ধরণের মসলাদার গ্রিলড মাংস খাওয়া হয়। এর সঙ্গে জোলফ রাইস থাকে, যা দেখতে আমাদের বিরিয়ানির মতো হলেও স্বাদে বেশ আলাদা। এদের খাবারের ঝাল কিন্তু একদম চোখে পানি এনে দেওয়ার মতো!

মরক্কো : হারিরা স্যুপ ও মাখৌদা
মরক্কোতে ঈদের আগের দিন থেকেই হারিরা নামের এক ধরনের মসুর ডালের স্যুপ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। আর ঈদের দিন আলুর পাকোড়া বা মাখৌদা বেশ জনপ্রিয়। পকেটে যদি সালামির টাকা কম পড়ে, তাহলে এই স্যুপ আর পাকোড়া দিয়েই দিব্যি খুশি থাকা যায়!

রাশিয়া : মোমো বা ডাম্পলিংয়ের বাজিমাত
রাশিয়ায় ঈদের দিনে জনপ্রিয় খাবার মানতি। সহজ কথায় যাকে আমরা মোমো বা ডাম্পলিং বলি। মাখানো আটার পুটুলির মাঝে থাকে ভেড়া কিংবা গরুর মাংসের কিমার পুর। এরপর তা ভাপে সেদ্ধ করা হয়। মাখন আর ক্রিমের সঙ্গে এই ডাম্পলিং পরিবেশন করা হয়। তবে রাশিয়ায় অঞ্চলভেদে মানতির রেসিপি একেক রকম হয়ে থাকে। রাশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মুসলিম।

চীন : মুচমুচে শানজি
ঈদে আগে চীনে দেখা মেলে তাদের জনপ্রিয় খাবার ‘শানজি’। চীনে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখের মতো মুসলিমের বসবাস। নুডলস ও চর্বি দিয়ে বানানো হয় খাবারটি। মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের কাছে এই খাবার খুবই জনপ্রিয়। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই শানজিতে জমজমাট হয়ে ওঠে বাজার। ময়দার লেই দিয়ে মোটা করে নুডুলস বানিয়ে তা ভাজা হয় ডুবো তেলে। এরপর পিরামিডের মতো সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।

বসনিয়া : আপেলের তুফাহিজা
‘তুফাহিজা’ বসনিয়ার এতিহ্যবাহী এক খাবার। এই বিশেষ রেসিপিটি ঈদসহ বিশেষ দিনে বসনিয়ানরা তৈরি করে থাকেন। আপেল সিদ্ধ করে তৈরি করা হয় বিশেষ এই পদ। সিদ্ধ আপেলের মধ্যে আখরোট বাদামে ভরাট করা হয় এবং হুইপড ক্রিম দিয়ে উপরে সাজানো হয়।

বিশ্বের যেখানেই যান, ইদের খাবারের বৈচিত্র্য দেখলেই বোঝা ম যায়, এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং এটি এক বিশাল সাংস্কৃতিক মিলনও। সেমাই থেকে শুরু করে বাকলাভা, কবসা থেকে সুয়া—সব কিছুই এক অনন্য স্বাদের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, খাবারের আসল মজা তখনই আসে যখন সেটা সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়া যায়!

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আফ্রিকার দেশগুলোতে ঈদুল ফিতর উদযাপনের রীতি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আফ্রিকার দেশগুলোতে ঈদুল ফিতর উদযাপনের রীতি
৩০ মার্চ সেনেগালের রাজধানী ডাকারে একটি স্টেডিয়ামে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করছেন পুরুষরা। ছবি : এএফপি

আফ্রিকা মহাদেশে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম এবং ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ উৎসব। এই মহাদেশের দেশগুলোতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের কারণে ঈদ উদযাপনের রীতিতেও নানা ভিন্নতা দেখা যায়। এই প্রতিবেদনে আমরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপনের বৈচিত্র্যতা ও বিশেষ রীতিনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মিসর
মিসরে ঈদুল ফিতর অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালিত হয়।

ঈদের আগের রাতে বাজারগুলোতে ব্যাপক ভিড় হয় এবং পরিবারের সবাই নতুন পোশাক কেনে। ঈদের সকালে মসজিদে ও খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পরিবার ও বন্ধুরা একত্রিত হয় এবং বিশেষ খাবার, যেমন কাহক (মিষ্টি বিস্কুট), বিরিয়ানি, ও কুশারি (এক ধরনের মিশ্র খাবার) উপভোগ করে। শিশুরা উপহার ও অর্থ (‘ঈদিয়া’) পায়।

মরক্কো
মরক্কোতে ঈদুল ফিতর অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে নামাজের পর পুরুষরা সাধারণত স্থানীয় ক্যাফেতে গিয়ে কফি পান করে এবং মিষ্টি খাবার খায়। এরপর পরিবারের সবাই একত্রিত হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘রফিসা’ (মুরগির সঙ্গে রান্না করা মসলাদার খাবার) ও ‘সেবা’ (মিষ্টি স্ন্যাক) খাওয়া হয়।

আলজেরিয়া
আলজেরিয়ায় ঈদের দিন সকালে পরিবারের বড়রা শিশুদের হাতে উপহার ও টাকা দেয়।

ঈদের প্রধান খাবারের মধ্যে ‘মাচবোউস’ (মসলাদার চাল ও মাংস), ‘মাহজুব’ (ভর্তি করা রুটি) এবং মিষ্টি পেস্ট্রি ‘বাকলাভা’ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

তিউনিসিয়া
তিউনিসিয়ায় ঈদ বেশ ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপিত হয়। সকালে ঈদের নামাজ পড়ার পর পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার খায়। ঈদের বিশেষ খাবার হিসেবে ‘ব্রিক’ (ডিম ও মাংস ভরা পেস্ট্রি) এবং ‘মাকরুদ’ (মিষ্টি খেজুর ভর্তি কেক) খাওয়া হয়।

নাইজেরিয়া
নাইজেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং এখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী বিশাল।

বিশেষ করে উত্তর নাইজেরিয়ার কানো, কাদুনা, সোকটো ও বাউচি অঞ্চলে ইসলামিক সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। নাইজেরিয়ায় ঈদ ‘সাল্লাহ’ নামে পরিচিত। এটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করে, দরিদ্রদের মাঝে ফিতরা বিতরণ করা হয়।

নাইজেরিয়ায় ঈদের দিনে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে—জোলফ রাইস (মসলাদার টমেটোভিত্তিক বিশেষ ভাত) সুইয়া (সুস্বাদু গ্রিল করা মাংস), ফুফু ও এগুসি স্যুপ (ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান খাবার)।

সেনেগাল
সেনেগালে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৯০%। এখানে ঈদুল ফিতরকে ‘কোরিতে’ বলা হয়। মুসলমানরা নতুন পোশাক পরে মসজিদে নামাজ আদায় করে এবং আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যায়। ঈদের দিন সকালে বড় জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয় এবং দান-খয়রাত করা হয়। ঈদের খাবারের মধ্যে রয়েছে—চেবু জেন (এটি এক ধরনের মাছ ও ভাতের খাবার), ইয়াসা চিকেন (সুস্বাদু লেবু ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি মুরগির খাবার)।

মালি
মালিতে ঈদের আগে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয় এবং নতুন কাপড় কেনা হয়। ঈদের দিন সকালে মসজিদে নামাজ আদায়ের পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘তো’ (মজাদার খাবার) খাওয়া হয়।

ঘানা
ঘানায় ঈদ আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে বিশেষ জামাতে অংশ নেওয়া হয় এবং পরে মিষ্টান্ন ও স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। ‘ওকরা স্যুপ’ এবং ‘জোলফ রাইস’ ঈদের অন্যতম বিশেষ খাবার।

সোমালিয়া
সোমালিয়ায় ঈদ অত্যন্ত ধুমধাম করে উদযাপিত হয়। ঈদের দিনে শিশুদের নতুন পোশাক পরিয়ে বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো হয়। ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে ‘কেমিস’ (মিষ্টি রুটি), ‘বারিস ইস্কুকারিস’ (মসলাদার ভাত) এবং ‘হিলিব’ (ভেড়ার মাংস) জনপ্রিয়।

ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ার মুসলমানরা ঈদুল ফিতর অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে উদযাপন করে। সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয় এবং এরপর দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।

কেনিয়া
কেনিয়ায় ঈদের দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটানো হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে ঈদের বিশেষ কেনাকাটা করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘পিলাউ’ ও ‘চাপাটি’ পরিবেশন করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায় রয়েছে, বিশেষ করে কেপটাউনে, যেখানে কেপ মালয় মুসলমানরা বসবাস করেন। এই সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরা ১৭ ও ১৮ শতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আগত ছিলেন এবং তারা দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে তুলেছেন।

ঈদের আগের দিন মুসলমানরা নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন এবং বিশেষ খাবার প্রস্তুত করেন। ঈদের সকালে পরিবারের সবাই নতুন পোশাক পরে এবং ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় মসজিদ বা ঈদগাহে যান। কেপটাউনের বিখ্যাত ‘নূরুল ইসলাম মসজিদ’ এবং ‘জামিয়া মসজিদ’-এ বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঈদে কেপ মালয় খাবার জনপ্রিয়। কিছু বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে—বিরিয়ানি, বোবোটি (মাংস, ডিম এবং মসলা দিয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার), সামোসা এবং কোয়েকসিস্টার (মিষ্টি ও ঝাল নাশতা)।

এখানকার মুসুলমরা ঈদের নামাজের পর পরিবার ও বন্ধুরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। অনেক পরিবার দরিদ্রদের জন্য খাবার বিতরণ করে এবং ইসলামী দানের চর্চা করেন। ঈদের দিনে মুসলমানরা কবরস্থানে গিয়ে মৃত স্বজনদের জন্য দোয়া করেন।

মোজাম্বিক
মোজাম্বিকের মুসলমানরা প্রধানত সুন্নি মতাবলম্বী এবং দেশের বেশির ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এখানে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে মুসলিম সম্প্রদায় স্থানীয় মসজিদে বা খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়েন। রাজধানী মাপুতো ও অন্যান্য বড় শহরে বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের খাবারের মধ্যে প্রচলিত কিছু পদ— পেরি-পেরি চিকেন (সুস্বাদু মসলাযুক্ত মুরগির রেসিপি), সি ফুড ডিশ (সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি দিয়ে তৈরি খাবার), ম্যান্ডাজি (এক ধরণের মিষ্টি পিঠা)।

তানজানিয়া

তানজানিয়ায় ঈদের দিন সকালে বিশেষ নামাজের পর পরিবার ও বন্ধুরা একত্রিত হয়। জাঞ্জিবারের মুসলমানরা ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তানজানিয়ার জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জে ঈদ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়। এই দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আরব-আফ্রিকান সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামী উৎসবের সুন্দর সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।

ঈদের আগের রাতে রাস্তাগুলো আলো ও রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়। ছোটরা নতুন পোশাক পরে এবং পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটায়। জাঞ্জিবারে ঈদের দিন বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে নাচ, গান ও ঐতিহ্যবাহী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তানজানিয়ার ঈদ উদযাপনে জনপ্রিয় খাবারগুলো হলো—পিলাউ (মসলা ও মাংস দিয়ে তৈরি সুগন্ধি ভাত), নিয়ামা চোমা (গ্রিল করা মাংস), ম্যান্ডাজি (স্থানীয় মিষ্টি পিঠা)।

মাদাগাস্কার
মাদাগাস্কারের মুসলিম জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হলেও ঈদ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উদযাপিত হয়। বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় মুসলমানদের একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
মুসলমানরা ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যান। মাদাগাস্কারের মুসলিমরা একত্রে বড় পরিসরে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেন। জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের রেসিপি,
ভাত ও মাংসের তৈরি বিশেষ রান্না।

কমোরোস
কমোরোস দ্বীপপুঞ্জে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে ঈদ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের নামাজ আদায়ের পর বাড়িতে বড় পরিসরে ভোজের আয়োজন করা হয়।
তরুণরা নতুন পোশাক পরে এবং মসজিদে গিয়ে বড়দের আশীর্বাদ নেয়। এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে মাংস ও নারকেলের দুধের রান্না, ভাত ও মাছের তৈরি সুস্বাদু খাবার।

আফ্রিকার প্রতিটি দেশে ঈদুল ফিতরের উদযাপনের মধ্যে কিছু সাধারণ দিক যেমন নামাজ, দান-সদকা, খাবার এবং সামাজিক মিলনমেলা থাকলেও প্রতিটি দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে ঈদ উদযাপনের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সামাজিক সংহতি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিটি দেশে পালিত হয়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ