মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক আগে থেকেই খারাপ। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে দুই নেতার তীব্র বাগবিতণ্ডার পর তা আরো অবনতি হয়েছে। ট্রাম্প এরই মধ্যে জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, (রাশিয়ার সঙ্গে) যুদ্ধ শুরু করেছে ইউক্রেন। যদিও ট্রাম্পের এই বক্তব্য সঠিক নয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন জোট শুক্রবারের ঘটনার পর টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। এই ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আরো অনেক সন্দেহ বাড়বে এবং প্রশ্ন উঠবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৯ সালে ন্যাটোর সদস্য দেশের ওপর আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, উত্তরসূরি ট্রাম্প তা রক্ষা করবেন কি না, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। এই জোটের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৩০। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো সদস্য দেশের ওপর আক্রমণ করা হয়, তবে তা গোটা জোটের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং অন্য সদস্য দেশগুলো ভুক্তভোগীর দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের যে তীব্র আগ্রহ, তার ভিত্তিতেই এই উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছেন এবং পুতিনকে বড় ধরনের ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মূল্য ইউক্রেনীয়দের দিতে হবে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তার গুরুত্ব এখন কমে গেছে। একই সঙ্গে ইউরোপীয়রা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ছাড় দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। শুধু খনিজ সম্পদ চুক্তিতে জেলেনস্কি স্বাক্ষর না করায় এমনটা হয়েছে, তা নয়।
ইউক্রেনীয়দের বিশ্বাস, তারা নিজেদের অস্তিত্বের যুদ্ধে লিপ্ত—পুতিনকে ঠেকানো না গেলে তিনি যুদ্ধ অবসানের যেকোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। এ কারণেই জেলেনস্কি বারবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠকটি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের হস্তক্ষেপের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রকাশ্য বিতর্ক ছিল একটি রাজনৈতিক কৌশল। এক কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, এটি হয় জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছামতো কাজ করতে বাধ্য করার চেষ্টা অথবা এমন একটি সংকট তৈরি করা, যাতে পরবর্তী সময়ে যা কিছু ঘটবে, তার জন্য তাঁকে দোষারোপ করা যায়।
আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প যদি সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন, তা সত্ত্বেও ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কতটা কার্যকরভাবে এবং কত সময় তারা এটা করতে পারবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর কয়েক গুণ চাপ বাড়বে।
শুক্রবারের ঘটনার পর অবশ্য ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কির পাশেই দাঁড়িয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি পশ্চিমা মিত্ররা জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার বিষয়ে কিছু বলেননি তাঁরা।