অনেকের অলক্ষ্যে সৌদি আরবের মরুভূমিতে যা ঘটতে যাচ্ছে, তা স্মরণীয় হতে বাধ্য। মরুর নির্ফলা বালু পরিণত হচ্ছে উর্বর মাটিতে। আর এই কর্মযজ্ঞের পেছনে রয়েছেন একদল সৌদি নারী।
পরিবেশগত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা কিং আবদুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অখণ্ড মনোযোগে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের গবেষণায় নারীরা এভাবে এগিয়ে আসবেন, তা অনেকে ধারণাও করতে পারেনি।
নারী গবেষকরা দাবি করেছেন, এই মুহূর্তে সৌদি আরব তার টেকসইশীলতার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করেছে। ‘গ্রিন সাউদি ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বনায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও আবহাওয়া-সহিষ্ণু কৃষি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবনে দেশটি অঢেল অর্থ ঢালছে। কিন্তু এসব কাজে সৌদি নারীদের অবদানের বিষয়টি কাম্যভাবে উচ্চারিত হচ্ছে না।
পরিসংখ্যান বলছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতশাস্ত্রে যাঁরা এখন স্নাতক ডিগ্রি হাসিল করেছেন, তার ৪০ শতাংশই নারী, যারা দক্ষতার দিক থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সমতুল্য, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও রয়েছেন। বাইরের দুনিয়া বেখবর থাকার কারণে ধরে নিতে পারে, যুগের চাহিদা মেটাতে সৌদি নারীরা এখন সবেমাত্র ল্যাবে পা রাখছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সয়েল টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে ভূমিকে চাষোপযোগী করা, পানি সংরক্ষণ, টেকসই কৃষি ও জলবায়ু বিজ্ঞানের মতো সাড়া-জাগানো কৃষি প্রকল্পে সৌদি নারীরা এখন ক্রমবর্ধমান হারে প্রবেশ করছেন।
রিসার্চ ল্যাব বলুন, ইউনিভার্সিটি বলুন অথবা কর্মমুখী মাঠ পর্যায়ে বলুন, মরুভূমিকে উর্বর বানানো, পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনাকে উন্নতকরণসহ সবুজময় ভবিষ্যৎ নির্মাণের মতো নানা প্রকল্পে সৌদি নারীরা এখন অবিশ্বাস্য রকমের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সৌদি আরবের একটি বড় মাপের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মরুকরণ ঠেকিয়ে দেওয়া। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে উর্বর ভূমিও হারাচ্ছে উর্বরতা। মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প হাতে না নিলে এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য উদ্ভাবনী মেধার পাশপাশি দীর্ঘমেয়াদি কমিটমেন্টও জরুরি।
আশার কথা হচ্ছে, এসব চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পে নারীসমাজ এখন দ্বিধা ছাড়াই সাড়া দিচ্ছেন।
‘সৌদি ডেজার্ট কন্ট্রোল’ প্রকল্পের আওতায় সৌদি নারীরা এখন তরল প্রাকৃতিক কাদার সাহায্যে মরুর বালুকে মাটিতে পরিণত করছেন। এসব মাটির পানি ও পুষ্টি ধারণ ক্ষমতা যাতে বেশি থাকে, সেটাই নিশ্চিত করছেন নারীসমাজ। এই কর্মযজ্ঞে জুতসই প্রযুক্তির প্রায়োগিক নির্দেশনা দিচ্ছেন সৌদি নারী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। তাঁরা সরকারকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম রুক্ষ আবহাওয়ার দেশ হওয়া সত্ত্বেও সৌদি আরব অচিরেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্ষম হবে। সূত্র : অ্যারাব নিউজ