<p>[নবম-দশম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে ম্যানগ্রোভ বনের কথা উল্লেখ আছে]</p> <p>ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সমুদ্র-উপকূলবর্তী বন, যেখানে জোয়ারের সময় পানি উঠে এবং ভাটার সময় নেমে যায়। পৃথিবীব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ জাতীয় বন দেখা যায়। বিশ্বে ১,৮১,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বন ছিল; কিন্তু বর্তমানে এ বনের মোট আয়তন ১,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে। এখন পর্যন্ত ১০২টি দেশে এ বনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও শুধু ১০টি দেশে ৫০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি ম্যানগ্রোভ বন আছে।</p> <p>সাধারণত উপকূলের লবণাক্ত, কর্দমাক্ত ও আংশিক জলাবদ্ধ অঞ্চলে এই ম্যানগ্রোভ বনের সৃষ্টি হয়। লবণাক্ত মাটির কারণে এই বনের গাছগুলোর শিকড় বেশ ছড়ানো থাকে; কিন্তু মাটির গভীরে প্রবেশ করে না। এই বনভূমির সৃষ্টিতে জোয়ার-ভাটার প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে। পৃথিবীর সমগ্র ম্যানগ্রোভ বনের ৪৩ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও নাইজারে অবস্থিত। বাংলাদেশে অবস্থিত সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করে। এটি প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য হিসেবেও মনোনীত হয়।</p> <p>বাংলাদেশের সমুদ্র-উপকূলে সুন্দরবন ছাড়াও কক্সবাজারে মাতামুহুরী নদীর মোহনায় ম্যানগ্রোভ বন আছে, যা ‘চকোরিয়া সুন্দরবন’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণাংশেও একটি ম্যানগ্রোভ বন আছে।</p> <p>ম্যানগ্রোভ বন থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য ও সেবা পেয়ে থাকে। এ ধরনের বনে প্রধানত বৃক্ষ, বীরুৎ, গুল্ম এবং সামান্য পরিমাণে পাম ও লতাজাতীয় উদ্ভিদ থাকে। দি ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়নের (আইইউসিএন) হিসাব মতে, পৃথিবীতে ম্যানগ্রোভ গাছের মোট ৬১টি প্রজাতি আছে। সুন্দরবনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, পশুর, বাইন, কাঁকড়া ইত্যাদিসহ ১০০টিরও বেশি প্রজাতির গাছ জন্মায়। এর মধ্যে অন্তত ২৮টি গাছ সত্যিকারের ম্যানগ্রোভ। ম্যানগ্রোভ বনে জোয়ার-ভাটার টানে গাছের বীজ ভেসে যায় বলে গাছে থাকা অবস্থায়ই বেশির ভাগ বীজের অঙ্কুরোদগম হয়।</p> <p style="text-align: right;">              <strong>- ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</strong></p>