<div> বাঙালি ছাড়াও এ দেশে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে প্রায় ৭০টি ক্ষুদ্রজাতির প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও ঐতিহ্য। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে তারাও সমান অংশীদার। একুশের গৌরবের পথচলায় বাংলা ভাষা ছাড়াও ক্ষুদ্রজাতির নিজস্ব ভাষাতেই হচ্ছে লেখাপড়া, সাহিত্য নির্মাণ, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা। আর এখন ইন্টারনেটভিত্তিক মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া [wikipedia.org], সংক্ষেপে উইকিতে যোগ হয়েছে ক্ষুদ্রজাতির ভাষা। সমগ্র উইকিপিডিয়ার মোট ২৮৫টি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে এ দেশের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, সাঁওতালি ও চাকমা ভাষা। তবে এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে সাঁওতালি ও চাকমা ভাষার উইকিপিডিয়া নির্মাণ উদ্যোগ।</div> <div> নির্মাতাদের সূত্রে জানা গেছে, উইকিপিডিয়া হলো জনমানুষের হাতে তৈরি সাধারণের জন্য লেখা বিশ্বকোষ। বাংলাদেশের ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ছাড়া কেবল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ উইকি। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি উইকি নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালে। পরের তিন বছর পর্যন্ত এর অগ্রগতি ছিল অনেকটাই সাবলীল। কাজটি একাই অনেকটা এগিয়ে নেন নিউ ইয়র্কপ্রবাসী উত্তম সিংহ। তবে স্বেচ্ছাশ্রমে সমষ্টিগত অবদানকারীর অভাবে ২০০৯ সাল থেকে ধীর হয়ে পড়ে এর কার্যক্রম।</div> <div> এরপর সাঁওতালি ও চাকমা ভাষায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় উইকি। ২০০৮ সালে সাঁওতালি উইকি শুরু হলেও একইভাবে উদ্যোগের অভাবে এটি তেমন এগোতে পারছে না। এর নিবন্ধ সংখ্যা মাত্র ১০-১২। অন্যদিকে রাঙামাটির তরুণ কম্পিউটার প্রকৌশলী জ্যোতি চাকমা ও বেসরকারি কর্মকর্তা সুজ মরিজ চাকমা টানা এক বছর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১২ সালে চাকমা লিপির ইউনিকোড ফন্ট ‘রিবেং ইউনি’ উদ্ভাবন করেন। তাঁদের নির্মিত [uni.hilledu.com] ওয়েবসাইটটি থেকে চাকমা ইউনিকোড ফন্ট ও অভ্র কি-বোর্ড লে-আউট সফটওয়্যার বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়। সেখানে দেওয়া আছে ‘রিবেং ইউনি’ ফন্ট ব্যবহারের নির্দেশাবলিও। গত বছরজুড়ে চাকমাভাষী অল্প কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর উদ্যোগে এগিয়ে চলে চাকমা ভাষায় উইকি নির্মাণকাজ। ১৫-১৬টি নিবন্ধ তৈরির পর এটির কাজও খানিকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এটিও হাজার হাজার নিবন্ধ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ উইকি হওয়ার অপেক্ষায়। </div> <div> বাংলা উইকির অন্যতম উদ্যোক্তা ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, উইকিপিডিয়ায় অনেক ক্ষুদ্র ভাষায় বিশ্বকোষ আছে। এমনকি এমন অনেক ইউরোপীয় ভাষা আছে, যার ভাষাভাষীর সংখ্যা সাঁওতালি বা চাকমা ভাষার চেয়েও অনেক কম। তাই উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন এ রকম ক্ষুদ্রতর ভাষার বিশ্বকোষ বিকাশের ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে।</div> <div> উইকিপিডিয়ান রাগিব হাসান বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশের প্রতিটি ভাষায় তথ্যের ভাণ্ডার গড়ে উঠবে। আর ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের এনে দেবে আরেক সমৃদ্ধ একুশ। সাঁওতালি ও চাকমা ভাষার উইকিপিডিয়ার বাস্তবায়ন হয়ে উঠুক এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ।’</div> <div> সাঁওতালি ও চাকমা ভাষায় উইকি নির্মাণে পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন উইকিমিডিয়ার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কোষাধ্যক্ষ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য আলী হায়দার খান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রজাতির ভাষাগুলোয় উইকিপিডিয়া তৈরিতে মূল বাধা হলো শিক্ষার ক্ষেত্রে এসব ভাষার চর্চা তেমন হয় না। এসব ভাষায় প্রকাশিত বইপুস্তকও খুব কম। এ ছাড়া ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহারও সীমিত। ফলে উইকিপিডিয়ায় অবদান রাখতে পারেন এমন স্বেচ্ছাসেবী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।</div> <div> আলী হায়দার খান আরো বলেন, ‘সারা বিশ্বে ছোট ছোট ভাষা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হতে যাওয়া এসব ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে উইকিপিডিয়াকে বিবেচনা করা হচ্ছে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে। উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে আমরাও বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষাগুলোর চর্চা সচল রাখতে পারি।’ </div> <div> চাকমা ভাষার উইকি নির্মাতা জ্যোতি চাকমা কালের কণ্ঠকে জানান, গত বছর চাকমা উইকিপিডিয়ার কাজ শুরু করেও কর্মশালা করতে না পারায় এ কাজ তেমন এগোতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে চাকমা ভাষার উইকি নির্মাণে চাই এক দল নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।</div>