<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম গ্রন্থ আল-কোরআন। হাজার বছর যাবৎ তা মুসলিমরা পাঠ করে আসছে। এটি পাঠ করা হয় বাড়িঘরে ও মসজিদে, অবসরে যেকোনো স্থানে। কোরআনের আধ্যাত্মিক শিক্ষা মানুষকে সুপথে পরিচালিত করে, কিন্তু বধিররা এই আলো থেকে বঞ্চিতই থেকে গেছে। তারা এত দিন সরাসরি কোরআনের অর্থ ও মর্ম দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি। কুর্দি শিক্ষাবিদ ইজ্জুদ্দিন হামিদ বধিরদের জন্য কোরআন শেখার বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তিনি প্রথমবারের মতো বধিরদের উপযোগী ইশারা ভাষায় (সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ) কোরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেছেন। ঐতিহাসিক এই অর্জন বধির সমাজকে পবিত্র কোরআন শেখার সুযোগ করে দেবে, যা তারা এত দিন কল্পনাও করতে পারেনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিক্ষাবিদ ইজ্জুদ্দিন হামিদ ১৯৭৮ সালে ইরাকি কুর্দিস্তানের ইরবিলে জন্মগ্রহণ করেন। বধির সমাজের সঙ্গে তাঁর গভীর যোগাযোগ আছে। তাঁর পরিবারের তিনজন সদস্য বধির। এই বাস্তবতা তাঁর জীবন ও কর্মকে প্রভাবিত করেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বধিরদের শিক্ষক ও অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি স্থানীয় জুমার খুতবা ইশারা ভাষায় ব্যাখ্যা করতেন। এই কাজগুলোর অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বধির সমাজের দ্বিন শেখার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, আমি অনুভব করছিলাম বধিররা কোরআন পাঠ থেকে বঞ্চিত। আরবি বর্ণমালা ব্যবহার করে বধির শিক্ষার্থীদের কোরআন শেখানো দুঃসাধ্য কাজ ছিল। ইশারা ভাষা ছাড়া তাদের কাছে কোরআনের শব্দগুলো দুর্বোধ্য থেকে যেত।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সমাধান খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখলেন কোনো কোনো আরব দেশে ছোট ছোট সুরা ইশারা ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে। তবে কেউ পূর্ণাঙ্গ কোরআনের ভাষান্তর করেনি। হামিদ এই শূন্যতা পূরণের অঙ্গীকার করেন এবং একটি বিস্তৃত ইশারা ভাষা সৃষ্টি করলেন; যেন বধিররা সরাসরি কোরআন শিখতে পারে। এই কাজ শেষ করতে তাঁর দুই বছর সময় লেগেছে। এ সময়ে তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কোরআনের প্রতিটি আয়াতকে একটি দৃশ্যমান বিন্যাসে রূপান্তরিত করেন। ধর্মতাত্ত্বিক জটিল বিষয়গুলো ধারণ করতে সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গিসহ ইশারা ভাষার প্রয়োজন ছিল। পাশাপাশি বধিরদের ভাষাগত চাহিদাগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা আবশ্যক ছিল, যা হামিদ অনুবাদক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করেছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অল্প দিনের মধ্যে হামিদের প্রচেষ্টাকে মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) ওয়াকফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি পর্ষদ, যার মধ্যে মুসলিম পণ্ডিত ও বধির সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন তাঁর কাজ পর্যালোচনা করে দেখেন। তাঁরা তাঁর কাজের বিশুদ্ধতা ও উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন। হামিদের এই স্মরণীয় কাজের জন্য কুর্দিস্তান স্কলারস ইউনিয়ন তাঁকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য মনোনীত করার প্রস্তাব দেয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেআরজির ওয়াকফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাবাজ ইসমাইল বলেন, কুর্দি অঞ্চলের একটি উচ্চতর ফাতাওয়া কমিটি পূর্ণ অনুসন্ধানের পর (হামিদের) অনুবাদের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা হামিদ ও তাঁর কাজের প্রশংসা করছি। এটা বধির সমাজকে কোরআন শেখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বধির ব্যক্তিরা আস্থার সঙ্গে কোরআন শিখতে পারবে; কেননা এই সংস্করণটি বিশুদ্ধ ও সহজলভ্য।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যদিও হামিদের এই অনুবাদ একটি বিশাল অর্জন। তবু বধিরদের কোরআন শেখার ক্ষেত্রে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা থেকে গেছে। কেননা ইশারা ভাষা</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিপূর্ণরূপে কোরআন বোঝার নিশ্চয়তা দেয় না। এ জন্য অনুবাদক ও শিক্ষাবিদরা পরিপূর্ণ নির্দেশনা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আমাঝাহ অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের শিক্ষক গুলজার আবদুল্লাহ বলেন, এটা ভালো কাজ। তবে শিক্ষক পরিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে না দিলে বধিরদের জন্য কোরআন বোঝা দুষ্কর। এ জন্য প্রশিক্ষণ, কর্মশালাসহ আরো শিক্ষামূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হামিদের এই প্রচেষ্টার সুফল পেতে শুরু করেছে কুর্দিস্তানের বধির সমাজ। কুর্দিস্তানে তাদের সংখ্যা আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার। তারা প্রথমবারের মতো সরাসরি কোরআন শেখার সুযোগ পেয়েছে। হামিদ বলেন, যখন বধিররা তাদের অনুলিপি হাতে পেয়েছিল তাদের অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল। যেন হঠাৎ তাদের ঘর আলোকিত হয়েছে এবং তারা অন্তরে আলো অনুভব করতে পারছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি চান বধিরদের কোরআন শেখার এই আয়োজন কুর্দিস্তানের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ুক। সারা বিশ্বের বধিররা কোরআন শেখার সুযোগ পাক। তাই তিনি তাঁর অনূদিত কোরআনের অনূলিপি যদি কেউ প্রকাশ করতে চান তার অনুমতি দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, আমি কেবল আল্লাহর কাছেই প্রতিদান চাই। অন্য কারো কাছে নয়।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নিউ আরব ডটকম অবলম্বনে</span></span></span></strong></span></span></p>