সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড়
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণ ঘটনা নিয়ে এখন বিস্তর লেখালেখি চলছে সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুক ও ব্লগগুলোয়। ওই অপহরণ ঘটনাকে অনেকে ‘নাটক’ মন্তব্য করেছেন।রিজওয়ানা হাসান ও বেলার কর্মকাণ্ডের অস্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অনেকে আবার রিজওয়ানার ‘যুদ্ধাপরাধী পিতার’ কথা তুলেছেন।
তবে কেউ কেউ এ ধরনের আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়েও লিখেছেন।
ব্লগার অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন, ‘এই সৈয়দা রিজওয়ানা কে? খুবই ঘোড়েল আদমি মানতেই হবে। কেমন অবলীলায় বলে দিলেন, স্বামীর মুক্তির জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তার মানে হলো, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সব গুম হওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে দিতে পারেন।
আরো গভীর মানে করেছেন ভারে আক্রান্ত ফখরুল। তিনি বলেছেন, একই ব্যক্তি জনাব ইলিয়াস সাহেবকে অপহরণ করেছেন (অর্থাৎ, ম্যাডাম রিজওয়ানার সূত্র ধরে তিনি বলতে চেয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী এসব গুমের ব্যবসা করছেন)।’
ব্লগার ও সাংবাদিক আবু সুফিয়ান লিখেছেন, ‘প্রসঙ্গ : আবু বকর অপহরণ’। অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পুলিশ চেকপোস্টে সিএনজিচালিত গাড়ি থামিয়ে উদ্ধার করা হয় আবু বকরকে।
প্রশ্ন : অপহরণের ৩৫ ঘণ্টার মধ্য কোনো চেকপোস্টেই (ঢাকা বা ঢাকার বাইরে) অপহরণকারীদের ধরা গেল না কোন কারণে? তারা তো সড়কপথেই মুভ করেছে!
টিভি উপস্থাপক আব্দুন নূর তুষার লিখেছেন, ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে চা খেতে রাজি আছেন কে কে? এই পুরো ডামাডোলে পেট্রল পাম্পটির ফ্রি কাভারেজের দাম কয়েক কোটি টাকা! আসেন দেশের খারাপ লোকগুলাকে ওই খানে মেজবানি দাওয়াত দিই! মাইক্রো ভাইদের ও! তবে যদি দেশে শান্তি আসে!
বেলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল-গাস কম্পানি শেভরনের সম্পর্ক নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।
লেখক অদিতী ফাল্গুনি লিখেছেন, রিজওয়ানার পিতার যুদ্ধাপরাধ বা তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ৯০ বছরের গ্রাম্য বৃদ্ধাকে ভিজিএফ কার্ড না দেবার তথ্যগুলো ভুল বা মিথ্যে গুজব? দেশের সর্বাধিক প্রচারিত তিনটি দৈনিকের একটি ‘কালের কণ্ঠ’-এ লাউয়াছড়ায় শেভরনকে অনুমোদন করা ‘বেলা’র দেশবিরোধী অবস্থানের রিপোর্ট ভুল? প্রতিবেদক আরিফুজ্জামান তুহিন, যিনি নিজে বাম ছাত্ররাজনীতি করেছেন দীর্ঘদিন ধরে, তিনি মিথ্যেবাদী ও গুজব ছড়াচ্ছেন? একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার সাইফুল হক অমিও মিথ্যেবাদী যিনি ‘বেলা’র জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিরুদ্ধে ‘বেলা’র ঘোষিত অ্যাক্টিভিজমের ফাঁক-ফোকর জানতে পেরেছেন?’
অদীতি ফাল্গুনী আরো লিখেছেন : যাক, দয়ালু অপহরণকারীরা তিন শ টাকা সিএনজি ভাড়া সহযোগে অপহৃতকে ধানমণ্ডি মাঠের পাশে পৌঁছে দেওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। গতকালের ‘পাপের বোঝা’ কি আমার কিছু কমল? আহা, এই ঢাকায় সিএনজি ভাড়া গুনতে বা গাড়ির সিএনজি গ্যাসের দাম দিতেই যে সব ফুরিয়ে যায়! কেউ যদি দিত আমায় এমন তিন শটি টাকা! জানি হয়তো আবার চেঁচামেচি, গালির তোড়ের ভেতর পড়ব। ঝেড়ে কাশি... গতকাল যেকোনো কারণেই হোক মনের ভেতর কোনো ‘কুডাক’ পাইনি। কেন জানি মনে হচ্ছিল সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী খুব দ্রুতই উদ্ধার হবেন।
ইলিয়াস আলীর হাল হবে বলে একেবারেই মনে হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১১ জুলাই ‘পরিবেশ ধ্বংসে বেলা, লাউয়াছড়ায় শেভরনকে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া হয়’ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বেলার সঙ্গে শেভরনের সম্পর্কের বিষয় বিস্তারিত বলা হয়। এ প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে সচেতন মানুষ প্রশ্ন তোলেন, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠন কিভাবে পরিবেশ ধ্বংসের পক্ষে কাজ করে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, বেলা শেভরনের স্বার্থে কাজ করে। শেভরন ও বেলার জয়েন্ট ভেঞ্চার আগ্রাসনে দেশের লাউয়াছড়া নামে যে একটি বন আছে সেটা ধ্বংসের মুখে। কিভাবে সেটা নিচের প্রতিবেদনে বিস্তারিত আছে। এ বিষয় অধম দুই কিস্তি রিপোর্ট লিখেছিল। এবার কিন্তু আপনার ৭১-প্রেম নিশ্চুপ হয়ে যাবে। কারণ শেভরন মানে আমেরিকা। কয়েক দিন আগে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ড্যান মজিনা বলেছেন, ‘শেভরনের জন্য আরো বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করুন। এখন তো আপনার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতায় নামতে হবে। আপনার দেশপ্রেম কিন্তু এবার ঝেড়ে শুধু পালাবেই না বরং বিড়ালের মতো মিহি গান তৈরি করবে। কারণ আপনি চান শুধু রাজাকার ইস্যুতে থাকতে, ওটাতে আপনার সুবিধা বেশি।’
সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে ৪০ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। সে সময় দেশের কোনো পরিবেশবাদী সংগঠন এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি। এ বিষয়ে তুহিন লিখেছেন, ‘জামায়াত-শিবির অবরোধের নামে দেশের ৪০ হাজার গাছের জীবন নিয়ে নেয়। আমাদের মহান পরিবেশবাদীরা তখন কোথায় ছিলেন তা যদি জানতে চাই তাহলে নিশ্চয় আমি আওয়ামী লীগ হয়ে যাব না। দুই মিনিটে ১০ বছরের বেড়ে ওঠা গাছের এমন প্রাণ ঝরে যাওয়াতে আমি কোনো কবিকেও আফসোস করে দুই লাইন লিখতে দেখিনি।’
‘মহামান্য কহেন’ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী পিতা ও তাঁর সন্তান রিজওয়ানা হাসান সম্পর্কে লিখেছেন, ‘এই রাজাকারের বাচ্চা একাত্তরে নির্দোষ মানুষ হত্যা করেছে, নারীদের তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি জানোয়ারদের ক্যাম্পে। এর জন্য কি এই নারী একবার অনুতাপ প্রকাশ করেছেন? পেছন ফিরে যা দেখলাম জামায়াত-শিবির-হেফাজত যখন হাজার হাজার গাছ কাটল পরিবেশ চাঁদ-তারার পেছনে গিয়ে লুইকাইছিল। আল্লাহ না করুক এমন খারাপ দিন আমারও আসতে পারে। আমি এমন রাজাকারের পরিবারের কারো ব্যাপারে আহা-উহু করতে রাজি না, তেমন আল্লাহ না করুক আমার এমন খারাপ দিন এলে কোনো রাজাকারের ছানাপোনা আহা-উহু করুক, তাও চাই না। রাজাকারের ছানাপোনাদের ব্যাপারে আমার মানবতা ঘুমায়।’
যুদ্ধাপরাধের এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক নাজমুল হক তপন লিখেছেন, ‘একটা সহজ থিওরি.... বাংলাদেশে রাজাকার পরিবারের লোকজনদের তেমন কোনো বিপদ হয় না। বেশির ভাগ সময়ই অন্যায়-অবিচার আর অত্যাচারের শিকার হয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজনরা!’
ইস্টিশন ব্লগে সুমিত চৌধুরী ‘যুদ্ধাপরাধী বাবার পরিবেশবাদী কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান’ শীর্ষক শিরোনামে এক লেখায় বলেছেন, ‘বাবা যুদ্ধাপরাধী, আত্মগোপনে থাকা প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাজাকার সৈয়দ মহিবুল হাসান। কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবাদী হয়েও বাবার ’৭১-এর অন্ধকার জীবনের ছায়ায় হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের ইতিহাস আড়াল করেই ঢাকায় ওঠাবসা করেন সুশীলদের সঙ্গে। ওপরতলার মানুষের সঙ্গেই চলেন-ফেরেন। টিভি টক শোয় বড় বড় কথা বলেন পরিবেশ রক্ষার নামে। সেমিনার, গোলটেবিলে আকর্ষণীয় এই বেলার সুন্দরী নেত্রী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। বলেন না শুধু, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট-বাহুবলের কুখ্যাত রাজাকার তাঁর বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসানের কলঙ্কিত জীবনের কথা। একাত্তরে নিজ এলাকার ত্রাস, পরিবেশ দূষণকারী মহিবুল হাসান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হওয়ায় স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে চলে যান। যুদ্ধাপরাধের মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে তিনি বের হন। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপির এমপি-মন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাপায় যোগ দিয়ে আবার ‘৯০-এর পতনে আত্মগোপনে চলে যান। ভাতিজা সৈয়দ লিয়াকত হাসান এখন চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এলাকায় মাঝেমধ্যে গোপনে যাওয়া-আসা করেন।’
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ