পুলিশ টেলিকমের অধীনে গত আট বছরে ৪২ বার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিবারই এতে ঘুরেফিরে অংশ নিয়েছে তিনটি প্রতিষ্ঠান। ৪১ বার কাজ পেয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মদদপুষ্ট ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেলোয়ারের তিন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রতিষ্ঠান পুলিশ টেলিকমে সরবরাহ করেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার পণ্য।
পুলিশ টেলিকমেও বেনজীরের ‘ভূত’
হায়দার আলী ও জয়নাল আবেদীন

অনুসন্ধান বলছে, পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশ টেলিকমে দেলোয়ারের উত্থান ২০১৫ সালে। পুলিশ, র্যাবসহ নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন ‘রাঘব বোয়াল’। সে বছর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে বেনজীর একের পর এক কাজ পাইয়ে দেন দেলোয়ারকে।
এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতির ছোবল সবচেয়ে বেশি পড়েছে সীমলেস ওয়্যারলেস বা ওয়াকিটকির ওপর। পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর নিত্যব্যবহার্য যন্ত্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য মিলছে।
তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিম্নমানের ওয়াকিটকির ফ্রিকোয়েন্স হ্যাক করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এর মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে বিনিময়কৃত তথ্য খুব সহজেই ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতি সম্প্রতি দেশে পুলিশের ওয়াকিটকির তথ্য ফাঁস হওয়ার নজিরও রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব পণ্য কেনাকাটায় অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান বা এপিপি বাজেটের চেয়েও বেশি দাম দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেডের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়। গত সপ্তাহে পুলিশ টেলিকমের টেন্ডারবিষয়ক সব নথি চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত আট বছরে রেডিও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করেছে পুলিশ টেলিকম। যদিও এই যন্ত্রাংশ কেনাকাটার প্রবণতা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে শুরু করে ২০২১ সালে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালে সব মিলিয়ে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করে পুলিশ টেলিকম। কিন্তু পরের বছর তা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এক লাফে উঠে যায় ৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। হঠাৎ কেন যন্ত্রাংশের চাহিদা এতটা বেড়ে যায়, এর নেপথ্যে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদকে রংপুর মেট্রোপলিটনে বদলি করেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এর ঠিক পাঁচ মাস পর পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় পুলিশ টেলিকমে নিয়ে আসেন আনোয়ার জাহিদকে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নতুন দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। পুলিশ টেলিকমের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ঠিকাদার দেলোয়ারকে অবৈধভাবে সুবিধা দিতে আনোয়ার জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে নিজের সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন বেনজীর।
আট বছর ধরে ঘুরেফিরে তিন প্রতিষ্ঠান
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেনের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের একটি সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট রয়েছে। এখানে ঢু মেরে দেখা গেল, বাংলাদেশ পুলিশ, এনএসআই, এসএসএফ, র্যাবসহ ২২টি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় তারা পরিষেবা দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ৬৩টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বলা হয়েছে, বাড়ি নম্বর ১২৪৭, সড়ক নম্বর ১০, মিরপুর ডিওএইচএস। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ১০৬/২ বারনটেক, ঢাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ টেলিকমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনার কাজে যে টেন্ডার প্রদান করা হয় তার প্রায় সবটাতেই অংশ নিয়েছে মেসার্স পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি, এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেড এবং মেসার্স এআরবি ট্রেডার্স। তবে অবাক করা বিষয় হলো, তিনটি প্রতিষ্ঠানই কোনো না কোনোভাবে দেলোয়ার হোসেনের নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি ও এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক দেলোয়ার হোসেন নিজেই। আর অন্যটি তাঁর সন্তান মো. খালেদ হোসেনের। তবে তিনটি প্রতিষ্ঠান একই ঠিকানা ব্যবহার করেছে।
২০২১ সালের পর থেকে পুলিশ টেলিকমের টেন্ডারের এই তিনটির বাইরে অন্য কেউ অংশ নিতেই পারেনি। আর এখান থেকে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুলিশ টেলিকমে দেলোয়ারের মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার পেয়েছে মোট ৪১ বার। ভুঁইফোড় ওই কম্পানিগুলোর আড়ালে বেনজীরসহ পুলিশ টেলিকমে তাঁর নিযুক্ত কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও সামনে থাকেন দেলোয়ার হোসেন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এ পর্যন্ত দেলোয়ারের প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ ডলার বা ৬০০ কোটির বেশি টাকার যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করেছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মটরোলা ওয়্যারলেসের মতো অন্যান্য রেডিওসংক্রান্ত যন্ত্রাংশের দামও দেখানো হয় অস্বাভাবিক। অনুসন্ধানে জানা যায়, রেডিও যন্ত্রাংশের মূল প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে দেলোয়ার হোসেন মালয়েশিয়ার একটি ভুঁইফোড় ডিলারের কাছ থেকে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করেছেন। যদিও মূল কম্পানি আমেরিকা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মটরোলার মালয়েশিয়ায় কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাই নেই।
এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি ঢাকতে সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিআই লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সামনে এনেছেন চতুর দেলোয়ার। পুলিশ টেলিকমকে দেলোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠান এমডিএম সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের সহযোগী হিসেবে দেখিয়েছেন। ফলে দেখা যায়, যে মানের ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও যন্ত্রাংশ আমদানি করার কথা, মালয়েশিয়ার লোকাল মার্কেট থেকে তার চেয়েও নিম্নমানের নকল পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
এদিকে জানা যায়, চলতি বছরে পুলিশের ‘রেডিও ডিভাইস’ কেনার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া একটি আবেদনের বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই আবেদনে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২ আগস্ট পুলিশ টেলিকম সংস্থা বাংলাদেশ পুলিশের রেডিও ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ কেনার জন্য দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিই লিমিটেড, চীনের হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেড ও চীনের কালটা টেকনোলজিস কম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করতে না পারায় শুধু হাইটেরা কমিউনিকেশনস টিকে থাকে। এরপর পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগার কথা থাকলেও ৭০ থেকে ৭৫ দিনেও দরপত্র নিষ্পত্তি করা হয়নি।
পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শর্ত পূরণ করতে পারেনি এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে রি-টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানিয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদন করে হাইটেরা কমিউনিকেশনস করপোরেশন লিমিটেড। তবে দীর্ঘদিনেও সেটি নিষ্পত্তি না করায় পরে কম্পানিটি হাইকোর্টে রিট করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হাইটেরা কমিউনিকেশনসের চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ টেলিকম সংস্থার একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী ‘সিঙ্গাপুরের টেকনিক্স কমিউনিকেশনস অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস পিটিই লিমিটেডের’ স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন রেডিও ডিভাইস সরবরাহ করে আসছে।
এদিকে টেন্ডার নিয়ে আগের জটিলতা নিরসনে হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ থাকলেও দেলোয়ারকে কাজ পাইয়ে দিতে নিয়ম অমান্য করে পুলিশ টেলিকমের সেই অসাধু কর্মকর্তারা আহবান করেছেন নতুন দরপত্র। সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের নেপথ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন। সম্প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের সরবরাহ করা মালপত্রের গুণগত মানও নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে রেডিও ডিভাইস এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পিঠ বাঁচাতে দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হস্তান্তর
যৌথমূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধিত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নথি কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের নিবন্ধন হয় ২০১৫ সালের ১১ মে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে দেলোয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এটি দেলোয়ারের মূল প্রতিষ্ঠান, যা ২০১৫ সাল থেকে একচ্ছত্রভাবে পুলিশ টেলিকমের কাজ পেয়ে আসছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেনজীরের অপকর্ম প্রকাশ হলে নিজের পিঠ বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের সম্পৃক্ততা মুছে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে এখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন দেলোয়ার। তাঁর ছেলে খালিদ হোসেন মেসার্স এ আরবি ট্রেডার্সের মালিকানার ৫০ শতাংশের অংশীদার। বাকি ৫০ শতাংশের মালিক মনিরুল ইসলাম। তাঁদের এই যৌথ প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। চলতি বছরের ১৫ মে গেজেটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২ মার্চ নিজের ৫০ শতাংশ শেয়ার আসমা-উল-হুসনার কাছে হস্তান্তর করেন খালিদ। এই আসমা হলেন মনিরুলের মেয়ে।
অন্য প্রতিষ্ঠান পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজিতেও দেলোয়ারের মালিকানার প্রমাণ মেলে যৌথমূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথিতে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ছয়জন অংশীদারের মধ্যে দুই নম্বরে দেলোয়ার এবং ছয় নম্বরে তাঁর ছেলে খালিদের নাম। তাঁরা দুজন সমান সাড়ে ১২ শতাংশ করে ২৫ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। এ প্রতিষ্ঠান থেকেও কৌশলে নিজেদের নাম সরিয়ে দেন দেলোয়ার। গত ১৫ মে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।
তবে সূত্র জানিয়েছে, পিঠ বাঁচাতে মালিকানা হস্তান্তর করলেও আদতে দেলোয়ারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। ২০১৫ সাল থেকেই তিনটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পুলিশ টেলিকমের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে আসছে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে টেন্ডারে অংশ নিত। পরে আনোয়ার জাহিদ পুলিশ টেলিকমে নিযুক্ত হওয়ার আগাম সংবাদ পেয়ে ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে দুটি প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিয়মের বাইরে গিয়ে টেন্ডার পাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন এমডিএম ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে পার্ল এভিওনিক্স টেকনোলজি এবং এআরবি ট্রেডার্স নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকে তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেন। তবে পুলিশ টেলিকমে রেডিও যন্ত্রাংশ কেনাকাটার টেন্ডার টানা ৯ বছর ধরে শুধু তাঁর প্রতিষ্ঠান কিভাবে পাচ্ছে—এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি। এ বিষয়ে পুলিশ টেলিকমকে জিজ্ঞাসা করতে বলেন তিনি। একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদের সঙ্গে তাঁর কোনো পরিচয় নেই বলেও দাবি করেন দেলোয়ার।
পুলিশ টেলিকমের পাশাপাশি ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসএসএফে লোকাল এজেন্ট হিসেবে রেডিও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছেন জানিয়ে দেলোয়ার জানান, সেই সূত্র ধরে পুলিশ টেলিকমের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা এসপি আনোয়ার জাহিদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব আবেদন গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ছিল বলে সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী ছিলেন তিনি।
গত বছর ১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাঁদের সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
খালাসের এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপিল করা উচিত’ বলে সেদিন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

সংস্কারে এখনো লিখিত মতামত দেয়নি বিএনপিসহ বড় দলগুলো
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু আজ
নিখিল ভদ্র

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। লিখিত মতামত পাওয়ার পর অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে কমিশন। তবে এখনো বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে লিখিত মতামত জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপে প্রথম দিনে অংশ নেবে এলডিপি। আগামী শনিবার দুটি এবং রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে। পর্যায়ক্রমে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আমাদের পার্টি ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে মতামত দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে কমিশনকে জানিয়েছি।’ জোটগতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর বিষয়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো হবে।’
সূত্র মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। তারা সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশগুলো ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ওই ছকগুলো গত ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি দল নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯। কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে সাতটি দল মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে আরো আটটি দল মতামত জমা দিয়েছে। অন্যরা অতিরিক্ত সময় নিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। এ পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া ১৫টি দল হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

অর্থ উপেদষ্টা
দেশীয় শিল্প সুরক্ষার বাজেট দেওয়া হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের শীর্ষ নির্বাহীরা। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বক্তব্যের কলেবর কমানো, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নির্ভুল ডাটা-পরিসংখ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাজেট দিয়ে যেতে চাই যেটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার যে-ই আসুক, যেন ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে, আমরা সেভাবেই একটি বাজেট দিতে চাই। আগামী বাজেটে আমরা প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছি না, বরং আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছি। আমরা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার একটি বাজেট দিতে চাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনমুুখিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সামনেই তো নির্বাচন। আর জুনে নতুন বাজেট। ফলে আপনারা যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন সেটা পরবর্তী সরকারের জন্য কতটা সহায়ক হবে?’ যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে আপনি সফল হয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ আপনি পেতেই পারেন। আগামী বাজেট সত্যিই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘একটি অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয় সে হিসাবটা কখনো আমরা পাইনি। এবার আপনারা সে হিসাব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ১৫ বছরে গণমানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। আপনারা একটা মেকানিজম করে এই হিসাবটা বের করুন যে এক অর্থবছরে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। সবখানে সংস্কার হচ্ছে, আপনারা বাজেট বত্তৃদ্ধতার আকারে সংস্কার আনুন। ঢাউস আকৃতির বাজেট বত্তৃদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে আনুন। বাস্তবমুখী বাজেট দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে বাজেট দেওয়া হতো সেটা ছিল অহেতুক। বাজেট উপস্থাপনের নামে দেখানো হতো এক রকমের প্রামাণ্যচিত্র।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে কর সমান হবে কি না সেটায় আপনারা নজর দেবেন। দেশে এতগুলো টেলিভিশন আছে, দেড় হাজার কেবল অপারেটর আছে, সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি বাড়ি আছে। এর ৫৪ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়। প্রত্যেকে ৩০০/৫০০ টাকা দিয়ে সংযোগ নেন। এখানকার টাকাটা আমরা এক টাকাও পাই না। সরকার পায় কি না আমি জানি না। এখানে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা কিছু টাকা পাব। সরকারও রাজস্ব পাবে।’
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহনেওয়াজ করিম বলেন, সবার জন্য সুখবর ও স্বস্তিদায়ক বাজেট দিন। করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তন করা যায় কি না ভেবে দেখুন। এটা করতে পারলে তাঁরা সম্মানিত বোধ করবেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করা হোক। বেকারত্ব কমনোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। নয়তো বন্ধ করে দিন। এটা মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। টেলিভিশনে কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। একটি ওয়েজ বোর্ড এখানেও থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় চ্যানেলগুলো এখানে দেদার চলছে, আমাদের কোনো চ্যানেল ভারতে চলে না। এখানেও কাজ করা প্রয়োজন।’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ মনিউর রহমান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হলো সেটা দেখা দরকার।

নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি না
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলের ভেতরে যারা অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৭ মার্চ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছেন, নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়ে।
আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট’কে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় ছিল। এটি আমার জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময়ের দাবিতেই পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরেছি।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা, যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আমাদের এজেন্ডাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। কিছু দাবিতে মিল থাকতে পারে, যেমন আমরা সাংবিধানিক সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন এবং উগ্রবাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম।
সূত্র : বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট