<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের (বিশেষ ক্ষমতা আইন) মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং অন্য ছয় আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচারিক আদালত তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিলে শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন। রায়ে আসামিদের সবার ক্ষেত্রে ডেথ রেফারেন্স খারিজ, ছয়জনের আপিল মঞ্জুর এবং অন্য ছয়জনের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে এই রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুণ্ডাদেশের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। অন্য মামলায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলাটি তাঁর ক্ষেত্রে বাদ (অ্যাবেটেড) হয়ে গেলেও অর্থদণ্ড থেকে যায়। হাইকোর্ট নিজামীকে সেই অর্থদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন। তবে মৃত্যুর কারণে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহীমের অর্থদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। অর্থদণ্ডের দায় নিয়ে কোনো আসামির মৃত্যু হলে সেই আসামির পরিবারকে তা পরিশোধ করতে হয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। সে হিসাবে নিজামীসহ মোট সাতজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খালাস পাওয়া বাকি পাঁচজন হলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম এনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমীন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাদের ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, চোরাকারবারি হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও চোরাকারবারিদের সহযোগী হাজি আবদুস সোবহান।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। পাঁচজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রায়ের পর আইনজীবী এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলার শুরু থেকে আদালতে প্রশ্ন তুলেছি, অস্ত্রগুলো (১০ ট্রাক) কোত্থেকে এসেছে, কোথায় যাচ্ছিল এবং এগুলোর বাহক কারা? যদি চোরাচালানের অস্ত্র হয়ে থাকে তবে আইন অনুযায়ী প্রমাণ দেখাতে হবে। এর পেছনের আর্থিক লেনদেন দেখাতে হবে। কিন্তু এখানে বিচারিক আদালত রায়ে বলেছেন, অস্ত্রগুলো পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পাচার করার জন্য আনা হয়েছিল। যা-ই হোক, হাইকোর্টের কাছে ন্যায়বিচার পেয়েছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মতো এ মামলাতেও একাধিক তদন্ত হয়েছে বলে জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অস্ত্রগুলো কারা এনেছে, এটা প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিতে তাঁকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছিল। হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বাবরের আপিল বিচারাধীন। ফলে এখনই তাঁর কারামুক্তি হচ্ছে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলার বৃত্তান্ত</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তদন্তে দেখা যায়, চীনের তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে আনা হয় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই চালান ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অস্ত্র উদ্ধারের পর ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলোচিত এই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন বিচারিক আদালত। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় আরেক মামলায় ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৯(চ) ধারায় তাঁদের দেওয়া হয় সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দিলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। রায়ের পর ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়। আর ১২ আসামি খালাস চেয়ে আপিল করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি এ ডেথ রেফারেন্স ও ১২টি আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে ওঠে। তখন এক বিচারপতি মামলাটি শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। তবে এই বেঞ্চের বিচারিক এখতিয়ার পরিবর্তন হলে মামলাটি পাঠানো হয় বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। এই বেঞ্চে শুনানি প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিচার বিভাগের পরিবর্তন আসে। প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার নিয়ে সৈয়দ রেফাত আহমেদ হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন করার পর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা এই হাইকোর্ট বেঞ্চে আসে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>