<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটিতে) অভিযোগ করেছেন নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। ৫৮ জনের এই তালিকায় আরো রয়েছেন শেখ হাসিনার তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে বিডিআরে কর্মরত ৫৭ জন নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। সেই শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের ২০ জন সদস্য গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই অভিযোগ জমা দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিযোগ জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ পরিবারের পক্ষে অ্যাডভোকেট উদয় তাসমীর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের অভিযোগ খুবই স্পষ্ট। দুটি বাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটের মুখে ফেলে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশপ্রেমিক ও দক্ষ অফিসারদের খুন করা হয়েছে। তাঁদের লাশে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে লাশকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। তাঁদের পরিবারকে আটক করে জিম্মি করা এবং লুটপাট করা হয়েছে। এ সব কিছুই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিম ফেরদৌসি বলেন,  পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার নেপথ্যে বিডিআর বিদ্রোহ নয়। বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল। পরিকল্পনা করে তাঁদের মেরে পোড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাচ্চাদের বুট দিয়ে লাথি মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ওই দিন কী করা হয়েছে তা আপনারা জানেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পিলখানা হত্যাকাণ্ডে যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল সেটি শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিংবা বাংলাদেশ রাইফেলস ধ্বংস করার জন্য নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করার জন্য হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি আইন পড়েছি একটা কারণেই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি আমার বাবার বিচার করে ছাড়ব। আমরা ছাত্র-জনতার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে তাদের আন্দোলনের কারণে আমরা আবার হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমরা আশাবাদী যে আমরা এর সঠিক বিচার পাব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিযোগকারীরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই হত্যাযজ্ঞের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, অবৈধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ এবং চিরস্থায়ী করার জন্য পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন এবং বিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও মতকে নির্মূল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুসারী দোসররা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে অকার্যকর করে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সুপ্রিম কোর্টসহ বিচার বিভাগ, সিভিল ব্যুরোক্রেসি, পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নিজ অনুগত অসৎ ও অন্ধ দলীয় আনুগত্যকারীদের নিয়োগ প্রদান করে এবং এসব প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনার বেআইনি ইচ্ছাপূরণের হাতিয়ারে পরিণত হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনা তাঁর অন্যতম প্রধান সহযোগী তারিক আহমেদ সিদ্দিককে (যিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা ও শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়) উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ প্রাপ্তির পর তারিক আহমেদ সিদ্দিক রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ওপর অবৈধ খবরদারি করতে শুরু করেন এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র‌্যাব) সব সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োজিত সামরিক ও  বেসামরিক অফিসারদের অবৈধ নির্দেশ ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। শেখ হাসিনার জন্য সামান্যতম হুমকি হয়ে উঠতে পারে এমন রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন  শ্রেণি-পেশার মানুষকে তাদের বাছাইকৃত এক শ্রেণির অপরাধপ্রবণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে হত্যা, গুম, গোপন কারাগারে আটকসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুই শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, তথা বাংলাদেশ  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে। সেই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রথম শিকারে পরিণত হন তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত পেশাদার, সৎ, দক্ষ,  মেধাবী ও সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অফিসারদের একটি অংশ। শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর ওই সব দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের নিজের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে প্রথম ও প্রধানতম অন্তরায়-বিপত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকের  পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অন্য আসামিরা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সহজ ও চিরস্থায়ী করতে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত পিলখানা সদর দপ্তরে তৎকালীন বিডিআরে কর্মরত সেনাবাহিনীর  দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র অফিসারদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাঁদের পরিবার-পরিজনকে আটকাবস্থায় জিম্মি করে, নিহত সেনা অফিসারদের লাশ পুড়িয়ে দিয়ে, তাঁদের বাসায় লুটপাট চালিয়ে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের শারীরিক-মানসিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। এই ঘটনায় মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। শেখ হাসিনা এই গণহত্যাকে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব দেশপ্রেমিক জনগণকে কড়া বার্তা দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। ওই মানবতাবিরোধী ও গণহত্যায় পুরো সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন  শ্রেণি-পেশার মানুষ শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতাদর্শ বাস্তবায়ন, লুটপাট, রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের কোনো রকম প্রতিবাদ করার সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে বলা হয়,  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশপ্রেমিক বীর ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আরো একবার নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করি। ফিরে পেয়েছি বাকস্বাধীনতা। আজ নতুন করে পেয়েছি বাঁচার আশা। আমরা একই  সঙ্গে জুলাই-আগস্টের  আন্দোলনসহ বিগত ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তাঁর দোসর কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হওয়া সব শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি ও অনুরোধ জানাচ্ছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>