<p>বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা পূরণে ভূগর্ভস্থ হাইড্রোজেন হতে পারে একটি নতুন এবং টেকসই সমাধান। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন মজুত রয়েছে। এই মজুত উত্তোলন করতে পারলে ২০০ বছর পর্যন্ত জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের গবেষকরা দাবি করেছেন, ভূগর্ভে প্রায় ৬.২ ট্রিলিয়ন টন হাইড্রোজেন মজুত রয়েছে। এর একটি ক্ষুদ্র অংশও ব্যবহার করা গেলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যাবে। এটা যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি টেকসই শক্তির উৎস হিসেবেও কাজ করবে।</p> <p>হাইড্রোজেন মূলত ভূগর্ভস্থ শিলার সঙ্গে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়। সাধারণত পানির অণু ভেঙে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হওয়া হাইড্রোজেন ভূগর্ভের শিলাগুলোর মধ্যে আটকা পড়ে থাকতে পারে।</p> <p>হাইড্রোজেন একটি পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস। এটি যানবাহন, শিল্প, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। ভূগর্ভে পাওয়া হাইড্রোজেনের মাত্র ২ শতাংশ উত্তোলন করলেই বিশ্বের কয়েক শতাব্দী ধরে শক্তির চাহিদা মেটানো সম্ভব। এটি পৃথিবীর প্রাকৃতিক গ্যাস মজুতের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম।</p> <p>বর্তমানে কৃত্রিম উপায়ে ইলেক্ট্রোলাইসিসের মাধ্যমে হাইড্রোজেন তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পানির অণু ভাঙার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। তবে ভূগর্ভস্থ হাইড্রোজেন উত্তোলনের জন্য কোনো অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন হয় না। এটি সরাসরি ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম এবং পরিবেশবান্ধব।</p> <p>হাইড্রোজেনের মজুত প্রচুর হলেও মাটির অনেক গভীর এবং উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। তাই এই হাইড্রোজেন উত্তোলন করা চ্যালেঞ্জিং। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রাকৃতিকভাবে জমা থাকা হাইড্রোজেন উত্তোলনের প্রযুক্তি উন্নত করলে এটি একটি কার্যকর জ্বালানি সমাধান হয়ে উঠবে।</p> <p>বিশ্বব্যাপী হাইড্রোজেনের চাহিদা ২০৫০ সালের মধ্যে পাঁচ গুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি শক্তির উৎস হতে পারে। ভূগর্ভস্থ হাইড্রোজেনের মজুত এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।</p> <p>ভূগর্ভস্থ হাইড্রোজেন আবিষ্কার আমাদের জ্বালানি খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই শক্তির উৎস হিসেবে এটি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য সমাধান হতে পারে।</p> <p>সূত্র: সায়েন্স অ্যাডভান্সেস</p>
