আস্থাহীনতায় সংকটে বিনিয়োগ

মিরাজ শামস
মিরাজ শামস
শেয়ার
আস্থাহীনতায় সংকটে বিনিয়োগ

দেশের অর্থনীতিতে সুখবর নেই। ক্ষমতার পালাবদলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে; ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা। ডলার সংকট, দফায় দফায় করকাঠামোর পরিবর্তন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট, উচ্চ সুদের হারসহ আরো নানা সমস্যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংকট সামাল দিতে চেষ্টা করছে, কিন্তু এতে এখনো তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না।

উল্টো ব্যবসা-বিনিয়োগ প্রসারের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ধারাবাহিক কমতে থাকা বিনিয়োগ তলানিতে নামতে সময় লাগবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে দেশে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে ব্যবসার পরিধি। মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টায় দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যাংকঋণের সুদ অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুর্বল অর্থনীতির সূচকে আটকে গেছে ব্যবসার গতি। সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এবং আকাশচুম্বী সুদের চাপে পড়েছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা ব্যবসার জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কম থাকায় আমদানি সীমিত।

অস্থিতিশীল ডলারের দাম স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য অন্তরায়। দেশি বিনিয়োগ না হলে বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে বিভিন্ন খাতে দেওয়া করছাড় সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে বিনিয়োগ হারাবে। পরিকল্পনা নেওয়া বিনিয়োগ থেকে অনেকে সরে আসবেন। 

এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে অর্থনৈতিক কূটনৈতিক দল তৈরি করে বাংলাদেশকে প্রচারের তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

২০২১ সালের পর থেকেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। এমনকি সরকার পরিবর্তনের পরেও বিনিয়োগে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এক হাজার ৮৩টি ব্যবসা প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে। পরের বছর এক হাজার ৮১টি ব্যবসা প্রকল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে এক হাজার ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। ২০২৩ সালে আরো কমে ব্যবসার ৯৯৮টি প্রকল্পে ৮৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার হয়। আর চলতি বছরে ব্যবসার ৭৪২টি প্রকল্পে এক হাজার ১৬৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকেই ২৫৪ প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনকালীন জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে ১৮৬ প্রকল্পে মাত্র ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার হয়েছে। 

বিনিয়োগ আনার সক্ষমতা ও চলমান গতি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের মহাপরিকল্পনাকে সীমিত করে আনছে সরকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, আগামী দিনে পাঁচটি ইজেডকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ ১০০ ই-জেডে বিনিয়োগের অফার করার সক্ষমতা আছে কি না তা দেখতে হবে। এ জন্য অধিগ্রহণ করা জমি ফেলে না রেখে অব্যবহৃত জমিতে সোলার পার্ক করা হবে। 

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ১০০ ই-জেড নির্মাণ থেকে আমরা সরে যাচ্ছি না। সীমিত আকারে বাস্তবায়ন করে এগোতে চাই। বিনিয়োগ আনতে হলে সরকারের সব বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ লাগবে। যে বিনিয়োগকারী জমি নিয়ে যেকোনো কারণেই হোক কার্যক্রম শুরু করেনি, তাদের শিল্প নির্মাণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যারা কাজ শুরু করতে অপারগ, তাদের জমি বেজার কাছে ফেরত দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বিনিয়োগের জন্য নেওয়া সেসব জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।   

রিজার্ভের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বিদেশি বিনিয়োগ। রিজার্ভ যেমন কমছে বিদেশি বিনিয়োগও কমছে। আগের বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে নেট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১৪৭ কোটি ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে যা ছিল ১৬১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পাঁচ মাস পার হতে চললেও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনো ফেরেনি। বরং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং সংস্কার, নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় নানা ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দায় ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

দেশের এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুর্নীতির পাশাপাশি অতীতে অনেক ভুল নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল এবং এর জন্য আমাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। অতীতে ভুল নীতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী চলে গেছেন। সৌদি আরবের আরামকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংকে তাড়ানো ছিল ভুল নীতি। এখন এসব শুধরে নিতে হবে। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমাদের দেশে অর্থনীতির সুযোগে আকৃষ্ট করার জন্য অনেক কিছু করতে হবে। এই বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি যে আমাদের দেশ সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি সব সময় সত্যি নয়। বর্তমান সরকার অবস্থার পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজ করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান বলেছেন, আরামকো ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে তিনবার বাংলাদেশে এসেছিল, কিন্তু তাদের কেউ অভ্যর্থনা জানায়নি। কিন্তু আমরা অতীত নিয়ে কথা বলব না। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলব। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেল কম্পানি আরামকো বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। তারা বঙ্গোপসাগরে একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করতে চায়। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০২৫ সালে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক দিক থেকে অস্থিরতা থাকবে। কারণ কয়েক বছর ধরে চলা সমস্যাউচ্চ মূল্যস্ফীতি, স্তিমিত বিনিয়োগ ও সীমিত কর্মসংস্থানের চাপ আছে। এ কারণে আগামী দিনে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের গতি ধীর হবে। ফলে কর্মসংস্থান আরো চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকবে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যা কাটাতে আরো কিছু সময় লাগবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে বিনিয়োগ। বিশেষ করে বিনিময় হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাংকব্যবস্থা, বন্দরের সক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ বাজার ও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতি নাজুক থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। দেশের রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ দেখেই আসবেন উদ্যোক্তারা। আর বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিষয়টি শ্রম সংস্কার, প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকে স্থিতিশীলতা ইত্যাদি সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। 

দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

বিনিয়োগের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে প্রধান উপাদান মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কমেছে। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। এতেই দেশে নতুন বিনিয়োগ কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। 

 

উচ্চ সুদের হারই বড় চ্যালেঞ্জ : মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ফলে ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অনেকে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। 

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে বলা হয়, দেশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। ২০২৪ সালে প্রায় ১৭ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকেই ব্যবসায়ের প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দুর্নীতিসহ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র, উচ্চ করহারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। 

 

বন্ধ হচ্ছে শিল্প-কারখানা : সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ মাসে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ছোট-বড় মিলিয়ে কম্পানি বন্ধের পরিমাণ তিন শতাধিক। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এই দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অনেকে ব্যবসা সীমিত করেছেন। আবার অনেকে বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক ও বস্ত্র খাতের ১৬টি কারখানা গত ডিসেম্বরে বন্ধ হয়েছে। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন আটটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এস আলমের ছেলে আহসানুল আলমের ইনফিনিয়া গ্রুপ এবং জামাতা বেলাল আহমাদের ইউনিটেক্স গ্রুপের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসূত্র থাকা কয়েকটি গ্রুপ অব কম্পানি বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেকে সরে আসছে। 

 

নতুন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগেও ভাটা  : দেশের স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগও শ্লথ। গত এক দশকে দেশে প্রায় ৯৮ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। দেশীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স গত নভেম্বরে বাংলাদেশের স্টার্টআপে বিনিয়োগের এক দশকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আসা বিনিয়োগের মধ্যে ৯২ শতাংশ বিদেশি। দুই বছর ধরে বিনিয়োগ কমার পেছনে বৈশ্বিকভাবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধের প্রভাব, দেশীয় নীতির পাশাপাশি ডিজিটাল সেবা নেওয়ার বাজার বড় না হওয়াকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এক হাজার ২০০টির বেশি স্টার্টআপ রয়েছে। এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছিল ২০২১ সালে। ২০২৪ সালে বিনিয়োগ এসেছে তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলার। আগের ছয় বছরের মধ্যে এটা সবচেয়ে কম।

দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে বলে দাবি করেছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। বাণিজ্য সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগ থেকে নানামুখী সংকটে জর্জরিত ছিল দেশের আবাসন খাত। উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সুদের হার বৃদ্ধি, ত্রুটিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) কারণে এই খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা চলছে। 

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ছিল। বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা এবং চলমান বিভিন্ন যুদ্ধ ও সংঘাত উল্লেখযোগ্য। চলতি বছরের অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব থাকবে। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগের কোনো পূর্বাভাস মিলছে না; বরং বৈশ্বিক যুদ্ধ ও বাণিজ্য ঝুঁকি বাড়বে। 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্রিকেটার সাকিবের সম্পদ জব্দের আদেশ
সাকিব আল হাসান

চার কোটি টাকার চেক ডিজ-অনার মামলায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। আদালতের পেশকার রিপন মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পদ জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী শাহাগীর হোসাইন, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্মের ডিরেক্টর ইমদাদুল হক ও ডিরেক্টর মালাইকা বেগম। তাঁদের মধ্যে মালাইকা বেগম মারা গেছেন। অন্য দুজন জামিনে রয়েছেন।

এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের রিলেশনশিপ অফিসার মো. শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলার পর তাঁকে আদালতে হাজিরের জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। তবে ওই দিন সাকিব ও গাজী শাহাগীর হোসাইন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪ মার্চ দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান হিসেবে সাকিব দায়িত্ব পালন করছেন। কম্পানিটির কার্যক্রম সাতক্ষীরায়। কম্পানিটি ২০১৭ সালে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে এক কোটি এবং টার্ম লোন হিসেবে দেড় কোটি টাকা বনানী শাখার আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নেন। পরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে নেওয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংকটি এই টাকা মেয়াদি লোনে পরিবর্তন করে। টাকা ফেরত চেয়ে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পর কম্পানিটি ব্যাংককে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার কোটি ১৪ লাখ টাকার দুটি চেক দেয়।

তবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট টাকা না থাকায় চেক বাউন্স করে। পরে ঋণের টাকা ফেরত চেয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুুমেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। তবে নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিন পার হলেও তা না পেয়ে আদালতে এসে মামলা করে।

 

 

মন্তব্য

হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা

    প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হান্নান মাসুদের সভায় বিএনপির হামলা
হামলায় আহত আব্দুল হান্নান মাসুদ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের পথসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। এতে হান্নান মাসুদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহাজমারা ইউনিয়নের জাহাজমারা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাত ১২টায় ঢাকায় তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপি।

বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শাহবাগ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় ঘুরে আবার বাংলামোটরে এসে শেষ হয়।

এনসিপির নেতারা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও তাদের রাজনৈতিক দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

হামলার ঘটনার পর হান্নান মাসুদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসীরা হাতিয়ায় চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আমার ঘোষণা ছিল এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

সেই বিএনপি নামধারী চাঁদাবাজরা আজ আমার পথসভায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ রাজিব বলেন, হান্নান মাসুদ আওয়ামী লীগের পদধারী পলাতক সন্ত্রাসীদের নিয়ে জাহাজমারা বাজারে মিছিল করছিলেন দেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাতে বাধা দেন। শুনেছি এ সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

মন্তব্য

শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে সেনাপ্রধানের আর্থিক সহায়তা
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে। ছবি : আইএসপিআর

গত জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরের আলোচিত শহীদ আবু সাঈদের বাবাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার (২৪ মার্চ) সেনানিবাসে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সেনাপ্রধান।

গত বছরের ১৬  জুলাই রংপুরে আন্দোলন চলাকালে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ।

গত ১০ ডিসেম্বর শহীদ আবু সাঈদের বাবা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে রংপুর থেকে সিএমএইচ ঢাকায় আনা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এর আগে রবিবার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সেনাবাহিনী প্রধানের আমন্ত্রণে আবু সাঈদের বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

    সাড়ে ৬ বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ ২৮১টির মধ্যে কাজ শেষ ৪৩টির আসছে জুনের মধ্যে শেষ হবে আরো ১২টির কাজ
খায়রুল কবির চৌধুরী
খায়রুল কবির চৌধুরী
শেয়ার
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প

জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একাত্তরের বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্বিচার গণহত্যার সাক্ষী হিসেবে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পটি জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ইতিহাস রক্ষার খাতিরেই এই বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য।

মন্ত্রণালয় সূত্র ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুরু থেকেই ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ বেশ কিছু সমস্যার কারণে প্রকল্পটি এগিয়েছে শামুকের গতিতে। গত সাড়ে ছয় বছরে মাত্র ৪৩টি বধ্যভূমির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

বর্তমানে প্রকল্পটির অধীনে ৯টি বধ্যভূমির কাজ চলমান রয়েছে, আরো তিনটির কাজ শুরু হবে।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৮১টির মধ্যে ৫৫টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির সমাপ্তি টানা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি ক্লোজ (বন্ধ) করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের টার্গেট ছিল (বন্ধের আগে) ৫৭টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা। কিন্তু ৫৫টা করেই বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করা হবে। শুধু রায়েরবাজার বধ্যভূমির কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব বধ্যভূমি আমরা নিরঙ্কুশ পেয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ হবে। আর যেগুলোর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে সেগুলো আমরা বাতিল করেছি। একজন লোক জানে তার জমিতে বধ্যভূমি আছে।

কিন্তু যদি এটা (জমি) দামি জমি হয়, তাহলে তার কাছে এর (বধ্যভূমি) কোনো পবিত্রতা বা ভ্যালু নেই।

তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ আকর এসব বধ্যভূমি আর সংরক্ষণ করা হবে না? এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, মানুষের জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার এটা সংরক্ষণ করবে না। স্বেচ্ছায় যদি কেউ জমি দেয় তাহলে আমরা এটা করব।

২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রায় ৪৪২ কোটি (৪৪২ কোটি ৪০ লাখ ১৩ হাজার) টাকার প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে দুই দফায়। কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকায় ২০২১ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়।

তবে দুই দফা মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পটির অগ্রগতির চিত্র হতাশাজনক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩টি বধ্যভূমির কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ অগ্রগতি মাত্র ১৫.৩ শতাংশ। এ ছাড়া আরো ১২টি বধ্যভূমির কাজ শেষ করা হবে।

মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ বধ্যভূমির জায়গাই ব্যক্তি মালিকানাধীন। বধ্যভূমির জন্য ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পুরোটাই জেলা প্রশাসনের ওপর। মন্ত্রণালয় থেকে জায়গার জন্য চাহিদা দেওয়া হয়। এরপর দাগ ও বিভিন্ন নথি দেখে জায়গা চূড়ান্ত করে দিলে অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জায়গা চূড়ান্ত হচ্ছে না, অধিগ্রহণও হচ্ছে না।

ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যার পর লোকবল সংকটকে সবচেয়ে বড় কারণ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। নেই কোনো স্থায়ী পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের কাজ করছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজের বাইরে তাঁকে এই দায়িত্বটি পালন করতে হয়।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখার জন্য মাঠ পর্যায়ে কোনো লোক নেই। ফলে এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু কাজ কখনো কখনো অন রিকোয়েস্টে  প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে করানো হয় বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিই তো পাওয়া যায় না। জায়গার সমস্যা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার মধ্যেই আমরা বন্ধ করে দিলাম। কারণ এভাবে এগোনো যায় না।

গণহত্যার বেদনাবিধুর স্মারক বধ্যভূমি, রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার বিভিন্ন স্মৃতি ও ক্ষতচিহ্ন আজও অনেকটা অনাদরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশজুড়ে। ২০১৭ সাল থেকে খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর  ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর জেলাভিত্তিক গণহত্যার জরিপকাজ পরিচালনা করছে। জরিপে দেখা গেছে, কেবল ৪২টি জেলায়ই ২১ হাজার ৮৫৬টি গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৮ হাজার ৪৮১টি। বধ্যভূমি শনাক্ত হয়েছে  ৮৮৮টি।  এ ছাড়া গণকবর এক হাজার ৩১৩টি ও নির্যাতনকেন্দ্র শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ১৭৪টি। ৬৪ জেলার জরিপ শেষে গণহত্যা, গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন জাদুঘরের গবেষকরা।

এমন বাস্তবতায় সরকারের বধ্যভূমি সংরক্ষণের চিন্তা থেকে সরে আসা এবং এগুলোকে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা অবশ্যই কর্তব্য। আমাদের তো ইতিহাসকে রক্ষা করতে হবে এবং চর্চা করতে হবে। এর জন্য ইতিহাসের স্মৃতিগুলো রাষ্ট্রের সংরক্ষণ করতে হবে। না হলে মানুষ তো সব ভুলেই যাবে। শহীদদের আত্মত্যাগকে ভুললে চলবে না।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের নির্বিচার গণহত্যা, নৃশংসতা ও বেদনার সাক্ষ্য বহন করে। এর স্মারক হচ্ছে বধ্যভূমিগুলো। ফলে পরিকল্পিতভাবে বধ্যভূমি সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। আমি আশা করছি, বধ্যভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি সরকার পুনরায় বিবেচনা করবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ