লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে টাকার বিনিময়ে জেলেদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় জেলেদের বিক্ষোভের মুখে পালিয়ে যান দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে এক হাজার ৮০০ কার্ডধারী জেলের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করার কথা ছিল।
এতে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামের যোগসাজশে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও উপজেলা যুবদল নেতা মো. হেলাল উদ্দীন এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম জেলে প্রতি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এতে বিক্ষোভ করেন জেলেরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজজামান, সেনাবাহিনীর কর্মরত একটি টিম ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
আরো পড়ুন
শিশুকে নিপীড়নের চেষ্টা, যুবককে গণধোলাই
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়নে এক হাজার ৮০০ জেলের জন্য ১৪৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেয় সরকার।
প্রতি জেলে ৮০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু দুইজন মেম্বার জেলে প্রতি আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা করে আদায় করার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ইউপি সদস্য হেলাল ও আবুল কাশেম টাকা নিয়ে প্রকৃত জেলে নয়-এমন লোকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে জেলেদের মাঝে অসন্তোষ দেখা যায়। বাধ্য হয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
চাল নিতে আসা লাইনে দাঁড়ানো তিনজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, তারা এ পেশার লোক নন। কিন্তু টাকা দিয়ে চাল নিচ্ছেন। জেলেদের ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে বলে জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আফজল মিয়া ও কবির হোসেন বলেন, টাকার বিনিময়ে কৃষক ও রিক্সার ড্রাইভারকে জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যারা টাকা দেয়নি তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ সব অপকর্মের মূল হোতা স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কাশেম মেম্বার ও যুবদল নেতা হেলাল উদ্দীন মেম্বার।
জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার ও উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. হেলাল উদ্দীন কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ফোন বন্ধ থাকায় সাহেবেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মেম্বারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.জহিরুল ইসলাম বলেন, চাল বিতরণ শুরু করলে হঠাৎ জেলেরা বিক্ষোভ শুরু করে পরিষদের দিকে আসার প্রস্তুতি দেখে নিরাপত্তার স্বার্থে আমি সরে গিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা- তিনি জানেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজ জামান বলেন, কিছু অনিয়মের খবর পেয়ে আমি সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা শুনেছি। জেলেদের তালিকা তৈরিতে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের ষাট নল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার এলাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ করেছে সরকার। এ দুই মাস জেলেদের সহায়তার জন্য জেলে প্রতি ৮০ কেজি করে ভিজিএফ চালের বরাদ্দ দেয় সরকার।