আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

বাড়ছে নারীর নিরাপত্তাহীনতা

খায়রুল কবির চৌধুরী
খায়রুল কবির চৌধুরী
শেয়ার
বাড়ছে নারীর নিরাপত্তাহীনতা
জীবিকার তাগিদে পুরুষদের পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীরাও কঠোর পরিশ্রম করেন। রাজধানীর গাবতলী থেকে তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনেকটাই দৃশ্যমান। ছিনতাই, ডাকাতি, লুটপাট, হামলা ছাড়াও ঘটছে মব সহিংসতার মতো ঘটনা। এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর পড়লেও নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বহুমাত্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে গত কয়েক মাসের নানা ঘটনায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি আগেও ছিল।

তবে বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে একটি বিশেষ গোষ্ঠী নারীদের দমিয়ে রাখতে পুরুষতান্ত্রিক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলেও মত দেন তাঁরা।

বাড়ছে নারীর নিরাপত্তাহীনতাএমন পরিস্থিতির মধ্যেই দেশে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।   

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গত বছর ডিসেম্বরে দেশে এক হাজার ২০৫টি মামলা হয়েছে। আর একই কারণে চলতি বছর জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে এক হাজার ৪৪০টি। অর্থাত্ এক মাসের ব্যবধানে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা বেড়েছে ১৯.৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ২০৫ ও ১৮৯টি। মহিলা পরিষদের নারী ও কন্যা নির্যাতন বিষয়ক তথ্যে বলা হয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৬টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। জানুয়ারিতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এ দুই মাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন অন্তত তিনজন নারী।

যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১৮টি। এই দুই মাসে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন নারী। বিভিন্নভাবে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ৯৫ জন নারী ও কন্যাকে। মহিলা পরিষদ দেশের ১৫টি গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

অন্যদিকে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন মাসে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ক্রম-ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বরে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২৪১টি। চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২৭১ ও ২৯৫-এ দাঁড়িয়েছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, গত দুই মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩২টি। যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৫টি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে চলতি বছর জানুয়ারিতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত ১১ জন নারী। জানুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৮টি। ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে দুটি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪০টি। এর মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আসকের তথ্যানুযায়ী, গত বছর নভেম্বরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অন্তত সাতজন নারী। ওই মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১২টি, এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ দুটি। ধর্ষণচেষ্টা সাতটি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। ডিসেম্বরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি, এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ছয়টি। ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে সাতজনকে।

তবে শুধু এসব তথ্য দিয়ে গত কয়েক মাসে নারীদের হেনস্তা ও আক্রমণ এবং আক্রমণের ধরনের চিত্রটি বোঝা যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মব তৈরি করে একাধিক নারীকে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। পথেঘাটে, গণপরিবহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বক্ষেত্রে নারীরা বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। 

গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগারের সহকারী বুক বাইন্ডারের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থী জানান, রাজু ভাস্কর্যের সামনে ওই ব্যক্তি তাঁকে ওড়না ঠিক করাসহ নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। পরে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে সেদিন রাতেই তাঁর মুক্তির দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে একদল লোক শাহবাগ থানায় অবস্থান নেয়। পরদিন বিকেলে জামিনে মুক্তি পেলে তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন ছাত্রীকে বহিষ্কারের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে সমালোচনা করছেন।

রাজধানীর লালমাটিয়ায় ধূমপানকে কেন্দ্র করে মব তৈরি করে দুই নারীর ওপর আক্রমণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে দুই নারীকে থানায়ও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত রবিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি তারা (দুই তরুণী) নাকি সিগারেট খাচ্ছিল, কিছু লোক সেখান দিয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। তারা (লোকেরা) বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর চা ছুড়ে মেরেছিল। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ।

অন্যদিকে এ ঘটনায় আপস হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, এ বিষয়ে উভয় পক্ষ পুলিশের সামনে একটি আপসনামায় স্বাক্ষর করেছে। ফলে এটিকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করতে হচ্ছে। মব জাস্টিস বা মোরাল পুলিশিংয়ের কোনো সুযোগ এ দেশে নেই। সরকার এর বিরুদ্ধে সব সময়ই শক্ত অবস্থানে আছে।

এর আগে গত আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দেশে নারীর ওপর একাধিক আক্রমণ ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরই তৌহিদী জনতার ব্যানারে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে মেয়েদের ফুটবল খেলায় বাধা দেওয়া হয়। 

বিনোদন জগতের একাধিক তারকাও তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের কথা ছিল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের। অপু বিশ্বাস রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করবেনএমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ জানান। পরে অপু বিশ্বাসকে দিয়ে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। ওই মাসেই একই রকম বাধার মুখে পড়েন নায়িকা পরীমনিও। এর আগে গত বছর নভেম্বরে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও তাওহীদি জনতার ব্যানারে কিছু ব্যক্তির বাধার মুখে চট্টগ্রাম নগরে শেরুম উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।

এদিকে কালের কণ্ঠের কাছে কয়েকজন নারী সামপ্রতিক সময়ে তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন। নাসরিন সুলতানা (ছদ্মনাম) দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কল সেন্টারে কাজ করেন। রাজধানীর মগবাজার থেকে তেজগাঁওয়ে অফিসে যাতায়াত করেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে আমি লক্ষ্য করলাম, বাসে আগের মতো মেয়েদের জন্য সিট সংরক্ষিত থাকছে না। আগে একটা মহিলা সিটে একজন পুরুষ বসা থাকলেও কোনো মহিলা উঠলে বাসে তিনি আসন ছেড়ে দিতেন। কিংবা চালক বা তার সহকারী ওই ব্যক্তিকে বাধ্য করতেন সিট ছেড়ে দিতে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই চিত্র আর দেখছি।

এদিকে গত বুধবার ঢাকার মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী মেট্রো রেলে নারীদের কোচে উঠে পড়া পুরুষ যাত্রীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে থাকা এক নারী চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে ১০-১২ জন পুরুষ ছিল। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা এক শিশুসহ নারীদের শ্লীলতাহানি করে।

এ ছাড়া গত সাত মাসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তরুণীদের হেনস্তা, রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের আক্রমণ ও বেধড়ক পিটুনি, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ষাটোর্ধ্ব এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, মেট্রো রেল ও গণপরিবহনে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, বিদ্বেষসহ নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে গত বুধবার বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তারা বলছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নারীবিদ্বেষী কথা বলেছেন এবং সেটির সঙ্গে আইনের ভুলভাল ব্যাখ্যাকে কৌশলে যুক্ত করে দিয়েছেন।...দেশে মব ইনজাস্টিস তৈরি করে বিষোদগারের চর্চা তো বন্ধ হচ্ছেই না, উল্টো তা দিন দিন বাড়ছে এবং এবার এর শিকার বানানো হয়েছে (লালমাটিয়ায়) দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে।

নারীকে হেনস্তা ও নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড বেড়ে চলছে বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, নারী নির্যাতনের তথ্য দিয়ে সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলোকে পুরোপুরি মেলানো যাবে না। আমাদের এখানে মামলার ভিত্তিতে আমরা সামগ্রিক নারী নির্যাতনের তথ্য দিই। এর মধ্যে দেখা যায় পারিবারিক সহিংসতাই বেশি। শুধু নারী নন, সব নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কালের কণ্ঠকে বলেন, নারীর ওপর মোরাল পুলিশিং বা নৈতিক অনুশাসন এখন তৌহিদী জনতার হাতে চলে গেছে। এর অনেক কারণের মধ্যে একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে মব ভায়োলেন্স অব্যাহত আছে। নারীদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি আগেও ছিল; এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্বল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। তারা যদি না করে আমাদের জনগণের অসহায় হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

দেশে নারীদের নিরাপত্তাহীনতা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভোটারের বয়স ১৬, প্রার্থীর ২৩ করার প্রস্তাব দেবে এনসিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভোটারের বয়স ১৬, প্রার্থীর ২৩ করার প্রস্তাব দেবে এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স ২৩ বছর করার প্রস্তাব দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ রবিবার কমিশনের কার্যালয়ে সংস্কার প্রস্তাবের ওপর দলটির পক্ষ থেকে মতামত জানানোর সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক এবং সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার এ তথ্য জানান।

এ সময় সারোয়ার তুষার বলেন, সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।

আমরা মনে করছি, এটা ২৩ বছর হতে পারে।  সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করছি, ভোট দেওয়ার বয়স ১৬ বছর হতে পারে। কারণ এবারের অভ্যুত্থানকে সারা বিশ্বে জেনজির অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে তাদের এত বড় একটা স্টেপ তৈরি হলো, এরপর পরিবর্তিত যে বাংলাদেশ এবং আসন্ন যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে তারা মতামত দিতে পারবে না শুধু বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ার কারণেএটা আমরা যৌক্তিক মনে করছি না।
এ জন্য ভোটারের বয়স ১৬ বছর করার জন্য আগামীকাল আমরা প্রস্তাব করব।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি পদ্ধতিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আমরা দুটি পদ্ধতিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যৌক্তিক উপায় বলে মনে করেছি। একটি হচ্ছে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ জারি করে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা।

আরেকটি হচ্ছে গণপরিষদ নির্বাচন বা আইনসভার মাধ্যমে নতুন সংসদ প্রণয়ন করে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা। আমরা দেখেছি, সব সংস্কার সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমরা মনে করি, যেসব সংস্কার সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেসব সংস্কার নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ জারি করে করা যেতে পারে। আর আমরা শুরু থেকে বলে আসছি, আমরা চাই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করা হোক। নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করা হোক।
এর জন্য প্রয়োজন গণপরিষদ নির্বাচন। যদি গণপরিষদ নির্বাচন না-ও হয়, তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি আইনসভা তৈরি করতে হবে, যে আইনসভায় গণপরিষদের ভূমিকাও থাকবে।

১১১টি সংস্কারেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে জানিয়ে এনসিপির এই যুগ্ম আহবায়ক বলেন, গতকাল (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে দেখতে পেলাম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে ১১১টি সুপারিশ কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই সংস্কার করা সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে কমিশনের কাছে জানতে চাইব, কিসের ভিত্তিতে ১১১টি সুপারিশ কোনো রকম আলোচনা ছাড়া সংস্কার করা সম্ভব। আমরা মনে করি, ১১১টি সুপারিশের মধ্যে অনেক সুপারিশ রয়েছে, যেগুলো সংস্কারের আগে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের সংস্কার সুপারিশমালার যে স্প্র্রেডশিট দেওয়া হয়েছে, সেখানে পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সংস্কার কমিশনের কোনো সুপারিশমালা নেই। আমরা এ বিষয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জানতে চাইব।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সংস্কারবিষয়ক কমিটির পরিচয় করিয়ে দিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের সংস্কারবিষয়ক সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে এনসিপি। কমিটিতে সমন্বয়কের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির আরো বকি চার সদস্য হলেন যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন, জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত ও দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক আরমান হোসাইন।

মন্তব্য
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি

দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেস ক্লাব, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিগুলো পলন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন। অভিন্ন দাবিতে শনিবার দেশের নানা প্রান্তেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

গতকাল বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, কোনো শান্তিপূর্ণ ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিদায় হয়নি। হাজারো মানুষের রাজপথ ভেজানো রক্তের মধ্য দিয়ে এই খুনি-ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে।

বাংলাদেশে যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, ততবার সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।

তিনি আরো বলেন, সাত মাস পেরিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

সমাবেশে দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি।

এখন পর্যন্ত যে বা যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের এর মূল্য দিতে হয়েছে। যদি ১০টা ফেরাউন আর ১০টা নমরুদ একসঙ্গে করা হয় তা-ও হাসিনার সমান হবে না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সব কিছু হবে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রকাঠামোর বাইরে রেখে। আওয়ামী লীগের নাম, মার্কা ও আদর্শ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।

গণভোটের মাধ্যমে নিষিদ্ধের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের : নির্বাহী আদেশে নয় বরং গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

গতকাল রাজধানীর রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি চালু করার সময় এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম, ঢাকা অবরোধের হুঁশিয়ারি : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে জুলাই আন্দোলনে আহতদের সংগঠন ওয়ারিয়ার্স অব জুলাই। এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে ঢাকা শহর অবরোধের হুঁশিয়ারি দেয় তারা। গতকাল এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা।

গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে গণ অধিকার পরিষদ : আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে গণ অধিকার পরিষদ। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দল নয়। এটি একটি খুনি মাফিয়া গণহত্যাকারী গোষ্ঠী।

ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষকে খুন করতে পারে, সে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার জন্য আমাদের দুই লাখেরও অধিক বিপ্লবী ভাই-বোনকে খুন করতে ন্যূনতম কুণ্ঠা বোধ করবে না।

শাহবাগ মোড়ে জুলাই মঞ্চের অবস্থান : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জুলাই মঞ্চ। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে জুলাই মঞ্চের ব্যানারে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন। তাঁরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোনো চক্রান্ত করে অভ্যুত্থানের খুনি দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা যাবে না। ছাত্র-জনতার মধ্যে ছোটখাটো নানা বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সবার মত একই।

এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে রাত পৌনে ৮টার দিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে মশাল মিছিল ও জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করা হয়।

মন্তব্য
রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবি

চার মরদেহ এবং ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
শেয়ার
চার মরদেহ এবং ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার

মায়ানমার থেকে নৌকায় চেপে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের বহন করা একটি নৌকা ডুবে গেছে। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবির তত্পরতায় ২৫ রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার হয়েছে। তবে নিখোঁজ রোহিঙ্গার সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের একটি দল অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়াসংলগ্ন সাগরে নৌকার তলা ফেটে ডুবে যায়। নৌকাডুবির খবর পেয়ে সৈকতের পাশের স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের নৌকা নিয়ে উদ্ধার করতে নেমে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এ সময় উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নেওয়া এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হন।

শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরমান বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে সৈকতের দিকে হাঁটতে যাই।

এ সময় রোহিঙ্গাদের একটি দলকে সাঁতরে কূলের দিকে উঠে আসতে দেখি। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। রোহিঙ্গাদের ওই নৌকাটি মায়ানমার থেকে আসছিল। উদ্ধার রোহিঙ্গাদের অনেককে বলতে শোনা যায় তাদের ২০ থেকে ২৫ জন ডুবে গেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, অনুপ্রবেশের সময় সাগরে একটি রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নিয়ে বিজিবির এক সদস্য নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জেনেছি। সাগরে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপ সৈকত এলাকায় চারজনের মরদেহ ভেসে আসে। তাদের মধ্যে তিনটি নারীর এবং একটি শিশুর।

তবে নিখোঁজ বিজিবি সদস্য এখনো উদ্ধার হননি।

শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর জানান, রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাটি টেকনাফ এলাকার। সম্ভবত তারা ভাড়ায় রোহিঙ্গা আনতে রাখাইনে যায়। যেসব নৌকা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।

টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানে নতুন করে কেন রোহিঙ্গারা রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে তা জানি না। আমাদের আত্মীয়-স্বজন যারা এখনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে রাখাইনে রয়ে গেছে তাদের আমরা বারবার বলছি, রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে না আসতে।

বিজিবিকে নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার: এদিকে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকাডুবির ঘটনায় এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়েছে একটি চক্র। বলা হচ্ছে, গত দুই দিন হয় ৩৩ জন বিজিবি সদস্য নাফ নদীতে মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজিবির দৃষ্টি আকর্ষণ হলে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রেরিত এক বার্তায় এ ধরনের গুজব ও অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজিবি প্রচারিত বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ঘটনা হলো২২ মার্চ শনিবার ভোররাতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া ঘাটের কাছ দিয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অবৈধ উপায়ে সাগরপথে বাংলাদেশে আসার সময় প্রবল স্রোতের কারণে নৌকাটি উল্টে যায়। খবর পেয়ে সৈকতের পার্শ্ববর্তী স্থানে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা তত্ক্ষণাত্ স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারের জন্য ছুটে যান এবং ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধারকার্য চলাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকায় এবং অন্ধকার রাতের কারণে একজন বিজিবি সদস্য সম্ভবত পা পিছলে পড়ে সমুদ্রে নিখোঁজ হন।

পরে ডুবে যাওয়া নৌকাসহ ২৪ জন রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করেছে বিজিবি। সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত হূদয়বিদারক এবং বর্তমানে নিখোঁজ একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্য রোহিঙ্গাদের উদ্ধার কার্যক্রম সর্বান্তকরণে অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য

সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা দেখছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা দেখছে বিএনপি

সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে রাজনীতিবিদদের অপাঙক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরে এই কথা বলা হয়।

কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাব আজ রবিবার জমা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলএনসিসি নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সব স্তরে স্তরে দেখা যায়, অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তিরা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ অবস্থায় বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব অবমূল্যায়ন করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য।

যার ফলে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সব বিষয়গুলো যেন একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি না বলা মুশকিল। সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসগুলো পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয়, রাজনীতিবিদরা অপাঙতেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে। তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তাবাকারে আসতে পারত তা প্রস্তাবে না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কি না? একইভাবে গণভোট, গণপরিষদ এবং আইন সভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কি না ইত্যাদি হ্যাঁ-না বলুন।

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশসংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে আছে মাত্র ২৭টি বিষয়। তার মধ্যে বেশির ভাগই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলে মনে করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তী সময়ে যা বাস্তবায়ন করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, উপযুক্ত সময় যখন হবে, তখনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার বিষয়ে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে যে, উপযুক্ত সময় সেই সময়ে তিনি (তারেক রহমান) আসবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ