প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় কাস্টমস সংক্রান্ত অনেক জটিলতারই সমাধান করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। বিদেশ থেকে কম মূল্যে আমদানি করলেও খালাসের সময় ইনভয়েস অনুযায়ী মূল্যায়ন না করে নিজেদের মতো করে হিসাব করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তারা যখন হরহামেশাই দেখছেন ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনছেন। তখন তাঁর ট্রেনিংই হলো সন্দেহ করা।
’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এমসিসিআই ও এফআইসিসিআইয়ের সঙ্গে এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাদের ট্রেনিংই হচ্ছে সন্দেহ করতে হবে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো মূল্য ঘোষণা দিচ্ছেন কি না। যদি আইডিয়াল সিচুয়েশন থাকত, তাহলে যার যার ইনভয়েস অনুযায়ী হতো। কিন্তু বাস্তবতা এটা না।
’ এ সময় ব্যবসায়ীরা তাঁদের লেনদেনের সব তথ্যও দেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ সত্য ও ন্যায়ের ওপর দাঁড়াতে না পারব, ততক্ষণ আমাদের এই সমস্যার সমাধান হবে না।’
আবদুর রহমান খান বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির জরিমানা ২০০ শতাংশ। তাও প্রথমবারের মতো। ব্যবসায়ীদের যা লেনদেন হয় সব অ্যাকাউন্টসে আনেন না।
একটা বড় অঙ্ক হিসাবের বাইরে রেখে দেন। এটাও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানে। আবার পুরোটা আনলে যতটা ট্যাক্স আসবে তা পরিশোধ করার ক্ষমতা আপনার নেই। তাই ভাবেন একটু সরিয়ে রাখি। এটাও তারা জানে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
নন-কমপ্লায়েন্সের খরচ ‘আনবিয়ারেবল’ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কমপ্লায়েন্ট করদাতারা কেন কমপ্লায়েন্ট। কারণ তাঁরা জানেন নন-কমপ্লায়েন্সের মূল্য বহনযোগ্য নয়। একবার যদি সে নন-কমপ্লায়েন্সে পড়ে, এই যেমন এই আমদানিকারকের কথা বললাম, ও জীবনে ব্যবসা করতে পারবে না। এই মাল নিশ্চিত নিলাম হবে। কারণ যা নিয়মিত শুল্ক, প্লাস ২০০ শতাংশ জরিমানা মিলিয়ে যে কর আসবে কোনো দিনই সে মাল নিতে পারবে না।’
নগদ লেনদেনের শর্ত তুলে দেওয়ার প্রস্তাব : দেশে গত কয়েক অর্থবছরে করপোরেট কর হার কমানো হলেও সেটি পাওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের যে শর্ত আছে তা দেশের অনানুষ্ঠানিক খাত বড় হওয়ায় সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে এফআইসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের বৈঠকে।
ফরেন চেম্বারের করবিষয়ক উপদেষ্টা স্নেহাশীষ বড়ুয়া বাজেট প্রস্তাবের উপস্থাপনায় করপোরেট কর কার্যকর হারের ‘অপটিমাইজেশনের জন্য’ নগদ লেনদেনের থ্রেশহোল্ড প্রত্যাহার, উৎস করের বিধান সংস্কার ও ধাপে ধাপে ন্যূনতম কর বাতিলের প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো আরো প্রতিযোগিতামূলক কর পরিবেশ তৈরি করবে, যা পরবর্তী সময়ে অধিক বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ প্রবাহকে উৎসাহিত করবে।’ এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, ‘বিগত অর্থবছরগুলোতে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর হার ধারাবাহিকভাবে কমানো হলেও অর্থ আইন, ২০২৪ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তের কারণে কেউই এই সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। যেখানে ব্যাংকিং নির্ভরতা সম্কূর্ণ নয়। ফলে বড় ও মাঝারি কম্কানির জন্য এই শর্ত পালন করা খুব কঠিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ছাড়া কার্যকরী কর হার অনেক বেশি, যা উৎস কর কর্তন ও অননুমোদিত ব্যয়ের ফলে ক্ষেত্রবিশেষে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। করপোরেট করহার বাস্তবিক হারে কমানোর পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার করনীতির সংস্কার প্রয়োজন, যাতে কর আয়ভিত্তিক হয়, টার্নওভারের ওপর নয়।’