<p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে সবুজ বিপ্লবের কিছু যুগান্তকারী উদ্ভাবন কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়েছে। এর দৃশ্যমান ফল হলো প্রধান কিছু ফসল (ধান, আলু, সবজি, আম ইত্যাদি) উৎপাদনে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে প্রথম দশে থাকা। সাফল্যের প্রতিদান হলো, বৃহৎ আকারের একক ফসলের কিছু বাছাই করা জাতের ওপর নির্ভরশীলতা এবং এই জাতগুলোর উচ্চ ফলনশীলতা বজায় রাখার জন্য রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ, তার ওপর একক ফসল নিশ্চিত করার জন্য ভেষজনাশক বা আগাছানাশকের নির্বিচার প্রয়োগ। তাই দেশের সাফল্য কখনো কখনো ম্লান হয়ে যায়, যখন উৎপাদনব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলো মারাত্মকভাবে সামনে চলে আসে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুধু বাংলাদেশে দৃশ্যমান তা নয়, সারা বিশ্বই এ ব্যবস্থার শিকার; তবে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলোতেও এর ব্যাপকতা একটু বেশি। </span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="395" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/2023/1 January/13-01-2023/kalerkantho-M-2023-01-13-03.jpg" style="float:left" width="300" />মাটিতে বা ফসলে প্রয়োগ করার কোনো রাসায়নিক সারই ৩০ শতাংশের বেশি ব্যবহৃত হয় না, বাকি অংশ মাটিতে সংবন্ধন, সেচের পানি বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে জলাধারে জমা হয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতিসহ পরিবেশেরও সীমাহীন ক্ষতির কারণ হয়। এ ছাড়া নাইট্রোজেন সার বেশি দিলে গাছের ভারী ধাতু শোষণ মাত্রা বেড়ে যায়।  এ ছাড়া কীটনাশক হিসেবে বিভিন্ন কার্বামেট, পাইরেথ্রয়েড ও নিওনিকোটিনাইডের এন্ডোক্রাইনের কার্যকলাপ ব্যাহত করে এবং প্রাণী ও মানুষের প্রজননের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ আছে। আবার কীটনাশক ক্লোরোপাইরিফস, ফসফামিডন, ম্যালাথিয়ন, ফেনথিয়ন, মিথাইল ফসফরোথিওয়েট, প্যারাথিয়ন, ক্লোরফ্লুজাউরন, সাইপারমেথ্রিন বা ফক্সিমিন জমিতে প্রস্তাবিত ঘনত্বে মাটি ও রাইজোস্ফিয়ার মাইক্রোবায়োটার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভেষজনাশক গ্লাইফোসেট মাটির রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবের তুলনায় অনেক কম ঘনত্বে মাটি, উদ্ভিদ ও অন্ত্রের উপকারী জীবাণুকে বাধা দেয়। সামগ্রিকভাবে মাটি, উদ্ভিদ ও মানব জীবাণুর ওপর গ্লাইফোসেটের এই পরোক্ষ প্রভাবগুলো মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এমন বাস্তবতায় একটি বিষমুক্ত আধুনিক কৃষিব্যবস্থা সবার প্রত্যাশা।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="" height="632" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/2023/1 January/13-01-2023/kalerkantho-M-2023-01-13-03a.jpg" style="float:right" width="300" />আধুনিক কৃষিব্যবস্থা হলো কৃষি উৎপাদনে অংশীজনদের অনুশীলনের স্থায়িত্বকে বিবেচনায় রেখে সুসংঘবদ্ধ পরিকল্পনা, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করা, যা উৎপাদনকারী ও ভোক্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। বাস্তুসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাবগুলো সময়ে সংশোধন করার কার্যকর ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। মাটি কৃষি উৎপাদনের অন্যতম স্থান এবং মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করাই আধুনিক কৃষির প্রথম লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। সে জন্য এমন চর্চা মাঠ পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মাটির অণুজীবীয় কার্যাবলিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মাটিতে অণুজীব কার্যক্রম সচল থাকলে পুষ্টিসমৃদ্ধ উৎপাদন হবে, তা একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে। মানুষের জন্য ২০টি অ্যামাইনো এসিড অত্যাবশ্যক, এর ১১টি মানুষের শরীরে তৈরি হয়। ১৩ অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিনসহ ৯টি প্রোটিন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাক-সবজি, ফলমূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে, কিন্তু কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অণুজীব তৈরি করে, যারা অ্যামাইনো এসিড ও ভিটামিন তৈরিতে কাজ করে, যেমন—কোবালমিন (ভিটামিন ‘বি১২’) উদ্ভিদ বা প্রাণী কেউ উৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু এটি উদ্ভিদের মাইক্রোবায়োটা বা রুমিন্যান্ট প্রাণীদের অন্ত্রে জীবাণু দ্বারা সংশ্লেষিত হয়। দেশে কৃষি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ৩৯ শতাংশ, মোট নিঃসরণে ধান উৎপাদনে অবদান ৩২ শতাংশ, অ্যান্টারিক ফার্মেন্টেশন ৩১ শতাংশ। এটা কমানো সম্ভব। নিঃসরণ হিসাবেরও কিছু রাজনীতি আছে। যেমন—ধান কী পরিমাণ বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন সংবন্ধন করে, তার কোনো হিসাব নেই। আধুনিক কৃষিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমবে, পাশাপাশি স্থানীয় জলবায়ু ও ফসলকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তাতে ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্স প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ হবে। যা হোক, আধুনিক কৃষি প্রবর্তনে বাধা কোথায়, সে প্রশ্নের উত্তরটি হলো—প্রথমত মনস্তত্ত্ব, তা নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কৃষক পর্যন্ত। কৃষকরা তাদের লোকায়ত জ্ঞান হারাতে বসেছে, পাশাপাশি নিজেদের প্রতি আস্থা নেই বললেই চলে। দেশে অনেক কৃষিসংশ্লিষ্ট নীতি আছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে কোনো সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেই। প্রকল্পভিত্তিক কিছু কাজ হচ্ছে, তবে প্রকল্প সমাপ্তিতে তার ধারাবাহিকতা নেই। বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা সুস্থায়ী করতে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময়। কারণ সংকটই সমাধানের পথ বাতলে দেয়, যা একটি ঐতিহাসিক নিয়ম। সংকট সমাধানে পথ মসৃণ হয়, যা খুঁজে নিয়ে যথাযথ কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতির স্থায়িত্বশীল সমাধান দেওয়ার সুযোগ সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য জমিতে রাসায়সিক সার প্রয়োগের বিকল্প জৈব সার প্রয়োগকে উৎসাহিত বা বাধ্য করার কৌশল নেওয়া যেতে পারে, যা স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে সহজে তৈরি ও প্রয়োগ করা সম্ভব। জৈব সারের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিশেষ করে পরিবহনে ভর্তুকি প্রচলন করা এখন সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বসংস্থাগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করছে, নানা ধরনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হচ্ছে; কিন্তু দুঃখজনক যে সে বিষয় নিয়ে দেশে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের অগ্রগতি খুবই কম। জীববৈচিত্র্য রক্ষা আধুনিক কৃষির অন্যতম পদক্ষেপে যে ‘পিস প্যাক্ট উইথ নেচার’ নামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে, তার উদ্দেশ্য চলতি দশকের শেষ নাগাদ বন-জঙ্গল, পানি ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। পাশাপাশি বৈশ্বিক নাইট্রোজেন কমানোর চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এখন কমানোর জন্য অ্যাকশন প্ল্যান দরকার। খাদ্য সামিটে অঙ্গীকার আছে যে বর্তমান স্খলিত চাষব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে, অর্থাৎ আমাদের আধুনিক পরিবেশ অনুকূল কৃষিনীতি আছে, বিশ্বসংস্থার সঙ্গে অঙ্গীকার আছে, এখন শুধু বাস্তবায়নে কর্মসূচি দরকার। সব প্রাণের বেঁচে থাকা, সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনচক্রের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক এবং এই খাদ্য নানা রকম পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন স্তরের উপকারভোগীদের জোগান দিয়ে পুনঃপুনঃ ব্যবহারই খাদ্যব্যবস্থা। মানুষ এই খাদ্যব্যবস্থার একজন উপকারভোগী। প্রকৃতিতে মানুষের আধিপত্যে কৃষি পদ্ধতির পত্তন হয়। ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণে ফসিল জ্বালানি ও পানির প্রাপ্যতা কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী গত শতকে কৃষি উৎপাদনে যুগান্তকারী সবুজ বিপ্লবের পত্তন হয়। সবুজ বিপ্লব কেন্দ্রিক কৃষি উদ্ভাবন ও বিস্তারও অনেক হয়েছে এবং এসব উদ্ভাবন গরিব-ধনী সব দেশ প্রয়োগ করেছে। খাদ্য উৎপাদনে সফলতা ঈর্ষণীয়, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে যে স্খলিত ধারা চলছে, তা সংশোধন না করলে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।</span></span></span></span></p>