<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেধাবী ছাত্র আজিজুল হাকিমের জন্ম পাবনার বেড়া উপজেলায়। ২৭ বছর বয়সী আজিজুল পাঁচ বছর বয়সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ডান হাত হারান। যে কারণে তাকে বাঁ হাতে লিখতে হয়। নানা বাধা পেরিয়ে তিনি মানবিক বিভাগে ২০১৩ সালে এসএসসি, ২০১৫ সালে এইচএসসি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। প্রতিবন্ধী কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণ হলেও তিনি এখনো নিয়োগ পাননি। ফলে মানবেতর অবস্থায় আছে তার পরিবার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজিজুল হাকিমের মতো সহকারী শিক্ষক পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও প্রতিবন্ধী সাজ্জাদ হোসেন সাজু, কামাল হোসেন পিয়াস, কৌশিক আহমেদ সজিব, নূরে আলম, সাখাওয়াত হোসেনসহ ২৮৫ চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। আজিজুল হাকিম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরে পাবনার বেড়া উপজেলায় ৭৮ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো প্রতিবন্ধীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে, নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পাওয়ায় আমরা খুবই সংকটে আছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০২০-এর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য তারা আবেদন করেন। ২০২২ সালে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জারীকৃত ১৯৯৭ সালের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণের বিধান রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্রগুলো জানায়, ২০২২ সালে প্রকাশিত নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। ওই ফলাফলে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিলেও প্রতিবন্ধী কোটায় কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপর প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালে একটি এবং ২০২৩ সালে তিনটি রিট আবেদন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পৃথক পৃথকভাবে প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দেন। পরে চারটি রিটের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল চূড়ান্ত রায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা ২০২০-এর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সহকারী শিক্ষক পদে ২৮৫ চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী প্রার্থীর নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনাধীন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত অক্টোবর মাসে আপিল করা হয়েছে। আবেদনটি শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আইনগতভাবে ২৮৫ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে বাধ্য। তারা যদি না বুঝে এই কাজটি করে থাকেন তাহলে ঠিক আছে। যদি বুঝে এই কাজটি করেন, তাহলে তা আদালত অবমাননার শামিল। একজন নাগরিকের চাকরির অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন। আপিল করলেও আগের সার্কুলারের আলোকে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ কোটা সেখানে ছিল। তারা আইনগত এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে বাধ্য। যেখানে আদালতের রায় রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভুক্তভোগীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর রায়ের কপিসহ স্মারকলিপি দিয়েছেন। চাকরিপ্রত্যাশী কৌশিক আহমেদ সজিব বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের একটাই দাবি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে, এটা ধারাবাহিক নিয়ম। দিনের পর দিন যেন আমাদের আদালতের দ্বারে ঘুরতে না হয়, সে জন্য সরকারের উপদেষ্টাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সমন্বয়ক মো. আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সুরক্ষা আইনে বলা আছে, প্রতিবন্ধিতার কারণে কেউ কোনো বৈষম্যের শিকার হবে না। যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধিতা থাকা সত্ত্বেও কোটা অনুসারে ওই পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। সংবিধানেও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তাই সরকার আপিল প্রত্যাহার করে দ্রুত নিয়োগ কার্যকর করবে বলে আমরা আশা করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>