আর্থিক মন্দায় স্মার্টফোন বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ধস

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
আর্থিক মন্দায় স্মার্টফোন বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবসায় ধস

দেশে মোবাইল উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ ছিল বছরে চার কোটির ওপরে। আর বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে তিন কোটি বা তার কিছু বেশি। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থবিরতায় মোবাইল উৎপাদন ও বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারও কমেছে।

ঈদ উপলক্ষে নানা ছাড় দিয়ে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো। এমনকি স্মার্টফোন বিক্রি বাড়াতে ঋণও দেওয়া হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিকতায় মানুষ কম খরচ করতে শুরু করেন, ফলে স্মার্টফোন কেনা কমতে থাকে। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী তাঁদের পুরনো ফোনে থাকতেই পছন্দ করেন, কিছু গ্রাহক কম দামে সেকেন্ড হ্যান্ড ও আন-অফিশিয়াল ফোন বেছে নেন।

অন্যদিকে ডলারের উচ্চমূল্যে স্মার্টফোনের উপকরণ খরচ বেড়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে-পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্মার্টফোন বিক্রিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ডলার সংকটে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে দেশে উৎপাদন করা ফিচার ও স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার।

এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ১৮ লাখ ১৯ হাজার হ্যান্ডসেট। ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ফোন। এক মাসেই বিক্রি কমেছে চার লাখ ৩১ হাজার ফোন। অন্যদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই বিক্রি ছিল ১৮ লাখ ৯২ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২১ লাখ ৪৭ হাজার। অর্থাৎ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিক্রি কমেছে ৭৩ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি কমেছে সাত লাখ ৫৯ হাজার ফোনসেট।

টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল মোবাইলের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আইস্মার্টইউ টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে মোবাইল ফোনের বিক্রি কমছে। টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমেছে। দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং কালোবাজারে ফোন আসা বেড়ে যাওয়ায় মোবাইল ফোন বিক্রি ৩০ শতাংশ কমেছে। আর স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে। সাত মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা চলছে। কর্মসংস্থানের অবস্থা ভালো নয়। দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে মানুষের হাতে টাকা কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু স্মার্টফোন কিংবা ইন্টারনেট নয়, অন্যান্য জায়গায়ও পড়েছে। সরবরাহব্যবস্থায় সমস্যা না থাকলেও চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে দেশে স্মার্টফোন বিক্রি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার কমেছে।

এদিকে আমদানি কমায় ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সংযোজনের কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। দেশে স্থাপিত ১৭টি কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় ৩০ শতাংশ।

দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। আমদানি করা হ্যান্ডসেট থেকে সরকার সঠিকভাবে রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা, এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এনইআইআর সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। বর্তমানে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সরকার প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় হ্যান্ডসেটের বাজারে বিক্রি কমেছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বাড়ায় মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারও কমিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা স্মার্টফোনের দাম বেশি, গ্রে মার্কেটে কম হওয়ায় মানুষের সেদিকে ঝোঁক বাড়ছে। গ্রাহকের চাহিদামতো দাম কমিয়ে দেশে উৎপন্ন ফোনের মান উন্নত করা এবং দাম আরো কমানো গেলে বাজারে গতি আসতে পারে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ ফোনের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। চোরাই পথে আসা অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুরক্ষা দিতে ২০২১ সালের জুলাইয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রকল্প চালু করে বিটিআরসি। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মে কার্যক্রম শুরুর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এই প্রকল্পের ২৯ কোটি টাকা সরকারের সুবিধাভোগীরা ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। ফলে অবৈধ ফোনের বাজার ক্রমেই বেপরোয়া গতিতে বাড়ছে।

মোবাইলে ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ১.৩২ কোটি : দেশে সাত মাস ধরে টানা মোবাইল ও মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমছে। মানুষ এই খাতের পেছনে ব্যয়ও কমিয়ে দিয়েছেন। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত আগের সাত মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহক কমেছে ৯৪ লাখের মতো। একই সময়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে এক কোটি ৩২ লাখ। মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড মিলিয়ে দেশে এখন ইন্টারনেটের মোট গ্রাহক ১৩ কোটির মতো, যা গত জুনে ছিল প্রায় ১৪ কোটি ২২ লাখ।

বিটিআরসি গত ৬ মার্চ মুঠোফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, গত জুন মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর তা কমতে শুরু করে। জানুয়ারিতে গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখের মতো।

সবচেয়ে বেশি কমেছে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক। গত জুনে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল প্রায় ১২ কোটি ৯২ লাখ। এর পরের মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা কমতে থাকে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চিড়িয়াখানায় ৮ লাখ দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা

মোবারক আজাদ
মোবারক আজাদ
শেয়ার
চিড়িয়াখানায় ৮ লাখ দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা

রাজধানীর মিরপুরে ১৮৬ একর জায়গা নিয়ে গঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। ঈদের ছুটিতে এই বিনোদনকেন্দ্রে থাকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। তাই এবারও চিড়িয়াখানায় ঈদের ছুটিতে ছয় দিনে (ঈদের দিন থেকে ৫ এপ্রিল) প্রায় আট লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই বিশালসংখ্যক দর্শনার্থীর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে চিড়িয়াখানাকে নতুন রূপে সাজানো হবে। বিশেষ করে নানা রঙে রাঙানো হবে চিড়িয়াখানার বেষ্টনী, দেয়াল ও বিভিন্ন গাছের গোড়া। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দর্শনার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া হবে ঈদের শুভেচ্ছাবার্তা।

পাশাপাশি কিছু খাঁচা ও শেডে নতুন করে বেষ্টনী দেওয়ার কাজ চলছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য চিড়িয়াখানার ভেতরে আরো ডাস্টবিন তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এবারের ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের আগমন এবং সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চার-পাঁচটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া গতবারের মতো সাজানোর জন্য গেট থেকে শুরু করে কিছু নতুন রঙিন পতাকা থাকবে, এগুলো দেখে যেন শিশুরা আনন্দ পায়।

এবারের ঈদে প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানা বরাবরের মতোই প্রস্তুত থাকবে। আমরা থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়েছি। তাদের সঙ্গে সোমবার নিরাপত্তা বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ঈদের সময় দর্শনার্থীদের যেন কোনো জটলা তৈরি না হয়, সে জন্য নেওয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে চিড়িয়াখানার পশুগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যা যা করা দরকার, আমরা সেগুলো এরই মধ্যে সম্পন্ন করছি।

ঈদে নতুন কোনো প্রাণী যুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কোনো প্রাণী যুক্ত হচ্ছে না। তবে প্রায় বছরখানেক হলো বাঘের দুটি এবং জিরাফের দুটি শাবকের বয়স প্রায় এক বছর, এগুলো ডিসপ্লে করছি, অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি এগুলো দেখতে পারবে দর্শনার্থীরা।

ঈদে দর্শনার্থীর সমাগম নিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান করা যায়, ঈদের দিন প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী আসে, এর পরের দুই দিন প্রায় দেড় লাখ করে, চতুর্থ দিন এক লাখের বেশিএভাবে শনিবার পর্যন্ত (৫ এপ্রিল) সব মিলিয়ে আট লাখের মতো দর্শনার্থী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিরূপ আবহাওয়া থাকলে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম হতে পারে।

চিড়িয়াখানার পরিচালক আরো বলেন, ঈদে চিড়িয়াখানার ভেতরে হকারের কোনো উৎপাত থাকবে না। ভেতরে এবং গেটের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত টহল থাকবে, যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তথ্যকেন্দ্র থেকে দর্শনার্থীরা সেবা পাবে। তথ্যকেন্দ্রে স্টাফ নিয়েজিত থাকবে, যেন দর্শনার্থীদের সমস্যা হলে তাঁরা তত্ক্ষণাৎ সেবা দিতে পারেন। সব সময়ের মতো এবারও ঘুরতে আসা বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা থাকবে। এই চেয়ার পাওয়া যাবে চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্রে।

 

 

 

মন্তব্য

ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্ন

শেয়ার
ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্ন
ঈদযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য
অর্থ উপদেষ্টা

ঈদের ছুটিতে স্থবিরতা আসবে না অর্থনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদের ছুটিতে স্থবিরতা আসবে না অর্থনীতিতে

আসন্ন ঈদের ছুটিতে উপদেষ্টা পরিষদের বেশির ভাগ সদস্য ঢাকায় থাকবেন জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঈদের দীর্ঘ ছুটি হলেও অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা আসবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।

এবার ঈদে দীর্ঘ ছুটি, অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা দেখা দেবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, না, না,

অর্থনীতিতে কোনো স্থবিরতা আসবে না। সব কিছু সচল থাকবে।

দরকার হলে বন্ধের মধ্যে মিটিং করব।’ ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম একটা প্রোগ্রাম করেছিলেন, ১০০ দিনের গ্যারান্টি কর্মসংস্থান। আপনারা এ ধরনের কোনো প্রকল্প নেবেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখি, আমরা এটা দেখব। তবে ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে ভালো হবে রেগুলার প্রকল্পের মাধ্যমে লোকাল বেইস কর্মসংস্থান।

বৈঠকের বিষয়ে তিনি জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ১১টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

ভারতের ৫০ হাজার টন চাল আসছে : খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে সরকার। এতে ব্যয় হবে দুই কোটি ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫৯ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪২৪.৭৭ মার্কিন ডলার। 

সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্য থেকে দুই কার্গো এলএনজি : দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোটেশনের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এবং যুক্তরাজ্য থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪.০৮ ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৫৮ হাজার ১১২ টাকা।

রাশিয়া-সৌদি আরবের ৪১৮ কোটি টাকার সার আসছে : রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়া ও সৌদি আরব থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১৮ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার জেএসসি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ধরা হয়েছে ৩০৬.৩৭ মার্কিন ডলার।  এদিকে মুন্সীগঞ্জে বিসিক কেমিকাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আগে কাজের পরামর্শক নিয়োগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে ভেরিয়েশন প্রস্তাবসহ তিন ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ। এই তিন প্রস্তাবে ব্যয় হবে ২২৯ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৩৪ টাকা।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে ধানমণ্ডিতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ছয়জন গ্রেপ্তার

    ডাকাতদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
র‌্যাব-পুলিশ পরিচয়ে ধানমণ্ডিতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ছয়জন গ্রেপ্তার

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে গত বুধবার ভোরের দিকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাসায় অভিযানের নামে ডাকাতি করতে যাওয়া দলটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ওই বাসায় ডাকাতির আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মতো প্রস্তুতি নিয়েছিল ডাকাতদল। অনেকে সে সময় র‌্যাবের পোশাক পরা ছিল। কেউ কেউ নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়।

কয়েকজন নিজেদের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দেয়। বোমা হাতে মিডিয়ার লোক পরিচয় দেওয়া ডাকাতও ছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো ফরহাদ বীন মোশারফ, ইয়াছিন হাসান, মোবাশ্বের আহাম্মেদ, ওয়াকিল মাহমুদ, আবদুল্লাহ ও সুমন।

ডাকাতদল গ্রেপ্তারে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ায় ছয় নিরাপত্তাকর্মীকে পাঁচ হাজার টাকা করে পুরস্কার দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের হাতে পুরস্কারের টাকা তুলে দেন তিনি। এ সময় ডিএমপি কমিশনার তাঁদের অক্সিলিয়ারি ফোর্সে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিষয়ে গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত র‌্যাব লেখা কালো রঙের দুটি জ্যাকেট, তিনটি কালো রঙের র‌্যাব লেখা ক্যাপ, একটি মাইক্রোবাস, পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট, একটি লোহার তৈরি ছেনি, একটি পুরনো লাল রঙের স্লাই রেঞ্জ ও নগদ ৪৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, ডাকাতির সময় ওই বাসায় ২৫-৩০ জন ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যে ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরনের ফুল প্রিপারেশন ডাকাতদলের ছিল। তাদের সঙ্গে র‌্যাবের কটি ও জ্যাকেট পরা লোকজনও ছিল। সঙ্গে মাইক্রোফোন হাতে মিডিয়ার লোক পরিচয় দেওয়া লোকও ছিল, যারা সোর্স হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে পাঁচ-ছয়জন ছাত্রদের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়েছেন।

বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর সড়কের ওই বাসায় ডাকাতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ওই বাড়িটির মালিক এম এ হান্নান আজাদ স্বর্ণ ব্যবসায়ী। অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স নামে তাঁর একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে।

উপকমিশনার বলেন, বাড়িটির নিচতলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস রয়েছে। এ ছাড়া ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে।

তিনি বলেন, ডাকাতদলটি তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে ওই বাসার সামনে এসে গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের বলে, তারা র‌্যাবের লোক, তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে। এ জন্য তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগাল করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাঁদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের কয়েকজন গেটের ওপর দিয়ে টপকে ভেতরে ঢুকে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়িচালককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা থেকে ডাকাতদলটির টার্গেটে ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকে তল্লাশির নামে লুটপাট করে।

এরপর ডাকাতরা নিরাপত্তারক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন।

ডাকাতরা তখন তাঁদেরও আটক করে মারধর করে অফিসের ও বাসার চাবি দিতে বলে। এরপর তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে এবং অফিসের বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়।

সব শেষে বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাতদল ওই বাসা থেকে দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

উপকমিশনার মাসুদ বলেন, এসবের মধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে খবর দিলে টহল পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের গ্রেপ্তার করে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ