রাজধানীতে বেশ কিছুদিন ধরে মশার উপদ্রব বেশ বেড়েছে। দিন-রাত মশার কামড়ে মানুষ অতিষ্ঠ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মাঝে-মধ্যে মশা মারার নানা তোড়জোড় দেখালেও দিনশেষে সেগুলো কাজে আসছে না। এরই মধ্যে আগামী ‘মে’ মাস থেকে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মশার উৎপাতে ডেঙ্গুর শঙ্কা
শিমুল মাহমুদ

কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল মাসের ঝড়বৃষ্টিতে কিউলেক্স মশা কমবে, তবে এডিস মশা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। মে মাসে বৃষ্টিপাতের কারণে জুনে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক হাজার ৮৬২। গত বছরের জানুয়ারি থেকে একই সময় রোগী ছিল এক হাজার ৬৫৯ জন।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর এডিস মশা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হবে। কারণ গত বছরের মাঝামাঝি থেকে মশক নিধন কার্যক্রম ছিল সীমিত। এবারও স্থানীয় সরকার অগোছাল অবস্থায় রয়েছে। মশার বিস্তার রোধে যথাযথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে তাপমাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। পরের মে মাসজুড়ে বৃষ্টিপাত থাকবে। এ সময় এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। জুন থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে প্রস্তুতিমূলক কাজ এখনই শুরু করা উচিত। বিশেষ করে ডেঙ্গু মশার প্রজনন তথ্য সংগ্রহ ও স্থানগুলো চিহ্নিত করে প্রজননস্থল ধ্বংস করা। একই সঙ্গে জনসচেতনতা তৈরিতে জোর দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুই সিটি করপোরেশনের প্রস্তুতি : ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম ধারণা নিতে এডিস মশার জরিপ হয় প্রতিবছর তিনবার—বর্ষার আগে, বর্ষার সময় ও বর্ষার পরে। এডিস মশার ঘনত্ব দেখে আগাম ধারণা পাওয়া যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটুকু হবে। এসব জরিপ হয় মূলত ঢাকার দুই সিটিসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে। তবে এবার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনায় অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) না থাকায় বর্ষার আগে কোনো জরিপ হয়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. হালিমুর রশীদ বলেন, ‘রোগী বাড়ছে। এর অর্থ হলো মশা বাড়ছে। আমরা রোগীর চিকিৎসার বিষয় দেখি। মশা নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু মশা তো নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘আমরা আমাদের নিয়মিত ডেঙ্গু কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এপ্রিল না হলেও জুন-জুলাইয়ে বেশি বাড়ে সেটি মাথায় রেখে আমরা এগোচ্ছি। ঈদের পর থেকে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করব।’
নতুন মশার ওষুধ টেস্ট করা হবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা আগের ওষুধ দিয়েই টেস্ট করব। সেটি কার্যকারিতা হারালে আমরা নতুন ওষুধের কথা চিন্তা করব।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিস মশার জরিপ করেছি। এতে এডিস মশার লার্ভাও বেশি পেয়েছি। এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
আক্রান্তদের ৩১% ঢাকার দুই সিটির : এবার ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি আতঙ্কের। এ বছর এখন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন, এর ৩১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। অন্যরা ঢাকার বাইরের। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশালে। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে)।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেখছি না। স্থানীয় সরকার যখন সচল ছিল তখন তারা কাজ করেনি। এখন নতুন করে আরেকটা অজুহাত যুক্ত হলো—সিটি করপোরেশনগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা নেই।
তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রিক রোগ শনাক্তকরণে কমিউনিটি ভিত্তিক যে প্রচেষ্টা, সে বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জনস্বার্থে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন কাজ করেছে। সেখানেও এসব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি। অথচ কমিউনিটি ভিত্তিক রোগ প্রতিরোধ, রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা করা গেলে শনাক্ত বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে। ২০২৩ সালে ডেন-২ ধরনটি বেশি ছড়ায়। গত বছরও ডেন-২ ধরনটিতে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি ছিল। কিন্তু শেষ দিকে ডেন-২-এর পাশাপাশি ডেন-৪-এর সংক্রমণও দেখা গেছে। এবার যদি ডেন-৩ বা ডেন-৪ দ্বারা আক্রান্ত শুরু হয়, তাহলে আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুও বাড়বে।
সম্পর্কিত খবর

চীনে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ছে
চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট
নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করতে বন্দরনগর চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। তবে চড়া বিমানভাড়া শহরটিতে ভ্রমণের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
কুনমিংয়ের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল তিনটি হলো দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স; দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। চিকিৎসার ধরন, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছেন।
কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-কুনমিং রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমে আসবে।
চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুনমিংয়ের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ সহনীয়। একজন চীনা নাগরিকের সমান ফিই দিয়ে থাকেন একজন বাংলাদেশি রোগী।
বর্তমানে চায়না ইস্টার্নের ঢাকা-কুনমিং সরাসরি দৈনিক ফ্লাইট আছে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। রাউন্ড ট্রিপ ভাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা থেকে কুনমিং রুটে বিমানভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের জন্য আরো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উন্মুক্ত করবে।
আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল সাংবাদিককে কুনমিংয়ে পাঠানো হবে সরেজমিনে চিকিৎসার সুবিধাগুলো দেখে আসার জন্য।
গত মাসে প্রথমবারের মতো কয়েক ডজন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে যান। তাঁরা সেখানকার হাসপাতালগুলোর মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে অনেকেই যাতায়াত ব্যয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক দেশ। চীন থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্প-কারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পণ্য আমদানি হয়। তাই প্রতিবছরই হাজার হাজার ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করে থাকেন। তবে দুই দেশের মধ্যে এত দিন সরাসরি বিমানসেবা ছিল না।
কুনমিংয়ে রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত স্টোন ফরেস্ট। কুনমিংকে চীনারা নাম দিয়েছে ‘চিরবসন্তের নগর’। সারা বছরই সেখানে ফুল ফোটে। রঙিন থাকে কুনমিংয়ের পথঘাট ও বাসাবাড়ির আঙিনা।
এমনিতে কুনমিং হচ্ছে চীনের ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ থেকে যেসব পর্যটক, শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন প্রদেশে যান, তাঁদের পরদিন বিমানের ফ্লাইট ধরতে প্রথমে কুনমিংয়ে এক রাত অবস্থান করতে হয়।
বিমানে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের ইউনান প্রদেশের কুনমিং মাত্র দুই ঘণ্টার পথ, অর্থাৎ প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সীমানার পূর্ব পাশেই ইউনানের অবস্থান। চীনের ৪৩টি প্রদেশের একটি ইউনান।

সবিশেষ
আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা বোরকা থেকে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। আবায়াও ইসলামী নারীদের পছন্দের পোশাক। আবায়ার সঙ্গে থাকে হিজাব, মাথার ওড়না, এমনকি নেকাবও। অথবা বলা যেতে পারে, আফগান আধুনিক নারীরা সৌদি স্টাইলের পোশাক আবায়া অথবা নিকাব-ঘোমটার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
২০২১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তালেবানরা নারীদের ওপর কঠোর পর্দা প্রথা চালু করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একই আইন চালু ছিল।
তরুণ আফগান নারীরা আবায়া পরলেও মাথায় ঠিকই হিজাব পরেন। আর যাঁরা হিজাব পরেন না, তাঁরা মুখে মেডিক্যাল মাস্ক লাগিয়ে ঘর থেকে বের হন। নিদেনপক্ষে সৌদি আবায়ার ওপর নিকাব পরেন, যা তাঁদের চোখ ছাড়া আর সব কিছু ঢেকে রাখে।
রাজধানী কাবুলের ২৩ বছরের নন্দিনী তাহমিনা আদেল বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা মনে হয় না বোরকা বেছে নেবেন। ডিজাইন ও কালারের কারণে তাঁরা এটা মানতে অনাগ্রহী।

প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারও শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাসের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয়নি।
এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় শতভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। আর টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টিএনজেডের তিন মালিক শ্রম ভবনে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকবেন।
বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ঈদের আগেই প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজিএমইএর সদস্য কারখানা দুই হাজার ১০৭টির মধ্যে দুই হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, যা প্রায় ৯৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চ মাসের বেতন (১৫-৩০ দিনের) পরিশোধ করেছে—এমন কারখানা দুই হাজার ৭৯টি, যা ৯৮ শংতাশের বেশি।
এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএসহ অন্য সংগঠনের প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে।
তবে টিএনজেডসহ সাতটি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। এই বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ঈদের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সেটা মানেননি।
এ প্রসঙ্গে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের তিনজনকে হেফাজতে রাখা হচ্ছে। কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত শ্রমিকদের পাওনা তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পূর্ণ সমাধান দেওয়া হবে।’
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলস—এ দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।’
গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি ৫ কারখানার শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি পাঁচ কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে এই শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জারা কম্পোজিট, মোগরখাল এলাকার এএনজেড অ্যাপারেলস, তিন সড়ক এলাকার স্টাইল ক্রাফট, শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকার এইচডিএফ অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়্যার গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জারা নিট কম্পোজিট ও হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার মালিক লাপাত্তা। এতে বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জারার ৪০০ এবং হ্যাগ নিটওয়্যারের ৩০০ শ্রমিক। এইচডিএফ অ্যাপারেলসের দুই হাজার ৩০০ শ্রমিকও বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম
স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন
মোবারক আজাদ

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়া। তবে ঈদের এই আনন্দ-খুশিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় না অনেকের। উল্টো ঈদ এলে বিষাদ নেমে আসে তাঁদের জীবনে, দুই চোখ বেয়ে জল নামে।
বৃদ্ধাশ্রমটির একজন বাসিন্দা জোহরা বেগম (৮০)।
জোহরা বেগমের মতো আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছেন রেনু বেগম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকায় তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। পারিবারিক শত্রুতার জেরে সব কিছু হারাতে হয় তাঁকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছুদিন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন। এরপর অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাঁকে একা তিন মাস কাটাতে হয়। পরে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সে বাসার লোকজন আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এখানে পাঠান। রেনু বেগম জানান, এখানে তিনি অনেক ভালো আছেন। এখানে আসার পর তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিজের সংসার, সন্তান ও স্বামীর কথা ভুলতে পারছেন না।
আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জারা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মায়েদের তো আপনজন বলতে আমরাই। আমাদের সঙ্গেই তাঁরা ঈদ করবেন। ঈদের দিন সেমাই, পিঠা, পোলাও-রোস্টসহ একটি পরিবারে সাধারণভাবে যা যা আয়োজন থাকে আমরাও এখানে এই মায়েদের জন্য সেসবের আয়োজন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ঈদের আগের দিন এই মায়েদের হাতে মেহেদি পরাব, ঈদের দিন নতুন শাড়ি, ম্যাক্সির সঙ্গে ইমিটেশনের গহনা পরিয়ে তাঁদের সাজাব। আর ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং এই মায়েদের শরীর ভালো থাকলে তাঁদের পাশের পার্কে ঘুরাতে নিয়ে যাব।’
ঈদের দিন এই অসহায় বৃদ্ধাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, জানতে চাইলে জারা জামান বলেন, ‘এই মায়েরা আক্ষেপ করেন, যদি তাঁদের স্বামী-সন্তান থাকত, তাহলে তাঁদের এখানে আশ্রয় নিতে হতো না। আবার সন্তান থাকলে নিশ্চয় তাঁদের দেখতে আসত। ভালো মানের খাবার, পোশাক, আমাদের শতভাগ আদর-ভালোবাসা দেওয়ার পরও অনেকের পরিবার না থাকার আক্ষেপ ঘুচছে না। এ কারণে আমরা তাঁদের বেশি করে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে এই মায়েরা মন খারাপ না করেন।’
প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা রুমি রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুরুতে ২০২২ সাল থেকে আমরা চারজন নিঃসন্তান নারী নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা শুরু করি। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৯। মা-বাবাকে নিজের সন্তানরা যেভাবে ভালোবাসে, আদর-যত্নে রাখে, আমরাও এখানে থাকা মায়েদের সেভাবে রাখার চেষ্টা করছি। যেকোনো উৎসবের সময় আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে এখানে থাকা ২৯ জন মায়ের মধ্যে বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের ৮০ শতাংশ প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মা-ও রয়েছেন। এই মায়েদের ঈদ উৎসব কাটে পরিবারের সদস্যদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট ও অভিমান বুকে চেপে।
জানা গেছে, আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম প্রতি মাসে এই ময়েদের ভরণ-পোষণে ব্যয় করে প্রায় ছয় লাখ টাকা। এই ব্যয় নিঃসন্তান চার নারীসহ তাঁদের পরিবার ও পরিচিতজনরা বহন করেন। কিছু অর্থ অনুদানের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এক বেলা খাবার সরবরাহ কিংবা কেউ কিছু কাপড়চোপড় দিয়ে যান। তবে রমজান মাসে কিছু শাড়ি ও জাকাত পাওয়া যায়। তবে জাকাতের পরিমাণ আরো বাড়লে এই মায়েদের সেবায় আরো কিছুটা বেশি ব্যয় করা যেত।