<p>বাঙালি যে ভোজনরসিক, তার প্রমাণ পাওয়া যায় পুরান ঢাকার কাচ্চি বা চট্টগ্রামের মেজবানের আসরে। বাঙালির বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানে কবজি ডুবিয়ে খাওয়াটার রীতি যা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। দেশীয় খাবার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে তাই আয়োজন করা হয়েছে টেস্ট অব বাংলাদেশ।</p> <p>ভোজনরসিকরাও ছুটছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের স্বাদ নিতে রাজধানীর বনানীতে। সেখানের কামাল আতাতুর্ক মাঠটি যেন দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার আর ভোজনরসিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।</p> <p>আর এই মেলবন্ধন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা ও পর্যটকদের আকর্ষণের জন্যই এই অনুষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার ‘টেস্ট অব বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভাল’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী খাবার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, যা চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ৬২টি স্টল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উদ্যোক্তারা।</p> <p>বাসায় পিঠা বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করেন, পিঠা বাজারের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান খান রুবেল। তার প্রতিষ্ঠান গত বছর শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় পিঠা উৎসবে প্রথম স্থান অধিকার করে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় সব ধরনের পিঠা তৈরি করি। সেখান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করি। মেলায় আসার ফলে আমাদের প্রচার-প্রসার হচ্ছে।’</p> <p>চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার মেজবান নিয়ে এসেছেন মো. সুজন। স্টলের সামনে লেখা ‘মেজ্জান হাইলে আইয়ুন’। সুজন বলেন, চট্টগ্রামে যেভাবে মেজবান প্রস্তুত করা হয়, ঠিক সেভাবেই রান্না করা হয়েছে।’</p> <p>দেশীয় খাবারের বড় এই আয়োজনে রয়েছে ঢাকার বিউটি লাচ্ছি, লালবাগের কাচ্চি বিরিয়ানি, ফাইজানে মদিনার বিখ্যাত বোবার বিরিয়ানি, বাকরখানি, বিসমিল্লার কাবাব, কুমিল্লার রসমালাই, খুলনার চুইঝাল, শেরপুরের ছানার পায়েস ও তুলশীমালার চালের স্টল, বিখ্যাত রাজা-চা, ছোটন মামার ফায়ার পান, হাঁসের মাংস, ছিটারুটি, যশোরের জামতলার সাদেকগোল্লা, বগুড়ার দই, ক্ষীরসা, কক্সবাজারের সি-ফুড, পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাম্বো চিকেন, বরিশালের রসচুসি, দুধচিতই, পাটিসাপটা, পোয়াপিঠা, বেনিপিঠা, জামাইপিঠা, তালেরপিঠা, বউসুন্দরী, লবঙ্গ লতিকা, ইলিশপিঠা, ভাপাপুলি, মোরগ পোলাও, তেহারি ও বোরহানি, ফুচকা, হালিম, ডাবের পুডিং, নাটোরের কাচাগোল্লা ও সন্দেশ, মৌলভীবাজারের মণিপুরি হাইনা চা ও খাবার, রাজশাহীর কালাইরুটি ইত্যাদি। এ ছাড়া পাঁচতারামানের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও, শেরাটন ঢাকাও স্টল নিয়েছে।</p> <p>অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে রাজশাহীর গম্ভীরা, কুদ্দুস বয়াতির গান, বাউল গান, পুথিপাঠ, পাহাড়ি নৃত্য, অঞ্চলভিত্তিক খাবার নিয়ে রম্যবিতর্ক, পুতুলনাচ, পাহাড়ি নৃত্য; জেলে, সাপুড়ে, মাঝিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর যৌথ নৃত্য, ব্যান্ডসংগীত। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া মীর মুগ্ধের স্মরণে দর্শনার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি পানের ব্যবস্থাও রয়েছে।</p> <p>উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) ফাতেমা রহিম ভীনা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাভেদ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ রন্ধনশিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও দর্শনার্থীরা।</p>