নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদে অবৈধভাবে মাছের ঘের করে শুকনা মৌসুমে নদ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। ঘেরের কারণে নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। দখলদাররা বলছেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ইজারা নিয়েই তাঁরা ঘের করেছেন। কিন্তু উপজেলা ভূমি অফিসে নদী ইজারা দেওয়ার কোনো নথি নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের দুই তীরের রূপগঞ্জ অংশে ৩০০ ঘের ২০০ দখলদারের কবলে রয়েছে। এসব দখলদার এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। নদ-নদীর সীমানায় তাঁদের জায়গা-জমি না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে তাঁরা নদ-নদীতে বাঁশ পুঁতে ঘের তৈরি করেন। একেকটি ঘের থেকে শুকনা মৌসুমে অন্তত দু-তিনবার মাছ ধরা হয়।
প্রতিবারে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হয়। একটি ঘেরে দুইবারে প্রায় এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। সে হিসাবে ৩০০ ঘের থেকে বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়। ঘেরের পরিধি বাড়াতে বাড়াতে একসময় কৌশলে নদ-নদী ভরাট করে ফেলা হয়। পরে নদ-নদীর আর কোনো চিহ্ন থাকে না। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই ছোঁপ ফেলার আয়োজন করা হয়।
‘জাল যার, জলা তার’—সরকারের এই উদার মৎস্য নীতি আইন লঙ্ঘন করে জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনকে মাছ শিকারে বাধা দিচ্ছেন দখলদাররা। নদ-নদীর স্রোতমুখে ঘের দেওয়া, জাল পাতাসহ সব রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর ঘের তৈরি করে দখলের কাজটি করে যাচ্ছেন ওই প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তারাব থেকে দাউদপুরের খৈসাইর পর্যন্ত নদীর দুই তীরে প্রায় ২০০ ঘের।
আর বালু নদের ডেমরা থেকে তলনা পর্যন্ত দুই তীরে আরো ১০০ ঘের ফেলা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর ইছাখালী এলাকার আধাকিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে ১৩টি ঘের। কথা হয় ইছাখালী এলাকার ঘেরের মালিক আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি বরাবর, তাই ছোঁপ ফালাইছি। অনুমতি নিমু ক্যা আবার! বছরে দুইবার মাছ ধরবার পারি।’
আরেক ঘের মালিক বদু মিয়া। তিনি বলেন, ‘মৎস্য অফিস আর এলাকার নেতাগো টেকা আর মাছ দিই। গাঙে মাছ ধরমু, এইডার আবার অনুমতি লাগব ক্যান।’
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘নদী দখল করে ঘের দেওয়ার কোনো বিধান নেই। কেউ যদি দিতে চায়, তাহলে অবশ্যই ভূমি অফিসের অনুমতি প্রয়োজন। মৎস্য অফিস টাকা নেয়, এটা সঠিক নয়।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) তারিকুল আলম বলেন, ‘মৎস্য কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি দেখব।’