প্রোফাইল
হামজা দেওয়ান চৌধুরী
জন্ম
১ অক্টোবর, ১৯৯৭ (বয়স ২৭)
জন্মস্থান
লাফবরো, লিস্টারশায়ার
মা
রাফিয়া চৌধুরী
বাবা
মোরশেদ দেওয়ান চৌধুরী
গ্রামের বাড়ি
স্লানঘাট, বাহুবল, হবিগঞ্জ
পজিশন
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
বর্তমান ক্লাব
শেফিল্ড ইউনাইটেড (ধারে লিস্টার সিটি থেকে)
যুবদল
লিস্টার সিটি (২০০৫-২০১৫)
সিনিয়র ক্যারিয়ার
লিস্টার ৯১ ম্যাচ (২০১৫— )
বার্টন আলবিয়ন, ধারে ২৬ ম্যাচ (২০১৬-১৭)
ওয়াটফোর্ড, ধারে ৩৬ ম্যাচ (২০২২-২৩)
শেফিল্ড ইউনাইটেড, ধারে ৮ ম্যাচ (২০২৫—)
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১, ৭ ম্যাচ (২০১৮-১৯)
অর্জন
লিস্টার সিটি
এফএ কাপ শিরোপা ২০২০-২১
এফএ কমিউনিটি শিল্ড ২০২১
ইএফএল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৪
বার্টন আলবিওন
লিগ ওয়ান রানার্স আপ ২০১৫-১৬
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১
তুলন টুর্নামেন্ট ২০১৮
ওসমানী বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে কালো রঙের প্রাডো গাড়িটা ছুটতেই একটু দম ফেলার ফুরসত মিলল হামজা চৌধুরীর। এর আগে সিলেটে নামার পর থেকে পুরো সময়টাই তো মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন বাংলাদেশের হয়ে মাঠ দাপানোর অপেক্ষায় থাকা এই ফুটবলার।
হামজা এবং তাঁর পরিবারের গন্তব্য হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামের নিজ বাসভবনের পথে ছুটতে থাকা গাড়ি অবশ্য বিমানবন্দর ছেড়ে আসার ৪০ মিনিট পর আচমকা এক যাত্রাবিরতিও নিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থেমে গেল হামজাকে অনুসরণ করা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) একটি গাড়িও।
একই সমান্তরালে অন্য একটি গাড়িতে থাকা কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকেরও না থেমে উপায় কী! নেমে জানা গেল, হামজা এবং তাঁর পরিবারের জন্য খাবারদাবার তোলা হয়েছিল বাফুফের গাড়িতে। সন্তানের ক্ষুধা লেগে যাওয়ায়ই ক্ষণিকের যাত্রাবিরতি নেওয়ায় হামজাকে এই সুযোগে পাওয়া গেল একান্তে। ক্রীড়া সাংবাদিক পরিচয় দিতেই সিলেটি টানের বাংলায় হামজার জিজ্ঞাসা, ‘ভালো আছেন?’ কুশল বিনিময় থেকেই এগোতে শুরু করে আলাপ। আলাপে আলাপে বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ার শুরুর লগ্নে তাঁর ভাবনাই শুধু নয়, জানা হয় হবিগঞ্জের দূর গ্রামে হামজার ‘চ্যারিটি’র গল্পও। কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য সেই আলাপের বিস্তারিত
প্রশ্ন : এর আগেও আপনি বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু এবার এলেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে। কেমন লাগছে?
হামজা চৌধুরী : এখানে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখানে আমি বারবার আসতে চাই।
এখন তো আমি বাংলাদেশেরই হয়ে গেছি। ইনশাআল্লাহ আরো অনেকবার আসব।
প্রশ্ন : বিমানবন্দরে এত এত ভালোবাসা পেলেন। কথাই বলতে পারলেন না...।
হামজা চৌধুরী : সত্যি, অনেক ভালো লাগা কাজ করছে।
আমি রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে। এই অনুভূতি অন্য রকম। আমি বাংলাদেশের মানুষের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই।
প্রশ্ন : প্রতিদান কিভাবে দিতে চান?
হামজা চৌধুরী : আমার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে নিয়ে যাওয়া। এরপর এই দেশের ফুটবলের শক্ত ভিত গড়ে দিতে চাই। সবার মধ্যে ভালো করার মানসিকতা ঢুকিয়ে দিতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। আশা করি, আমি সাহায্য করতে পারব।
প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ। জেতার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
হামজা চৌধুরী : ইনশাআল্লাহ আমরা জিতব। কোচের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা যদি ঠিকঠাক খেলতে পারি তাহলে জিতে ফিরব। সেই বিশ্বাস আমার আছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবলাররা আপনার সঙ্গে খেলার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এটা কি আপনি জানেন?
হামজা চৌধুরী : হ্যাঁ, শুনেছি। তাঁদের সঙ্গে খেলতে আমি নিজেও উত্সুক হয়ে আছি। আশা করি, আমরা সবাই মিলে ভালো একটা ফলই এনে দিতে পারব।
প্রশ্ন : পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবেন বলে তারা কতটা রোমাঞ্চিত?
হামজা চৌধুরী : অনেক রোমাঞ্চিত। আগে তো শুধু আমি একা এসে গ্রামে ঘুরে যেতাম। এবার আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। ওরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চেয়েছে। যদিও আমরা খুব কম সময় নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : শুনেছি, আপনার অর্থায়নে গ্রামে একটি মাদরাসা চলে। কোন ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ?
হামজা চৌধুরী : আল্লাহ খুশি হবেন বলে। আমার খুব ভালো লাগে। বাচ্চাদের আমি খুব ভালোবাসি।
প্রশ্ন : এখন তো রোজার মাস চলছে। কিভাবে ফিটনেস ধরে রাখার কাজ করেন?
হামজা চৌধুরী : বিশেষ কিছু করা হয় না। সাধারণত যা যা করি, এখনো তা-ই করি। ঘুম, নামাজ, অনুশীলন ও ম্যাচ; খেলেই নিজেকে ফিট রাখি।
প্রশ্ন : আপনার দল শেফিল্ড ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে ওঠার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। কতটা আশাবাদী আপনি?
হামজা চৌধুরী : এই দলে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। খুব ভালো কাটছে আমার সময়। ইনশাআল্লাহ, আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারব।
ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১
২০১৮ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের জার্সি গায়ে জড়ান হামজা। ফ্রান্সের তুলন টুর্নামেন্টে চীনের বিপক্ষে অভিষেক হয় তাঁর। পরের বছর অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোর দলেও ডাক পান তিনি।
তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে।
ইংল্যান্ড মূল দলের স্বপ্ন
২০১৯ সালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ইংল্যান্ড সিনিয়র জাতীয় দলে খেলা তাঁর বড় স্বপ্ন। সে জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। সে সময় লিস্টার সিটিতে খেলা তাঁর সতীর্থ বেন চিলওয়েল ডাক পান গ্যারেথ সাউথগেটের দলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ আসেনি হামজার।

দৃষ্টি বাংলাদেশে
২০২২ সালে আরেক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ফুটবলার আনোয়ার উদ্দিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামজা জানান বাংলাদেশের হয়ে তাঁর খেলার স্বপ্নের কথা। সেই সাক্ষাৎকারেই তিনি জানান, বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ানোটা তাঁর জন্য হবে সম্মানের।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট
বাফুফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে পান হামজা। শুরুতে ইংলিশ এফএর অনাপত্তিপত্র আনতে হয় বাফুফেকে, তারপর হামজার বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাওয়ার বিষয়টি পাঠানো হয় ফিফায়। গত ডিসেম্বরে ফিফা থেকে সেই অনুমোদন মিললে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আর বাধা থাকে না তাঁর।

হামজাবরণ
অবশেষে গতকাল সিলেটে হামজাকে রাজকীয়ভাবে বরণ করে নিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। আজ রাতেই তিনি জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। জানিয়েছেন, ৮ নম্বর জার্সি পরে তিনি খেলতে আগ্রহী। ২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর।
