<p>মসজিদে ইসতিকলাল ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ। আরবি ইসতিকলাল শব্দের অর্থ স্বাধীনতা। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার কেন্দ্রস্থল মারদেকা স্কয়ারে। আয়তনে ইসতিকলাল মসজিদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর নবম বৃহৎ মসজিদ। এতে একসঙ্গে এক লাখ ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।</p> <p>২২ একর ভূমির ওপর স্থাপিত ইসতিকলাল মসজিদে মূল প্রার্থনাকক্ষ ছাড়াও রয়েছে পরিচালনা অফিস, বিশেষ অতিথিকক্ষ, মাদরাসা, সেমিনারকক্ষ, পার্কিংয়ের জায়গা, বিশাল বাগান ও ঝরনা। পাশে বয়ে চলা সিলিউং নদী মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। বিশাল আয়তন ও শৈল্পিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মসজিদ ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শনও বটে। কেননা অদূরেই জাকার্তা ক্যাথিড্রাল (ক্যাথলিকদের) এবং ইমানুয়েল চার্চ (প্রটেস্ট্যান্টদের) অবস্থিত। এ ছাড়া ‘টানেল অব ফ্রেন্ডশিপ’-এর জাকার্তা ক্যাথিড্রাল ও ইসতিকলাল মসজিদকে সংযুক্ত করা হয়েছে।</p> <p>১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সর্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া। স্বাধীনতার পর একটি জাতীয় মসজিদ নির্মাণের জনপ্রত্যাশা বাড়তে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার প্রথম ধর্মমন্ত্রী ওয়াহিদ হাশিম এবং ইন্দোনেশিয়া ইসলামিক ইউনিয়ন পার্টির নেতা আনোয়ার চক্রামিনোতো জাতীয় মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ তাঁদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তবে পরামর্শ দেন মসজিদটি যেন জাকার্তার কেন্দ্রস্থল ও জাকার্তা ক্যাথিড্রালের কাছাকাছি নির্মাণ করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। সার্বিক বিবেচনায় মসজিদ নির্মাণের জন্য মারদেকা স্কয়ারকে নির্বাচন করা হয়।</p> <p>ইসতিকলাল মসজিদের নকশা চেয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে বিজয়ী হন প্রকৌশলী ফ্রেইডিক সিলাবান। তিনি খ্রিস্টধর্মের প্রটেস্ট্যান্ট ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি এমনভাবে মসজিদের নকশা করেছিলেন যেন মূল প্রার্থনাকক্ষে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের নিশ্চয়তা মেলে।</p> <p>২৪ আগস্ট ১৯৬১ প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ ইসতিকলাল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দীর্ঘ ১৭ বছর এর নির্মাণকাজ চলে। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট সুহার্ত মসজিদটি উদ্বোধন করেন। মসজিদ নির্মাণে দামি মার্বেল পাথর ও স্টেইনলেস স্টিলের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। ২০১৯-২০ সালে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে মসজিদের আধুনিকায়ন করা হয়।</p> <p>মসজিদের অবকাঠামোর বিভিন্ন অংশ নানা তাৎপর্য বহন করে। মসজিদের সাতটি প্রবেশপথ ঊর্ধ্বাকাশের সাতটি স্তরকে ইঙ্গিত করে। আল্লাহর সাতটি গুণবাচক নামে তার নাম দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি দরজায় আল্লাহর ৯৯ নাম অঙ্কিত আছে। যেমন—মসজিদে প্রধান প্রবেশপথের নাম ফাত্তাহ এবং বিশেষ অতিথিদের প্রবেশপথের নাম সালাম। মূল প্রার্থনাকক্ষের ওপর স্থাপিত গম্বুজের আয়তন ৪৫ মিটার, যা ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভের বছর ১৯৪৫ সালকে ইঙ্গিত করে। গম্বুজটি ১২টি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত, যা ১২ রবিউল আউয়ালকে মনে করিয়ে দেয়।</p> <p>এই গম্বুজের ওপর স্থাপন করা হয়েছে তারাযুক্ত অর্ধচন্দ্র, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতীক হিসেবে প্রচলিত। দ্বিতীয় ও ছোট গম্বুজের ওপর স্থাপন করা হয়েছে স্টিলের তৈরি আল্লাহ নামের আরবি ক্যালিগ্রাফি। আট মিটার আয়তনের ছোট গম্বুজটি গ্যাগরিয়ান বর্ষপঞ্জির আগস্ট বোঝায়। এই মাসে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করেছিল। মসজিদের পাঁচতলা ভবন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে সুরা ত্বহার ১৪ নম্বর আয়াতের ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা হয়েছে।</p> <p>ইসতিকলাল মসজিদের দক্ষিণ কোনায় রয়েছে ৬৬.৬৬ মিটার উঁচু মিনার, যা কোরআনের ৬৬৬৬ আয়াতের (ভুল, কিন্তু বহুল প্রচলিত) দিকে ইঙ্গিত করে। মিনারের ওপরের অংশ ৩০ মিটার স্টিলের তৈরি। পবিত্র কোরআনের ৩০ পারার সঙ্গে সংগতি রেখে তা নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের সুউচ্চ একক মিনার যেন সুহান আল্লাহর একত্ববাদেরই সাক্ষ্য দেয়।</p> <p>ইন্দোনেশিয়া সফরে আসা বহু বিশ্বনেতা ইসতিকলাল মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। যাঁদের মধ্যে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের যুবরাজ তৃতীয় চার্লস, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ও চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা অন্যতম। গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ঐতিহাসিক এই মসজিদ পরিদর্শন করেন।</p> <p><em>তথ্যঋণ : ইন্দোনেশিয়া ডটট্রাভেল, বার্সেলো ডটকম ও উইকিপিডিয়া</em></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>