<p>কৃপণতা মানুষের একটি মন্দ স্বভাব। ইসলামে কৃপণতার কোনো স্থান নেই। কোরআন ও হাদিসে কৃপণতা পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর। তারা যাতে কৃপণতা করেছে, সত্বর কিয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার শুধু আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)</p> <p><strong>ব্যক্তি কখন কৃপণ বলে গণ্য হবে?</strong></p> <p>কোনো ব্যক্তিকে কখন কৃপণ বলে গণ্য করা যাবে তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে তাঁদের মতের সারকথা প্রায় একই। যেমন—</p> <p><strong>১. যে প্রয়োজনীয় খরচ করে না :</strong> যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে না তাকে কৃপণ বলা যাবে। এমনকি ব্যয়টি নফল হলেও। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, কৃপণ এমন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি এমন স্থানে খরচ করতে অস্বীকৃতি জানায়, যেখানে খরচ করা বাঞ্ছনীয়; সেটা শরিয়তের বিধানের নিরিখে হোক, কিংবা ব্যক্তিত্ব রক্ষার নিরিখে হোক। এর পরিমাপ নির্দিষ্ট করা সম্ভবপর নয়। (ইহইয়াউ উলুমিদদ্বিন : ৩/২৬০)</p> <p><strong>২. যে জাকাত দেয় না : </strong>ফরজ হওয়ার পর যে ব্যক্তি জাকাত দেয় না সে কৃপণ। আল্লামা ইবনুল মুফলিহ (রহ.) বলেন, জাকাত না দেওয়া কৃপণতা। যে ব্যক্তি জাকাত আদায় করল সে কৃপণতার দোষ থেকে মুক্তি পেল।</p> <p><strong>৩. যে ফরজ ব্যয় করে না :</strong> আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, সামর্থ্য অনুসারে স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম মা-বাবার ব্যয় নির্বাহ করা আবশ্যক। ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক এমন ব্যক্তির ভরণ-পোষণ না দেওয়া কৃপণতা। (আল আদাবুশ শারইয়্যা : ৩/৩০৩)</p> <p><strong>হক আদায়কারী কৃপণ নয়</strong></p> <p>যে ব্যক্তি আল্লাহর হক ও বান্দার হক আদায় করে তাকে কৃপণ বলা যাবে না। আল্লাহর হক হলো জাকাত, ফিতরা ও নফল দান। আর বান্দার হক হলো ভরণ-পোষণ, আপ্যায়ন ও আত্মীয়তা রক্ষা করা। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, কৃপণ হচ্ছে যে ব্যক্তি তার ওপর অর্পিত ফরজ ব্যয় নির্বাহে অস্বীকৃতি জানায়। সুতরাং কেউ যদি তার ওপরে যা কিছু খরচ করা ফরজ সেগুলো আদায় করে তাহলে তাকে কৃপণ বলা যাবে না, বরং কৃপণ হলো যে ব্যক্তির দায়িত্বে যা দেওয়া ও খরচ করার দায়িত্ব সেটা করতে অস্বীকৃতি জানায়। (জালাউল আফহাম : পৃষ্ঠা-৩৮৫; তাফসিরে কুরতুবি : ৫/১৯৩)</p> <p><strong>স্ত্রী-পরিবারের হক কতটুকু?</strong></p> <p>ইসলামী আইন গবেষকরা বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ব্যয় করা পুরুষের জন্য ফরজ। ফরজের সীমার মধ্যে থাকবে এমন বিষয়গুলো যা না হলে নয়। যেমন—খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও বাসস্থান। এতে আরো যুক্ত হবে এমন বিষয়, যা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য আবশ্যক। যেমন—শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয়। এসব আবশ্যকীয় ব্যয় স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী দেবে। পরিবারের সম্মান রক্ষা, সমাজে মুখ রক্ষার নামে স্বামীকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু দিতে বাধ্য করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বিত্তবান তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে। আর যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন সেটা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার ওপর চাপান না।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৭)</p> <p>আলোচ্য আয়াত থেকে বোঝা যায়, ব্যক্তি যদি সামর্থ্য অনুসারে ব্যয় না করে, তবে সে কৃপণ হিসেবে গণ্য হবে।</p> <p><strong>ভরণ-পোষণে কার্পণ্য নয়</strong></p> <p>সন্তান-স্ত্রী ও পরিবারের জন্য ব্যয় করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির জন্য কার্পণ্য করা উচিত নয়। কেননা আল্লাহ এর উত্তম প্রতিদান দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০০৬)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে শরিয়তের সীমা মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p> </p>