<p>তুর্কি সালতানাতের শেষ শাসক ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদ। তিনি খলিফা আবদুল মজিদ নামেও পরিচিত। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদ ২৯ মে ১৮৬৮ ইস্তাম্বুলের বেশিকতাশ প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুলতান আবদুল আজিজের পুত্র।</p> <p>৪ জুলাই ১৯১৮ সালে সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দ্বিতীয় আবদুল মজিদকে তাঁর উত্তরসূরি ঘোষণা করা হয়। সুলতান মুহাম্মদ ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই। ১ নভেম্বর ১৯২২ সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং উসমানীয় সালতানাতের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। ১৯ নভেম্বর তুরস্কের জাতীয় সংসদ আবদুল মজিদকে খলিফা ঘোষণা করে। ২৪ নভেম্বর তিনি দ্বিতীয় আবদুল মজিদ নাম ধারণ করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ৩ মার্চ ১৯২৪ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং তুরস্ক থেকে সপরিবারে ফ্রান্সে নির্বাসিত হন।</p> <p>ফ্রান্সে নির্বাসিত সুলতানের আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন হায়দারাবাদের শেষ নিজাম আসাফ জাহ মির উসমান আলী খান। সেই সূত্রে সুলতানের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে হায়দারাবাদের এই শাসক পরিবারের। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদের একমাত্র কন্যা ছিলেন শাহজাদি দুররু শেহভার। আসাফ জাহ নিজের বড় ছেলে আজম জাহ মির হেমায়েত আলী খানের সঙ্গে শাহজাদি দুররু শেহভারের বিয়ের প্রস্তাব দেন। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ১২ নভেম্বর ১৯৩১ প্যারিসে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁকে দুরদানা বেগম প্রিন্সেস অব বারবার উপাধি দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের শেষভাগে তাঁরা ভারতে আসেন। শাহজাদি শেহভার স্বামীর সঙ্গে ভারতেই বসবাস শুরু করেন। </p> <p>উসমানীয় সালতানাত, যা তার শেষ সময়ে খেলাফত নাম ধারণ করেছিল, তা রক্ষার জন্য ভারতে খেলাফত আন্দোলন শুরু হয়েছিল; যা একই সঙ্গে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন। ফলে পূর্ব থেকেই ভারতীয় মুসলমানদের প্রতি হৃদয়ের টান অনুভব করতেন সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদ। হায়দারাবাদের নিজাম পরিবারে মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর এই ভালোবাসা আরো প্রবল হয়। সম্ভবত এ কারণেই তিনি মেয়ে দুররু শেহভারের কাছে মৃত্যুর পর ভারতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পিতার ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি ভারতে খুলদাবাদে একটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন, যেন মৃত্যুর পর পিতাকে এখানে সমাহিত করা যায়। বলা হয়ে থাকে, এটি ভারতের মাটিতে তুর্কি স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত একমাত্র স্থাপনা।</p> <p>১৯৪০ সালে সমাধিসৌধটি নির্মিত হয়। সমাধিসৌধের পাশাপাশি একটি মসজিদ, একটি খানকা ও বাগান নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫ একর ভূমি। তবে পুরো সমাধি ক্ষেত্রের কাজ শেষ হওয়ার আগেই সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদের মৃত্যু হয় এবং তাঁকে অন্যত্র দাফন করা হয়। ফলে সমাধি ক্ষেত্রের অবশিষ্ট কাজগুলো অপূর্ণই থেকে যায়। ভারত হায়দারাবাদ দখল করার পর দুর্বৃত্তরা সমাধির মূল্যবান দরজা-জানালা ও পাথরগুলো খুলে নিয়ে যায়।</p> <p>ঐতিহাসিক এই সমাধিসৌধ বর্তমান ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে অবস্থিত, যা ভারতের বিখ্যাত মুসলিম নগরী খুলদাবাদ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটি সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়। সমাধিস্থলে পৌঁছতে একটি পাকা সড়ক এবং সড়কে দুটি সেতুও নির্মিত হয়। পাহাড়ের গাজুড়ে আছে বিস্তৃত সবুজ বন। অপরূপ এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও পিনপতন নীরবতার জন্য স্থানটি বেছে নেওয়া হয়। তুর্কি সুলতানের প্রতি সম্মান জানাতে সমাধি নির্মাণ করা হয় তুর্কি স্থাপত্যরীতিতে। তবে অভ্যন্তরীণ নকশায় প্রয়োগ করা হয় স্থানীয় রীতি-নীতি। সমাধিসৌধটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়, যেন প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের কোনো অভাব না হয় এবং প্রাকৃতিক উপায়ে তা সব সময় শীতল থাকে।</p> <p>নির্মাণের সময় সমাধিসৌধের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর ছিল। তবে বর্তমানে শুধু মূল স্থাপনাই কোনো রকম টিকে আছে। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে সমাধিসৌধে যাওয়ার রাস্তা, সেতু ও সৌধের সীমানাপ্রাচীর। মূল স্থাপনার দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তার খসে পড়ছে অভ্যন্তর ভাগের।</p> <p>সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদ ১৯৪৪ সালে প্যারিসে ইন্তেকাল করেন। ব্রিটিশ শাসকদের অনিচ্ছাসহ নানা জটিলতায় তাঁকে ভারতে এনে দাফন করা যায়নি। তাঁকে দাফন করা হয় সৌদি আরবে। মসজিদে নববীসংলগ্ন ঐতিহাসিক কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে শুয়ে আছেন মুসলিম বিশ্বের শেষ খলিফা সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদ। আল্লাহ তাঁর কবরকে শীতল করুন। আমিন।</p> <p><em>সূত্র : মিডল ইস্ট আই, নিউজ এইটটিন উর্দু, ইউটিউব চ্যানেল আওরঙ্গবাদি মুসাফির ও উইকিপিডিয়া</em><br />  </p>