অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। শামছুল আলম ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১২ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রভোস্ট ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ৩১টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে ৬ জন পিএইচডি এবং ৭ জন এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
কালের কণ্ঠ : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেমন অবস্থায় পেয়েছিলেন? বর্তমান অবস্থা কেমন?
ড. মো. শামছুল আলম : বিগত সরকারের শাসনামলে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কেও ধ্বংস করা হয়েছিল। সেখান থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে টেনে তোলার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার কাজ করছি।
কালের কণ্ঠ : ইআবি এখনো ভাড়া বাসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কত দূর?
ড. মো. শামছুল আলম : ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঘাটারচর ও মধ্যেরচর এলাকায় ১৭ একর জমিতে নির্মিত হবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। পুরো প্রজেক্টের কাজটি বাস্তবায়ন করছে সরকার। সেখানে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর পুরো ১৭ একর জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। জমির বাউন্ডারির কাজ হয়েছে প্রায় ৮০ ভাগ।
কালের কণ্ঠ : স্থায়ী ক্যাম্পাসে কী কী থাকবে?
ড. মো. শামছুল আলম : একটি বড় আকারের ১০ তলা ভবন হবে। যেখানে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি বড় মসজিদ হবে। আর তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হবে আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট। সৌদি আরবের অর্থায়নে এই ইনস্টিটিউট নির্মিত হবে।
কালের কণ্ঠ : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকাংশে পরীক্ষাকেন্দ্রিক...
ড. মো. শামছুল আলম : আমরা এ বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছি। বৃহৎ পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা আগামীতে অনেকগুলো জার্নাল বের করব। ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রবন্ধ জমা হয়েছে। দেশ-বিদেশের ভালো মানের অনেক গবেষক আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
কালের কণ্ঠ : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এমফিল-পিএইচডি প্রগ্রাম চালু করবে?
ড. মো. শামছুল আলম : আমরা এমফিল-পিএইচডি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য নীতিমালাও চূড়ান্ত হয়েছে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে সার্কুলার দেওয়া হবে। আশা করি, ভালো সাড়া পাব।
কালের কণ্ঠ : ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদরাসাগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে...
ড. মো. শামছুল আলম : আমরা মাদরাসাগুলোকে কোয়ালিটি বাড়ানোর কাজে উদ্বুদ্ধ করছি। আগামীতে শুধু এই লক্ষ্যে সভা-সেমিনার করা হবে। এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য চাই। আসলে কেন এমন হচ্ছে। এ কাজে বিশেষজ্ঞদের নিয়োজিত করা হবে। এ ছাড়া বিগত ১৫ বছর চাকরির ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে। এটাও শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। শিক্ষার্থীদেরে মধ্যে এই আস্থা তৈরির চেষ্টা করব যে তারা যোগ্য ও দক্ষ হলে চাকরির বাজারে আর বৈষম্যের শিকার হবে না। আশা করি, আগামীতে মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়গুলো সুষ্পষ্ট হবে।
কালের কণ্ঠ : মাদরাসাগুলোতে নিয়মিত ক্লাস হয় না, পরীক্ষায় অনিয়মের কথাও শোনা যায়।
ড. মো. শামছুল আলম : আমরা ধীরে ধীরে একটি সিস্টেম গড়ে তুলব মাদরাসাগুলোর জন্য। সেখানে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্টসংখ্যক ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হবে। পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধে আমরা ইতিমধ্যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে কেন্দ্র বাতিলের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
কালের কণ্ঠ : মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রফেশনাল কোর্স করানোর উদ্যোগ আছে কি?
ড. মো. শামছুল আলম : আগামীতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন ভাষাসহ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধাও রাখা হবে।
কালের কণ্ঠ : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চ্যালেঞ্জ কী?
ড. মো. শামছুল আলম : দেখুন, আমরা দেড় হাজার মাদরাসা নিয়ে কাজ করি। এই বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে কাজগুলো সমন্বয় করতে যতসংখ্যক জনবল থাকা দরকার, তা আমাদের নেই। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে কাজগুলো পরিচালনা করা অনেকটাই কঠিন। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমন্বিতভাবে কাজ করার। একই সঙ্গে জনবল নিয়োগের জন্যও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
কালের কণ্ঠ : আপনার মেয়াদের শেষে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে কোথায় দেখতে চান?
ড. মো. শামছুল আলম : দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত, বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্ন। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সবার সহযোগিতা নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ।
কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. মো. শামছুল আলম : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালের কণ্ঠের জন্য শুভ কামনা।