<p>কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের দুই বংশের আধিত্য বিস্তারে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরো ৩০ জন আহত হয়েছে।</p> <p>নিহত মো. ইকবাল মিয়া (৩৫) ওই গ্রামের খালপাড় এলাকার ধন মিয়ার ছেলে। বুকে টেঁটা বিদ্ধ অবস্থায় বিকেল ৫টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ৷ </p> <p>শাফি ব্যাপারী (৬৫), হোসাইন (২০), ইয়াছিন (২৫), রাকিব (৩২) শাহ আলম (৩০) তোফাজ্জল (৩৫), হেলেনা বেগম (৩৫) ও লাদেন (২০)। হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লাদেন, হেলেনা বেগম, শাহ আলম ও শাফি ব্যাপারীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ডা. ফারিয়া নাজমুন প্রভা।<br />  <br /> জানা যায়, ৫৬ বছর ধরে চলছে দুই বংশের দ্বন্দ্ব। বংশ দুটি হলো উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যানের সরকারবাড়ি ও সাবেক চেয়ারম্যানের কর্তাবাড়ি। সরকারবাড়ি পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ। আরেক পক্ষ কর্তাবাড়ির নেতৃত্ব দেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন৷ </p> <p>দুই বংশের দ্বন্দ্বে ইকবাল মিয়াসহ এ পযর্ন্ত ১৪ জন খুন হয়েছেন। চলতি বছর ১৬ জুন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তাবাড়ির নাদিম গুরুতর আহত হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৬ আগস্ট ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সাদেক পুরের মেন্দিপুর পূর্বপাড়া এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ৭ আগস্ট একই ঘটনায় সংঘর্ষে টেঁটার আঘাতে জহিরুল্লাহ নামের একজন নিহত হন।<br />  <br /> এদিকে নাদিম হত্যা ঘটনায় সরকারবাড়ির চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ, তার ভাই, দুই ছেলেসহ ৮৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে কর্তাবাড়ির পক্ষ। পরে সরকারবাড়ির ৬৯ জন কিশোরগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান বিচারক।<br />  <br /> ১৩ আগস্ট সরকারবাড়ির লোকজন জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরতেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। <br /> কিছুদিন ধরে দুই পক্ষে মধ্যে চলছে উত্তেজনা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকায় গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। </p> <p>হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সরকারবাড়ির পক্ষে হাজী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে কর্তাবাড়ির লোকজন আমাদের বাড়ির লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কর্তাবাড়ির লোকজনের টেঁটার আঘাতে আমাদের বাড়ির ইকবাল নিহত হয়েছেন।’</p> <p>কর্তাবাড়ি পক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পূর্বশত্রুতা চলছে বহু বছর ধরে। আমি অতিষ্ঠ হয়ে ভৈরব শহরে বসবাস করছি। আজকে মারামারি হচ্ছে শুনেছি। তবে হত্যার বিষয়ে কিছুই জানি না।’<br />    <br /> ভৈরব থানার (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম সন্ধ্যা ৮টায় জানান, মৌটুপি গ্রামের মানুষ বংশপরায়ণভাবে শত্রুতা, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুগ যুগ ধরে ঝগড়া সংঘর্ষ করছে। পুলিশও তাদের দমন করতে পারে না। আজকে দুই বংশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>