<p>কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে আরো এক জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। একই সঙ্গে স্থায়ী করা হচ্ছে বর্তমানে চলাচলরত বিশেষ ট্রেন। </p> <p>বিশেষ ট্রেন স্থায়ী করা এবং ট্রেন বাড়ানোর প্রস্তাব রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। এই প্রস্তাবে দুই জোড়া ট্রেনের নতুন নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সূত্র দাবি করছে, কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন চলাচল খুব শিগগির শুরু হচ্ছে না।</p> <p>রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। শুরুতে ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন যোগ করা হয়নি। </p> <p>ওই ঘটনায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছিল। চলতি বছর ঈদুল ফিতরের সময় ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। কিন্তু একপর্যায়ে ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপের মুখে সে অবস্থান থেকে সরে আসে রেলওয়ে। ঈদুল আজহার সময় ১২ জুন থেকে আবার চালু করা হয় বিশেষ ট্রেন, যা এখনও চলছে।</p> <p>সূত্র মতে, ওই বিশেষ ট্রেন স্থায়ী না করার কারণে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তাই ট্রেনটি স্থায়ী বা নিয়মিত করার দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। অবশেষে বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।</p> <p>রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনটি স্থায়ী করার অনুরোধ জানিয়ে ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। </p> <p>ওই চিঠিতে বলা হয়, যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ট্রেন স্থায়ীভাবে পরিচালনার জন্য কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকার সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই ট্রেনের পাশাপাশি আরো এক জোড়া ট্রেন যোগ করে এখন দুই জোড়া ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।</p> <p>রেলওয়ে সূত্র মতে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত বর্তমান বিশেষ ট্রেনের নাম ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ এবং নতুন ট্রেনের নাম ‘প্রবাল এক্সপ্রেস’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ৭৪৩টি আসন থাকবে। ১৬টি কোচ নিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল করবে।</p> <p>রেলওয়ের নতুন প্রস্তাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে বিশেষ ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছেড়ে আসে। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়।</p> <p>প্রস্তাবিত দুই জোড়া ট্রেনের সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম ট্রেন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ছাড়বে সকাল সাড়ে ৬টায়। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ১০টায়। ওই ট্রেন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার স্টেশন ছেড়ে যাবে। এটি চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বেলা সোয়া ২টায়।</p> <p>চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বেলা পৌনে ৩টায় আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। ওই ট্রেন কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় আবার ছাড়বে। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১০টায়।</p> <p>এই দুই জোড়া ট্রেন যাত্রাপথে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য চট্টগ্রামের ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী ও সাতকানিয়া এবং কক্সবাজারের চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামবে।</p> <p>রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মতে, কক্সবাজারে নতুন রেলপথ চালু হওয়ার পর এটি নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দেশের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেনে করে যাওয়ার জন্য টিকিটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। আর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। এ জন্য এই রুটে আরো বেশি ট্রেনের চাহিদা রয়েছে।</p> <p>সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের পহেলা ডিসেম্বর ট্রেন চালুর পর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে ১০ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৩ জন। রেলের আয় হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৭২ কোটি টাকা আসে তিনটি নিয়মিত ট্রেন থেকে এবং বাকি টাকা বিশেষ ট্রেন থেকে। এর মধ্যে কক্সবাজার স্পেশাল ৯ ও ১০ ট্রেন নামে পরিচিত এই ট্রেন থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ টাকা। যাত্রী চড়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৬৬২ জন।</p> <p>বিশেষ ট্রেন স্থায়ী করা ও নতুন ট্রেন বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, কক্সবাজার রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু ইঞ্জিন ও কোচ সংকটের কারণে নতুন ট্রেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। </p> <p>তার মতে, এখন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে বিশেষ ট্রেন চলছে, তা দিয়ে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদন হতে পারে। ট্রেন বাড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি। </p>