<p style="text-align:justify">কুমিল্লার লালমাইয়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। গত চার মাসে এই উপজেলায় কমপক্ষে ৮টি ডাকাতি-ছিনতাইসহ অর্ধশতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসবের সিংহভাগই হয়েছে প্রবাসীদের বাড়িতে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সেখানকার প্রবাসী পরিবারগুলোতে। </p> <p style="text-align:justify">ভুক্তভোগী পরিবার, প্রবাসী ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের নুরপুরের সীমান্তবর্তী আলোকদিয়া গ্রামের মৃত সামছুল হকের ছেলে ইতালি প্রবাসী আজিজুল হক খোকন ও ফ্রান্স প্রবাসী জহিরুল হক রিপনের বাড়িতে সোমবার দিবাগত (২৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। ডাকাতরা প্রবাসীর ভগ্নীপতিকে বেঁধে ও পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘরের আলমারিতে থাকা নগদ এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন লুট করে। </p> <p style="text-align:justify">গত ৭ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের দত্তপুর পশ্চিমপাড়ার হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে সৌদি প্রবাসী মিনহাজ উদ্দিন সবুজ ও সালমান জাহান সজিবের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা ঘরের আলমারি ভেঙ্গে নগদ তিন লক্ষ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে এবং প্রবাসীদের পিতা হাবিবুর রহমানকে (৬০) কুপিয়ে জখম করে। ঘটনার পর থেকে তিনি ঢাকাস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন।  </p> <p style="text-align:justify">এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে পেরুল উত্তর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের প্রবাসী শাহজালালের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা প্রবাসীর পিতা আমিন হোসেনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ডাকাতরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনার একমাস পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। একই রাতে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী কবির হোসেনের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। </p> <p style="text-align:justify">গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বেসরকারি চাকরিজীবী কমল সিংহের বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতরা ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।   </p> <p style="text-align:justify">এছাড়াও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁচিকাটা ও কুমিল্লা-বাঙ্গড্ডা সড়কের কলমিয়ায় তিনটি ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে দুই প্রবাসীর বাড়িতে। তবে এই দুই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। </p> <p style="text-align:justify">আলোকদিয়ায় ডাকাতির শিকার প্রবাসীর ভগ্নীপতি কুমিল্লার রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা মাকসুদুর রহমান মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার বৃদ্ধা শাশুড়ি বাড়িতে একা থাকে। এ কারণে আমি পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকি। সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে কিছু লোক বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দেয়। পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলে— আমরা পুলিশ, ঘরে আসামী আছে, দরজা খুলুন। দরজা না খুলতে চাইলে তারা ভবনের কলাপসিবল গেইটের তালা ও ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ৪-৫ জন ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মুখে কালো মুখোশ ছিল। চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাদের হাতে ছেনি, রড, ছুরি ও জয়েন্ট পাইপ ছিল। ঘরে প্রবেশ করেই আমাকে ছুরিকাঘাত করে। তারপর আমাকে বেঁধে রেখে বাকি সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তিনটি স্টিলের আলমারি ও দুইটি কাঠের আলমারি ভেঙে ১২ ভরি স্বর্ণ, নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও আমার শাশুড়ির একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। </p> <p style="text-align:justify">সৌদি প্রবাসী মো: কামাল হোসেন বলেন, আমরা প্রবাসীরা বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্থ আয় করে দেশে পাঠাই। অথচ আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা নেই। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন প্রবাসীর বাড়িতে চুরি-ডাকাতির খবর পাচ্ছি। অতিদ্রুত চুরি-ডাকাতি বন্ধে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। </p> <p style="text-align:justify">লালমাই থানার সেকেন্ড অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত ৪ মাসে থানায় একটি ডাকাতির চেষ্টা ও দুইটি ডাকাতির মামলা হয়েছে। জগতপুরের প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় এই পর্যন্ত ৮ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সড়কে ডাকাতির চেষ্টাকালে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দত্তপুরের প্রবাসীর বাড়ির ডাকাতির ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর আলোকদিয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে আমরা ওই অঞ্চলে পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করছি।  </p> <p style="text-align:justify">লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, চুরি-ডাকাতি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে এটা সত্য। ডাকাতরা প্রবাসী ও বিত্তশালীদের টার্গেট করেই চুরি ডাকাতি করছে। আমরাও রাতে টহল বাড়িয়েছি। যেখানেই চুরি ডাকাতির খবর পাচ্ছি সেখানেই পুলিশ যাচ্ছে।</p>