<p style="text-align:justify">কাঁধে বাঁশ আর চোখ বাঁধা মহিষ একটি যন্ত্র নিয়ে চারদিকে ঘুরছে। আর তাতে আখ পিষে বের হচ্ছে রস। সেই রস আগুনের তাপে হচ্ছে বিশেষ গুড়, যা লালি হিসেবে পরিচিত। একসঙ্গে ১৫-২০টি মহিষকে এ কাজে লাগানো হয়। মহিষের এ শ্রমে তৈরি হবে কোটি টাকার লালি। মূলত শীতের মৌসুমে এ লালি উৎপাদন করা হয়। এসময় পিঠাপুলি খেতে লালির কদর বেশ। দুধে মিশেয়েও খাওয়া যায় এই লালি।</p> <p style="text-align:justify">ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে পড়েছে লালি তৈরির ধুম। গ্রামটি ধীরে ধীরে লালির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। গ্রামে মোট আটটি ঘানিতে লালি তৈরি হয়। তবে, আখ চাষ কমে যাওয়ায় লালি তৈরির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।</p> <p style="text-align:justify">কৃষি অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ২০ থেকে ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়। আর এসব জমিতে দুই হাজার মেট্রিক টনের বেশি আখ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব আখের বেশিরভাগ লালি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ১০০ মেট্রিক টন লালি বিক্রি করা যাবে।</p> <p style="text-align:justify">জেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর গ্রাম। বিষ্ণুপুর বাজার হয়ে ভারত সীমান্তঘেঁষা কালাছড়া গ্রামে যাওয়ার সড়কের পাশেই দেখা মিলে মহিষের ঘানিতে লালি তৈরির কর্মযজ্ঞ। সবগুলো ঘানিই সড়কের পাশে।</p> <p style="text-align:justify">সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন-চারজন মিলে লালি তৈরি করছেন, কেউবা ঘানি টানার কাজ করছেন। মহিষ যেন তার কথামতো ঘানি টানার কাজ করছে। কেউ ব্যস্ত আখ প্রস্তুত করতে। কেউবা ব্যস্ত আগুনে আখের রস জ্বাল দিতে। লালি তৈরিতে খড়কুটো হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রস বের করে ফেলে রাখা আঁখের উচ্ছিষ্ট।</p> <p style="text-align:justify">লালি তৈরির শুরু থেকে শেষ নাগাদ সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এক কেজি লালির দাম পড়ে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া আঁখের রস বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি ধরে। ভোর থেকে শুরু হয় এ কর্মযজ্ঞ। দেখা মিলে বেশ কয়েকজন ক্রেতারও। গ্রামে ঢোকার পর প্রথম ঘানির কাছে ভোর থেকেই কয়েকজন বসে আছেন লালি নেওয়ার জন্য। মূলত লালি তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে তাদের একটু আগেভাগে আসা।</p> <p style="text-align:justify">কথা হয় লালি তৈরিতে ব্যস্ত মো. শাহনেওয়াজের সঙ্গে। তিনি জানালেন, চারজন মিলে পুঁজি দিয়ে তারা ব্যবসা করেছে তারা। শীতের তিন-চার মাস তারা লালি তৈরি করেন। আগে থেকেই আঁখের ক্ষেত তারা কিনে নেন। এছাড়া একাধিক মহিষ কিনতে তাদের পুঁজি লাগে। দুর দূরান্ত থেকে লোকজন এসে এখান থেকে লালি নিয়ে যান। কেউ ইচ্ছা করলে আখের রসও নিতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার ভিটি দাউদপুর গ্রামের মো. ইয়াছিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এখানে ভেজাল মুক্ত লালি বিক্রি হয় বলে নিতে এসেছেন। পাঁচ-ছয় কেজি লালি তিনি নিবেন। কীভাবে লালি তৈরি হয় দেখতে ভোরে চলে এসেছি।’</p> <p style="text-align:justify">মো. হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমারও আখের ক্ষেত ছিল। তখন থেকেই এখানে লালি তৈরি হওয়ার বিষয়টি জানি। শীতের সময় লালি দিয়ে পিঠা খেতে খুব স্বাদ লাগে। তাই এখনা থেকে সব সময়ই লালি নিতে আসি।’ </p> <p style="text-align:justify">বিষ্ণুপুর গ্রামের বৃদ্ধ মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বহু বছর ধরেই এখানে আঁখের রস থেকে লালি তৈরি হয়। এখন ঘানির সংখ্যা বেড়েছে। অনেক দূর থেকে লোকজন আসে লালি নিতে।’</p> <p style="text-align:justify">বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল ওদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারও শীত মৌসুমে কোটি টাকার লালি বিক্রি হবে বলে আশা করা হয়। এখন পুরোদমে লালি তৈরি হচ্ছে।’<br />  </p>