দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শাক-সবজি সংরক্ষণে কোনো হিমাগার নেই। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। কষ্ট করে উৎপাদন করা সবজি তোলার সঙ্গে সঙ্গে নামমাত্র দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। না হলে ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে।
বর্তমানে টমেটো বাজারজাতকরণের শেষ সময় চলছে। বাজারে পাইকারি মূল্য প্রকার ভেদে প্রতিকেজি ৫-৭ টাকা। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ টাকায়। মজুরি ও পরিবহন খরচ না উঠায় চাষিরা খেত থেকে টমেটো তুলতে চাইছেন না।
ফলে খেতেই টমেটো নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মাসখানেক পরই সেই টমেটো ৫০-৬০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হবে।
আরো পড়ুন
যৌতুক না পেয়ে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন শাক-সবজি এক হাজার ৭৫০ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি ৮৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৮ হেক্টর জমিতে টমেটো, ১১০ হেক্টরে মরিচ, ৩৮ হেক্টরে শসা এবং ২০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষাবাদ হয়েছে।
তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে কেউ কেউ বারো মাসও টমেটো চাষাবাদ করছেন।
দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের সবজি চাষি পরীক্ষিত চন্দ্র রায় ও মনোরঞ্জন রায় বলেন, স্থানীয় বেপারীরা ফুলবাড়ীর পাইকারি সবজি বাজার থেকে স্বল্প দামে কৃষকের শস্য কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান না হলেও লাভবান হচ্ছে ওইসব সবজি বেপারীরা। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে এখানে শুধু শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি সংরক্ষণ করে লাভবান হতেন।
উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের বুজরুক সমশেরনগর গ্রামের শাক-সবজি চাষি রুবেল বাবু ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে ফসলের মাঠে কৃষকের অনেক টমেটো রয়ে গেছে।
বাজারে দাম কমে গেছে। ক্ষেত থেকে টমেটো তোলার মজুরি ও পরিবহন ব্যয় না উঠার কারণে মাঠেই কষ্টের ফসল পচে নষ্ট হচ্ছে।
আরো পড়ুন
ডিসিদের প্রতি ১২ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার
ফুলবাড়ী সবজি বাজারের আড়তদার অজয় দত্ত ও মিহির দত্ত বলেন, এক মাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে কেজি ৭-৮ টাকায়। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি হচ্ছে ৫-৭ টাকায়। বাজারে টমেটোর দাম এতটাই কমে গেছে যার কারণে কৃষকরা ক্ষেতের টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছিলেন তারা লাভবান হয়েছেন।
উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের আব্দুল বাতেন ও মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আগে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা টমেটো নিতে খেতে এলেও এখন কোনো পাইকার আসছেন না। আগের মতো টমেটোর চাহিদা এখনও নেই। টমেটো উত্তোলন, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৫-৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিক্রির চেয়ে খরচ বেশি। তাই আর খেতে থাকা টমেটো তুলছে না, এতে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছের টমেটো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, এটি একটি পচনশীল ফসল, তা ছাড়া এখন অন্যান্য সবজিও বাজারে থাকা এবং এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা দাম পাচ্ছে না। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছেন তারা আশানুরূপ লাভ করেছেন। তবে ফুলবাড়ীতে একটি শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন করা গেলে শুধু ফুলবাড়ী নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য উপজেলার কৃষকরাও এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন
ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল এসআই কবীরের, ফিরলেন লাশ হয়ে