ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় গ্রিন ক্লাস্টারের ২১ নম্বর (সংশোধিত) রুটে পরীক্ষামূলকভাবে এসি বাস পরিষেবা চালু করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন আসাদ গেট এলাকায় এ বাসের উদ্বোধন করা হয়।
৩১ কিলোমিটার সড়কে চলবে এই বাস। রুটটি গাবতলী থেকে শুরু হয়ে শ্যামলী, কলাবাগান, সাইন্স ল্যাব, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, হানিফ ফ্লাইওভার, কাজলা, সাইন বোর্ড হয়ে নারায়নগঞ্জের চাষাড়া পর্যন্ত যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টরা জানান, গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও আরো উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রতিটি রুটে একক কম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা ব্যবস্থা চালু করা। এর ফলে যাত্রীরা একটি সুসংহত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা পাবেন।
এ ছাড়া, ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করা এবং পর্যায়ক্রমে বাসে র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
এর মাধ্যমে যাত্রীরা সহজেই টিকিট কিনতে পারবেন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা বন্ধ হবে। বৈদ্যুতিক বাস প্রবর্তন করা। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানো এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়বে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের জন্য প্রবেশগম্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) উদ্যোগে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বাসের উদ্বোধন করেন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করেন ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘গণপরিবহন একটি শহরের মেরুদণ্ড। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিগত কয়েক বছরে ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। যানজট, পুরনো বাস, অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই পরিস্থিতিতে আমরা ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। ২১ নম্বর (সংশোধিত) রুটে এসি বাস পরিষেবা চালু করা আমাদের সেই লক্ষ্যেরই একটি অংশ।’
তিনি বলেন, ‘এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো অত্যাধুনিক, আরামদায়ক এবং যাত্রীবান্ধব হবে। যাত্রীদের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আশা করি, এই পরিষেবা যাত্রীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হবে এবং তারা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার জরিপে দেখা যায়, যেখানে ঢাকার বাস সেক্টর ২০১৪-১৫ সালে ২৩% যাত্রী পরিবহন করতো, সেখানে তা ২০২৩ সাথে মাত্র ৯% এ নেমে এসেছে। আবার মটরসাইকেল ট্রিপ ৩% থেকে তিনগুণ বেড়ে ৯% হয়েছে ও ব্যক্তিগত গাড়ি যথাক্রমে ৪.২% থেকে ৫.৬% হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে রিক্সার যাত্রীও বেড়েছে।’
সিনিয়র সচিব আরো বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি প্রকৃত সেবা খাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। বর্তমানে যারা বাসচালক ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাস পরিচালনা ও উন্নত যাত্রী সেবা প্রদানের উপযোগী করে তুলতে হবে। এ ছাড়া এই সেক্টরে বেকার ও শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। সরকার পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে উন্নত যাত্রীসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৫০০টি বৈদ্যুতিক বাস নামাতে যাচ্ছে।’
ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে আমরা একটি আধুনিক ও টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকায় যেভাবে বাস সেবা পরিচালিত হচ্ছে, তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বাস মালিকগণ দৈনিক চুক্তিভিত্তিতে বাসচালক ও হেল্পারের কাছে বাস দিয়ে দিচ্ছে। এই বাসগুলো অধিক যাত্রী পাবার আশায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। রাস্তা আটকিয়ে রেখে যাত্রী উঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। বাসের প্রতিযোগিতার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং সড়ক দূর্ঘটনা ঘটছে। এই ব্যবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমরা একটি রুটে একক কম্পানি ব্যতিত ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিসে বাস অপারেশনের অনুমতি দেব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমন্বিত টিকেটিং ও রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের উদ্দেশ্যে ডিটিসিএ ক্লিয়ারিং হাউজ প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি মেট্রোরেলের ভাড়া কালেকশন ও শেয়ারিং এ কাজ করছে। এই ক্লিয়ারিং হাউজের মাধ্যমে আমরা সমন্বিতভাবে পুরো ঢাকার বাস সেক্টরের রেভিনিউ কালেকশন করব ও অপারেটরদের মধ্যে রেভিনিউ শেয়ার করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পুরো ঢাকার বাস সার্ভিসকে ধীরে ধীরে ঢাকা নগর পরিবহন সেবার আওতায় নিয়ে আসব। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ঢাকা মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি নতুন রূপ দিতে পারবে। আমাদের এই উদ্যোগ সফল হলে, যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে, যানজট কমবে এবং শহরের পরিবেশের উন্নতি হবে।’
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন, বিআরটিসি চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিআরটিএ ও বিআরটিসির চেয়ারম্যান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয় ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারী, যাত্রী কল্যাণ সমিতি, পরিবহন মালিক, শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি, যাত্রী, শিক্ষার্থী এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।