বাংলা চলচিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র রবিবার রাত ১০ টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়।
প্রবীর মিত্র বিয়ের সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। আজ সোমবার জোহরের নামাজের পর এফডিসিতে প্রথম জানাজা হবে।
এরপর চ্যানেল আইতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর পূর্বে রবিবার রাতে গোসল শেষে ফ্রিজার গাড়িতে প্রবীর মিত্রের লাশ ধানমন্ডির বাসায় রাখা হয়।
আরো পড়ুন
চিরচেনা এফডিসিতে নিথর দেহে প্রবীর মিত্র
এদিকে বর্ষীয়ান কিংবদন্তি এ অভিনেতার মৃত্যুতে তার সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চলচিত্র সংশ্লিষ্টরা তার মৃত্যুর পরপরই ফেসবুকের মাধ্যমে শোক জানিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন।
গণমাধ্যমেও অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন অনেক তারকা।
প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে শিল্পী সমিতির সভাপতি খলনায়ক মিশা সওদাগর এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আমাদের ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিজের একজন গুনী ব্যাক্তিকে হারালাম। তার মৃত্যুতে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা কখোনো পূরণ হবার নয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সৎ, নির্লোভ, নিরঅহংকারী ব্যাক্তি ছিলেন। আমি দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চাই আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন।
আরো পড়ুন
একসময় ইচ্ছা ছিল মডেল হবো : রোজা আহমেদ
চলচিত্র পরিচালক গাজী মাহবুব জানান, শোক জানাবার ভাষা আর নেই। অঞ্জনা আপার মৃত্যুর শোক না যেতেই দাদার মৃত্যুর সংবাদ। আমরা সিনেমার বরেণ্য একজন শক্তিশালী বর্ষীয়ান অভিনেতাকে হারালাম। প্রবীরদা ছোট বড় সকলকে আপনি সম্ভোধন করতেন। এতো উঁচু মানের একজন অভিনেতার সদা হাস্যময় বিনয়ী ব্যবহার ছিল সবার সাথে। প্রবীরদা ছিল অভিনয়ের একটি প্রতিষ্টান। প্রবীরদা একজন কালজয়ী অভিনেতা। চলচ্চিত্র শিল্পে উনার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার পর বাংলা সিনেমাকে গণমানুষের কাছে জনপ্রিয় করার বর্ণিল ইতিহাসে প্রবীরদাও অংশীদার। উনার শুন্যতা কোনভাবেই পূরণ হবার নয়। দাদার প্রয়ানে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
আরো পড়ুন
নীরবে-নিভৃতেই প্রস্থান প্রবীর মিত্রের, খোঁজ রাখেনি রুপালি সারথিরা
চিত্রনায়ক সুব্রত জানান, প্রবীর দা যখন আমাদের ভাবীকে বিয়ে করেন তখন তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন। তখন তার নাম রাখা হয়েছিলো হাসান ইমাম। তার সবকিছুর মধ্যেই সেই হাসান ইমাম নামটা আছে। কিন্তু সেটাতো আর আমাদেও দর্শকরা জনেনা তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হয়েছিলেন। শুধু অভিনয় করার জন্যই তিনি প্রবীর মিত্র নামটা রেখেছিলেন। সেটা শুধু নামেই রেখেছিলেন কিন্তু তিনি আপদমস্তক একজন মুসলমান হাসান ইমাম নামকে ধারন করে ওনি ইসলামের মধ্যে বিচরন করেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে প্রবীর মিত্রের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া চান।
চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি জানান, প্রবীর মিত্র মামা আর নেই ভাবতেই খুব কষ্ট হবে। গতকাল ওনার ছেলের সাথে কথা হয়েছিলো তাকে দেখতে যাবার ব্যাপারে। সে বলেছিলো বাবাকে নিয়ে বোর্ড মিটিং হবে আগামীকাল বিকেলে আসুন। কিন্তু তার সাথে আর শেষ দেখাটা হলোনা।
আরো পড়ুন
নিরাপত্তায় ঢেকে দেওয়া হচ্ছে সালমান খানের বাড়ি
শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী জানান, আসলে কিছু বলার ভাষা নেই আমরা মনে করেছিলাম ২০২৫ সালটা আমাদের চলচিত্রের সুন্দর একটি সাল হবে যেটাতে আমরা ঘুরে দাড়াতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছি আমরা। প্রথমে অঞ্জনা আপু পরবর্তীতে প্রবীর মিত্র দা তাদেরকে আমরা হারালাম। আমরা দিন দিন আমাদের অভিনয়ের শিক্ষকদের হারাচ্ছি। যেটা আমরা যারা ইয়াং জেনারেশন আছি কিংবা নতুন যারা আসছেন তাদের জন্য অনেক কষ্টের যে আমরা আমাদের শিক্ষক হারাচ্ছি। আমরা দুর্ভাগা যে আমরা সিনিয়রদের কাছ থেকে কিছুই শিখতে পারি নাই।
চিত্রনায়িকা রিয়ানা পারভীন পলি বলেন, অঞ্জনা আপার মৃত্যুর দিন কাটতে না কাটতেই প্রবীর দাদার মৃত্যু। কিছুতেই আমরা মেনে নিতে পারছিনা। আমরা একের পর এক অভিবাবককে হারাচ্ছি। আমি শিল্পী সমিতির কাছে দাবী করছি আমাদের যারা প্রবীন এবং অসুস্থ শিল্পীরা আছেন তাদের খোঁজ খবর নিয়ে যথাসাধ্য তাদের পাশে দাড়ানো হোক।
চিত্রনায়িকা সাবরিনা সুলতানা কেয়া বলেন, প্রবীর মিত্র দাদা খুবই ভালো এবং অমায়িক শান্ত ভদ্র মানুষ ছিলেন। সে বেশ কিছু ছবিতে আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সে আমাকে প্রচন্ড স্নেহ করতেন। তাকে হারিয়ে আমি একজন অভিবাবককে হারালাম। তিনি স্বর্গবাসী হোক ¯্রষ্টার কাছে এই দোয়া করছি।
অভিনেত্রী তানিন রহমান সুবহা বলেন, পরপর দুজন কিংবদন্তিকে হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। আমাদের চলচিত্র অভিবাবকহীন হয়ে পড়ছে। দোয়া করি আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দিয়ে জান্নাতবাসী করুন।
প্রবীর মিত্র ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। দাম্পত্য জীবনে প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র, তিন ছেলে মিঠুন মিত্র, সিফাত ইসলাম, সামিউল ইসলাম ও এক মেয়ে ফেরদৌস পারভীন । এর মধ্যে স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে এবং ছেলে সামিউল ২০১২ সালে প্রয়াত হয়েছেন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। ১৯৬৯ সালে নির্মিত ‘জলছবি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়।